রমজান মাসে রোজা অবস্থায় স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের ক্ষেত্রে কিছু বিশেষ বিধান রয়েছে, যা মেনে চলা জরুরি। ইসলামী শরিয়ত অনুসারে, স্বামী-স্ত্রীর ঘনিষ্ঠতা রোজার হুকুম ও আদবের মধ্যে পড়ে। নিচে রোজাবস্থায় স্বামী-স্ত্রী যেসব বিষয় মেনে চলা উচিত তা বিস্তারিত আলোচনা করা হলো—
যে বিষয়গুলো করা জায়েজ (অনুমোদিত)
স্নেহ ও ভালোবাসা প্রকাশ করা
রোজা অবস্থায় স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে স্নেহ-মমতা প্রকাশ করতে পারে।
হাতে হাত ধরা, ভালোবাসার কথা বলা ইত্যাদি জায়েজ।
চুম্বন ও আলিঙ্গন
যদি এতে উত্তেজনা সৃষ্টি না হয় এবং সহবাসে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা না থাকে, তাহলে হালকা চুম্বন বা আলিঙ্গন করা জায়েজ।
তবে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম নয়, তার জন্য এটি এড়িয়ে যাওয়াই উত্তম।
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে রোমান্টিক কথা বলা
যদি এতে ফিতনায় (প্রবৃত্তির উত্তেজনা) পতিত হওয়ার আশঙ্কা না থাকে, তাহলে তা বৈধ।
যে বিষয়গুলো রোজার মধ্যে হারাম (নিষিদ্ধ)
১. সহবাস (শারীরিক সম্পর্ক)
রোজা অবস্থায় স্বামী-স্ত্রীর সহবাস করা সম্পূর্ণ হারাম।
ইচ্ছাকৃতভাবে কেউ যদি রোজা অবস্থায় সহবাস করে, তাহলে তার কাফফারা দিতে হবে:
৬০ দিন ধারাবাহিক রোজা রাখতে হবে, যদি তা সম্ভব না হয়,
৬০ জন গরিব মানুষকে খাওয়াতে হবে।
২. বীর্যপাতের উদ্দেশ্যে যৌন উত্তেজক কার্যকলাপ
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে এমন কোনো আচরণ করা, যা বীর্যপাতের কারণ হতে পারে (যেমন— চুম্বন, স্পর্শ, যৌন উত্তেজক আলাপ ইত্যাদি), তা নিষিদ্ধ।
কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে বীর্যপাত ঘটায়, তাহলে তার রোজা ভেঙে যাবে এবং শুধু কাজা (একটি রোজার বদলে একটি রোজা) করতে হবে।
৩. অশ্লীল কথা ও কুরুচিপূর্ণ আচরণ
রোজার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো আত্মশুদ্ধি, তাই কুরুচিপূর্ণ কথা ও আচরণ থেকে বিরত থাকা জরুরি।
রাসুল (সা.) বলেছেন, "যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও খারাপ কাজ ত্যাগ করেনি, তার ক্ষুধা ও তৃষ্ণার্ত থাকার কোনো প্রয়োজন আল্লাহর নেই।" (সহিহ বুখারি)
রোজা অবস্থায় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসা প্রকাশ করা ও সাধারণ আবেগের বহিঃপ্রকাশ জায়েজ হলেও, এমন কিছু করা যাবে না যা রোজার মূল উদ্দেশ্যের বিপরীতে যায় বা রোজা ভঙ্গের কারণ হয়। তাই আত্মনিয়ন্ত্রণ করা, তাকওয়া অবলম্বন করা এবং রোজার পবিত্রতা রক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিকভাবে রোজার আদব মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন!
thebgbd.com/NIT