রমজানের শেষ কিছুদিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং বিশেষ ফজিলতপূর্ণ। এ সময় মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা, নেক আমল ও বেশি বেশি ইবাদত করার জন্য এক সুবর্ণ সুযোগ। রমজানের শেষ দশদিনে রয়েছে লাইলাতুল কদর (শক্তি ও মর্যাদার রাত), যা কুরআনের মধ্যে সবচেয়ে বরকতময় রাত। নিচে রমজানের শেষ কিছুদিনের আমল সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হল:
১. অতিরিক্ত দোয়া ও ইস্তেগফার
ইস্তেগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) বেশি বেশি করতে হবে। রমজানের শেষ দিনগুলোতে গুনাহ মাফের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার গুরুত্ব অনেক বেশি।
আল্লাহর কাছে দোয়া করতে পারেন:
"اللهم اغفر لنا ولآبائنا وأمهاتنا ولإخواننا ولأصدقائنا ولمن له حق علينا"
(অর্থ: হে আল্লাহ, আমাদের, আমাদের পিতামাতার, আমাদের ভাই-বোনের, বন্ধুদের এবং আমাদের প্রতি যারা কোনো ধরনের হক রাখে তাদের জন্য ক্ষমা দান কর।)
২. কুরআন তিলাওয়াত ও তাহফিজ
রমজান মাসে কুরআন তিলাওয়াতের গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি। শেষ দশদিনে কুরআন তিলাওয়াত আরও বাড়িয়ে দিন।
তাহফিজ (কুরআন মুখস্থ করা) করার চেষ্টা করা উচিত, বিশেষ করে যে অংশগুলো আপনি আগে শিখেছেন।
শেষ দশদিনে কুরআন পাঠে মনোযোগ দিন এবং এর তাফসির (ব্যাখ্যা) পড়ার চেষ্টা করুন।
৩. তাহাজ্জুদ নামাজ
রমজানের শেষ দশদিনে তাহাজ্জুদ নামাজ বেশি বেশি পড়া উচিত। এই রাতে দোয়া ও ইবাদতের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।
রাতের সময়টা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা ও ক্ষমা চাওয়ার জন্য এক আদর্শ সময়।
লাইলাতুল কদর (যা রমজানের শেষ দশকে কোনো এক রাতে রয়েছে) এই রাতটি অত্যন্ত বরকতময়, এবং তা হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ।
৪. বেশি বেশি সাদাকাহ ও দান
রমজান মাসে দান-সদকাহের সওয়াব বহুগুণ বেশি। শেষ কয়েকদিনে আল্লাহর পথে দান করলে বিশেষ বরকত পাওয়া যায়।
ফিতরার দান (যা রমজানের শেষে প্রদান করতে হয়) নির্ধারিত নিয়মে গরীব-দুঃখীদের সাহায্য করুন।
৫. ইতিকাফ করা
ইতিকাফ (মসজিদে নিরবচ্ছিন্নভাবে ইবাদত করা) রমজানের শেষ দশদিনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল।
এটি আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের একটি মাধ্যম এবং একান্তভাবে আল্লাহর ইবাদতে সময় কাটানোর সুযোগ।
ইতিকাফের মাধ্যমে অনেক বেশি সওয়াব পাওয়া যায় এবং এ সময়েই লাইলাতুল কদর আসতে পারে, যা সারা জীবনের জন্য কল্যাণ বয়ে আনে।
৬. লাইলাতুল কদরের জন্য প্রস্তুতি
লাইলাতুল কদর (শক্তি ও মর্যাদার রাত) রমজানের শেষ দশদিনে থাকে, যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম।
এই রাতের সঠিক সময় অবশ্যই আল্লাহর ইবাদত ও দোয়া করতে হবে।
হাদিসে এসেছে, "যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরে ঈমান ও ইখলাসের সঙ্গে ইবাদত করবে, তার পূর্ববর্তী সমস্ত গুনাহ মাফ হয়ে যাবে।"
এই রাতে কুরআন তিলাওয়াত, দোয়া, সাদাকাহ, ইস্তেগফার এবং তাহাজ্জুদ নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা সম্ভব।
৭. নফল নামাজ
রমজান মাসে সাধারণত নফল নামাজের অনেক গুরুত্ব থাকে। বিশেষ করে রমজানের শেষ কয়েকদিনে বেশ কিছু নফল নামাজ পড়া উচিত, যেমন:
২ রাকাত নফল নামাজ (প্রত্যেকটি দুই রাকাত করে মোট ৪ রাকাত)।
ওয়িত্র নামাজ (বিশেষভাবে রমজানে এটি পড়া সুন্নত)।
৮. নিজে আমল করা এবং পরিবারকে উদ্বুদ্ধ করা
আপনার নিজের আমল বৃদ্ধি করার পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদেরও ইবাদত এবং দোয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করুন।
পরিবারের সবাইকে আল্লাহর পথে দানের জন্য উৎসাহিত করুন এবং একত্রে সাদাকাহ বা ইবাদত করার চেষ্টা করুন।
৯. আল্লাহর কাছে মাগফিরাত (ক্ষমা) প্রার্থনা
রমজান মাসের শেষের দিনগুলোতে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য বিশেষ দোয়া করা উচিত।
"اللهم اعتق رقابنا من النار" (অর্থ: হে আল্লাহ, আমাদেরকে দোজখের আগুন থেকে মুক্তি দিন)।
রমজানের শেষ দিনগুলোতে আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাত লাভের জন্য বেশি বেশি ইবাদত ও দোয়া করতে হবে। এই দিনগুলো আমাদের জীবনের জন্য অমূল্য সময়, তাই সঠিকভাবে ইবাদত ও আমল করা উচিত যাতে আল্লাহ আমাদের গুনাহ মাফ করেন এবং পরকালে সফলতা দান করেন।
thebgbd.com/NA