ঢাকা | বঙ্গাব্দ

ইতিকাফ কী, নিয়মাবলী জানুন

ইতিকাফ করার কিছু নির্দিষ্ট শর্ত ও নিয়ম রয়েছে, যা পালন করা প্রয়োজন।
  • নিজস্ব প্রতিবেদক | ২০ মার্চ, ২০২৫
ইতিকাফ কী, নিয়মাবলী জানুন ছবি : সংগৃহীত।

ইতিকাফ হলো একটি বিশেষ ধরনের ইবাদত, যেখানে একজন মুসলিম নির্দিষ্ট একটি স্থানে (সাধারণত মসজিদে) বসে আল্লাহর স্মরণ, নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত ও দোয়া-প্রার্থনা করতে থাকে। এই সময়টাতে একান্তভাবে আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করা হয় এবং পৃথিবীজীবনের সকল ব্যস্ততা ও চিন্তা থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া হয়। সাধারণত রমজান মাসের শেষ দশ দিনে ইতিকাফ করা হয়, কিন্তু বছরের অন্য সময়েও এটি করা যেতে পারে।


ইতিকাফের উদ্দেশ্য


ইতিকাফের মূল উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর কাছে একান্তভাবে সময় কাটানো, তার সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করা, এবং দুনিয়ার মায়া থেকে মুক্তি লাভ করা। এটি আত্মশুদ্ধি, তওবা এবং দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছ থেকে রহমত, মাগফিরাত ও মুক্তি পাওয়ার একটি মাধ্যম।


ইতিকাফ করার নিয়মাবলী


ইতিকাফ করার কিছু নির্দিষ্ট শর্ত ও নিয়ম রয়েছে, যা পালন করা প্রয়োজন।


স্থানে অবস্থান: ইতিকাফ করতে হলে, সাধারণত মসজিদে থাকতে হবে। তবে, পুরুষরা মূলত মসজিদে ইতিকাফ করেন এবং মহিলারা বাড়িতেও নির্দিষ্ট একটি স্থানে ইতিকাফ করতে পারেন, যেমন তাদের ঘরের একটি নির্দিষ্ট জায়গা।


নিয়মিত নামাজ: ইতিকাফের সময় প্রতি ফজরের নামাজের পর থেকে মাগরিবের পূর্ব পর্যন্ত মসজিদে অবস্থান করা হয়। ইতিকাফের মধ্যে নিয়মিত নামাজ, সুন্নত নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত ও দোয়া-প্রার্থনা করা উচিত।


বিশ্বীয বিষয় থেকে বিরতি: ইতিকাফের সময় পৃথিবীজীবনের সব কাজ ও ব্যস্ততা থেকে দূরে থাকতে হবে। মানুষ যেন শুধু আল্লাহর দিকে মনোনিবেশ করে এবং তার ইবাদত ও আত্মশুদ্ধির দিকে মনোযোগ দেয়।


অপবিত্রতা থেকে বিরতি: ইতিকাফের সময় শারীরিকভাবে অপবিত্র হওয়া থেকে বিরত থাকতে হয়, যেমন মেনস্ট্রুয়েশন বা নিফাস। যদি ইতিকাফের সময় কেউ অপবিত্র হয়, তবে তাকে ইতিকাফ ভঙ্গ করতে হবে।


মনে ইতিকাফের সংকল্প: ইতিকাফ শুরু করার আগে একটি নিয়ত করতে হয় যে, এই বিশেষ সময়টাতে শুধু আল্লাহর ইবাদত করা হবে, এবং দুনিয়ার কোন কাজ থেকে তা আলাদা থাকবে। এটি একান্তভাবে আল্লাহর জন্য হওয়া উচিত।


আধ্যাত্মিক উদ্দেশ্য: ইতিকাফের সময় আল্লাহর কাছে মাগফিরাত ও রহমত চাওয়া, জীবনের উদ্দেশ্য জানার চেষ্টা করা, এবং সঠিক পথে চলার জন্য দোয়া করা হয়। ইতিকাফের সময় কুরআন তিলাওয়াত এবং দোয়া বেশি করা উচিত।


ইতিকাফের সময়কাল


ইতিকাফের সময়কাল সাধারনত দশ দিন, বিশেষত রমজানের শেষ দশ দিন। তবে, এটি কম সময়ের জন্য (যেমন এক দিন) বা দীর্ঘ সময় (যেমন দশ দিন বা আরও বেশি) করা যেতে পারে। রাসুল (সা.) রমজানের শেষ দশকেই ইতিকাফ করতেন এবং এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত।


ইতিকাফের গুরুত্ব


ইতিকাফ একটি বিশেষ ইবাদত, যার মাধ্যমে মুসলিমরা আত্মশুদ্ধি লাভ করে, আল্লাহর কাছে দোয়া করতে পারে এবং বিশেষত রমজান মাসের শেষ দশকে লাইলাতুল কদর লাভের আশায় অতিরিক্ত ইবাদত করতে পারেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, "যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ইতিকাফ করবে, তার সমস্ত পাপ মাফ করে দেওয়া হবে।" (সহিহ বুখারি)


ইতিকাফের কিছু নিষেধাজ্ঞা


ইতিকাফ অবস্থায় সামাজিক কার্যক্রম বা দুনিয়ার কাজে মনোযোগ দেওয়া নিষিদ্ধ।

ইতিকাফের সময় বেশি কথা বলা বা কথাবার্তা বলা পরিহার করা উচিত।

যদি ইতিকাফের সময় কোনো জরুরি কাজ থাকে, তবে তা করা যেতে পারে, তবে সেক্ষেত্রে সময়মত ফিরে আসতে হবে এবং ইতিকাফে বিঘ্ন ঘটানো যাবে না।


ইতিকাফ একটি আত্মশুদ্ধির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যার মাধ্যমে মুসলিমরা আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করার চেষ্টা করেন এবং রমজান মাসে এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। সঠিকভাবে ইতিকাফ পালন করলে আত্মিক উন্নতি ও আল্লাহর রহমত পাওয়া সম্ভব।


thebgbd.com/NA