কানাডার ক্ষমতাসীন দল লেবার পার্টির নেতৃত্বের প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়েছেন দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক প্রধান মার্ক কার্নি। স্থানীয় সময় রোববার (১০ মার্চ) ভোটের ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এতে তিনি দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর স্থলাভিষিক্ত হবেন। এক অস্থির সময়ে কানাডার দায়িত্ব নেবেন কার্নি। এমন এক সময় তিনি ক্ষমতাসীন দলের প্রধান হলেন, যখন দেশটি দীর্ঘদিনের মিত্র প্রতিবেশী যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধের মধ্যে আছে।
আগামী কয়েকদিনের মধ্যে ট্রুডো তার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন। কানাডার রাজনৈতিক ব্যবস্থায় হাউস অব কমন্সে যে দল সংখ্যাগরিষ্ঠ তিনিই দেশের প্রধানমন্ত্রী হন। বর্তমানে দেশের ক্ষমতায় রয়েছে লিবারেল পার্টি সে হিসেবে নতুন দলনেতা হিসেবে আপাতত প্রধানমন্ত্রী হয়ে দেশ চালাবেন মার্ক কার্নি। অর্থাৎ মার্ক কার্নি নির্বাচনের আগপর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন।
এক হিসেবে কানাডার প্রধানমন্ত্রীর আসনে কার্নির মেয়াদ বেশি দিনের নয়। শিগগিরই তাকে সাধারণ নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। অক্টোবর মাসের মধ্যে কানাডায় ভোট হওয়ার কথা। তবে প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেও নির্বাচন ডাকতে পারেন কার্নি। তিনি ভোটের আয়োজন না করলে বিরোধীরা তার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবও আনতে পারেন। কানাডার একাধিক জনমত সমীক্ষায় সাধারণ নির্বাচনে কনজাররভেটিভ পার্টিকেই এগিয়ে রাখা হচ্ছে। ফলে নির্বাচন হলে লিবারালদের ফেরার সম্ভাবনা কম। সে হিসেবে কার্নি হয়তো ‘কয়েকদিনের প্রধানমন্ত্রী’।
লিবারেল পার্টির নেতৃত্ব প্রতিযোগিতায় ১ লাখ ৫২ হাজার দলীয় সদস্য ভোট দিয়েছেন। এতে ৫৯ বছর বয়সী কার্নি পেয়েছেন ১ লাখ ৩১ হাজার ৬৭৪ ভোট পেয়েছেন। মোট ভোটের প্রায় ৮৫.৯ শতাংশ এটা। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড পেয়েছেন ১১ হাজার ১৩৪ ভোট, কারিনা গোল্ড পেয়েছেন ৪ হাজার ৭৮৫ ভোট এবং ফ্রাঙ্ক বেলিস পেয়েছেন ৪ হাজার ৩৮ ভোট। ফলে কয়দিন আগেও যাকে সম্ভাব্য লিবারেল প্রধান মনে করা হচ্ছিল তার প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ডকে সহজেই তিনি পরাজিত করতে পেরেছেন।
এর আগে চলতি বছরের গত ৬ জানুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে দলীয়প্রধানের পদ ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দেন জাস্টিন ট্রুডো। দীর্ঘ ৯ বছর ক্ষমতায় থাকার পর তিনি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দল নতুন নেতা নির্বাচন করার পর দলীয়প্রধান ও প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেবেন বলে জানান তিনি। কানাডায় খাদ্য ও বাসস্থানের মূল্যবৃদ্ধি, অভিবাসন বেড়ে যাওয়ায় ট্রুডোর ওপর পদত্যাগের চাপ দিতে থাকে বিরোধী কনজারভেটিভ পার্টির নেতারা। নিজ দলের মধ্যেও সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে তাকে। নানামুখী চাপের কারণে আগামী অক্টোবরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও জানুয়ারিতেই পদত্যাগের ঘোষণা দেন ট্রুডো।
যুক্তরাষ্ট্রে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য করার কথা জানান ট্রাম্প। এ ছাড়াও কানাডার পণ্যে ৩০% শুল্ক আরোপ করেছেন তিনি, যা গত সপ্তাহে কার্যকর হয়েছে। কানাডার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে ট্রাম্প মারাত্বক আঘাত হেনেছে বলে মনে করেন কানাডীয়রা। এতে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়েছেন উত্তর আমেরিকার দেশটির নাগরিকরা। তারা যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমন, এমনকি প্রতিবেশী দেশটির পণ্য কেনাও বন্ধ করে দিয়েছেন।
এমন পরিস্থিতিতে বহুদিন ধরে চলা কানাডা-যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। কানাডাবাসী বর্তমানে এমন কাউকে ক্ষমতায় দেখতে চান, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার পরিবর্তে ট্রাম্পকে মোকাবিলা করতে সক্ষম হবেন। তবে এসবের মধ্যেও জনমত জরিপে এগিয়ে রয়েছে লেবার পার্টি।
মার্ক কার্নি তার উদ্বোধনী বক্তব্যে কানাডাকে ‘শক্তিশালী’ বলে বর্ণনা করেন। তিনি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জঁ ক্রেতিয়েনের বক্তৃতার উল্লেখ করে বলেন, তিনি তার পরিবারকে উদারপন্থী লিবারেল হতে অনুপ্রাণিত করেছেন। কার্নি যোগ করেন তার বাবা ১৯৮০-এর দশকে আলবার্টায় লিবারেল প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে লড়াই করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি বলেন, ‘আপনি (ক্রেতিয়েন) বছরের পর বছর আমাকে আর্থিক দায়বদ্ধতা, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং আন্তর্জাতিক নেতৃত্বের ঐতিহ্যে অনুপ্রাণিত করেছেন।’ তিনি দাবি করেন, তার নতুন সরকার একটি শক্তিশালী অর্থনীতি গড়ে তোলার জন্য একটি নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করবে।
এদিকে ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের হুমকির বিষয়ে কার্নি বলেন, ‘আমরা তাকে (ট্রাম্প) সফল হতে দিতে পারি না এবং করবও না।’ তিনি আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র যতক্ষণ না মুক্ত ও ন্যায্য বাণিজ্যের বিশ্বাসযোগ্য ও নির্ভরযোগ্য প্রতিশ্রুতি দিতে পারছে, যতক্ষণ না তারা কানাডার সঙ্গে হাত মেলাচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত পাল্টা ব্যবস্থা (শুল্ক) বহাল থাকবে। যুক্তরাষ্ট্র কানাডা নয়, কানাডা কখনই, কোনও দিনই যুক্তরাষ্ট্রের অংশ হবে না।’
সূত্র: বিবিসি, রয়টার্স, এএফপি
এসজেড