রমজান মাস রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস। এ সময় শয়তানদের শৃঙ্খলিত করা হয় এবং আল্লাহ তাআলার রহমত ব্যাপকভাবে বর্ষিত হয়। অনেকের মধ্যে বিশ্বাস রয়েছে যে, রমজানে কবরের আজাব বন্ধ থাকে। কিন্তু এটি সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য ও সহিহ হাদিস কী বলে?
১. কবরের আজাব ও তার বাস্তবতা
কবরের আজাব একটি সত্য বিষয়, যা কুরআন ও সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেন—
“আমি তাদেরকে দুইবার শাস্তি দেব, এরপর তারা একটি বড় শাস্তির দিকে ফিরে যাবে।” (সুরা তাওবা: ১০১)
রাসুলুল্লাহ ﷺ কবরের আজাব সম্পর্কে বলেন—
“যদি তোমরা কবরের আজাব যা আমি শুনি, তা শুনতে তাহলে ভয়ে চিৎকার করতে।” (সহিহ মুসলিম, ২৮৬৭)
২. রমজানে শয়তানদের বন্দি হওয়ার হাদিস
রমজান মাসে শয়তানদের শৃঙ্খলিত করা হয়, এটি সম্পর্কে রাসুল ﷺ বলেন—
“রমজান মাস এলে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানদের শৃঙ্খলিত করা হয়।” (সহিহ বুখারি, ১৮৯৯; সহিহ মুসলিম, ১০৭৯)
কিছু আলেম মনে করেন, যেহেতু শয়তানদের শৃঙ্খলিত করা হয়, তাই রমজানে কবরের আজাব হালকা হতে পারে। তবে এটি সরাসরি প্রমাণিত নয় যে, আজাব পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
৩. রমজানে কবরের আজাব বন্ধ হওয়ার বিশ্বাসের উৎস
এ বিষয়ে কিছু দুর্বল ও বর্ণনাগত দলিল পাওয়া যায়, কিন্তু সহিহ হাদিস দ্বারা এটি নিশ্চিত নয়। তবে আল্লাহ তাআলার রহমতের দরজা এ মাসে ব্যাপকভাবে খোলা থাকে, ফলে অনেক বান্দার জন্য আজাব কমে যেতে পারে।
৪. নির্ভরযোগ্য মতামত কী বলছে?
প্রখ্যাত ইসলামি স্কলাররা বলেন—
কবরের আজাব রমজানে বন্ধ হয় বলে কোনো সহিহ হাদিস নেই।
আল্লাহ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করতে পারেন, তবে এটি একটি সর্বজনীন নিয়ম নয়।
রমজানে দোয়া ও নেক আমলের কারণে আল্লাহ কারো আজাব মাফ করতে পারেন।
৫. আমাদের করণীয়
যেহেতু রমজান রহমতের মাস, তাই আমাদের উচিত বেশি বেশি ইবাদত করা, গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা এবং মৃতদের জন্য দোয়া করা। রাসুল ﷺ কবরবাসীদের জন্য দোয়া শিখিয়েছেন—
“হে আল্লাহ! তাদেরকে ক্ষমা করুন, তাদের প্রতি দয়া করুন, তাদেরকে জান্নাত দান করুন এবং তাদের কবরে প্রশান্তি নাজিল করুন।” (সহিহ মুসলিম, ২২৪)
রমজানে কবরের আজাব বন্ধ হওয়ার ব্যাপারে কোনো সহিহ ও নির্ভরযোগ্য দলিল নেই। তবে এটি নিশ্চিত যে, রমজান রহমতের মাস এবং এ সময় দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই মৃতদের জন্য দোয়া করা এবং বেশি বেশি নেক আমল করাই আমাদের করণীয়।
thebgbd.com/NIT