ঢাকা | বঙ্গাব্দ

পরিবর্তন আসছে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায়

মহান মুক্তিযুদ্ধের ৫৩ বছর পর বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংজ্ঞায় পরিবর্তনের প্রস্তাব উত্থাপিত হয়েছে।
  • নিজস্ব প্রতিবেদক | ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪
পরিবর্তন আসছে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় ফাইল ছবি

মহান মুক্তিযুদ্ধের ৫৩ বছর পর বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংজ্ঞায় পরিবর্তনের প্রস্তাব উত্থাপিত হয়েছে। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য করা হবে। অন্যদিকে, যারা মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্নভাবে সহায়তা করেছেন—যেমন বিশ্ব জনমত গঠন, মুজিবনগর সরকারের কর্মকাণ্ড, চিকিৎসাসেবা প্রদান কিংবা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অবদান রেখেছেন—তাদের ‘যুদ্ধ-সহায়ক’ হিসেবে শ্রেণিভুক্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার সর্বনিম্ন বয়স ১৩ বছর নির্ধারণের প্রস্তাব এসেছে।


জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) জানিয়েছে, ২০২২ সালের সংশোধিত আইনকে অধ্যাদেশ আকারে কার্যকর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গত ২০ নভেম্বর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজমের নেতৃত্বে নতুন করে ১১ সদস্যের জামুকা কাউন্সিল গঠিত হয়। এই কাউন্সিল গত ২৪ নভেম্বর ও ২ ডিসেম্বর দুটি সভায় সংজ্ঞা সংশোধনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে।


বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংজ্ঞা নিয়ে স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে পরিবর্তন আনা হয়েছে। প্রথমবার ১৯৭২ সালে সংজ্ঞায় শুধু মুক্তিবাহিনীর সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। পরে ২০১৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার নতুন সংজ্ঞা নির্ধারণ করে, যেখানে মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখা ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।


তবে নতুন খসড়ায় বলা হয়েছে, মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে শুধু সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী এবং নির্যাতিত বীরাঙ্গনাদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। অন্যদিকে, যেসব ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধে সহায়ক ভূমিকা রেখেছেন, যেমন মুজিবনগর সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারী, স্বাধীন বাংলা বেতারের শিল্পী, চিকিৎসক বা প্রবাসী বাংলাদেশিরা, তাদের আলাদা শ্রেণিতে ‘যুদ্ধ-সহায়ক’ হিসেবে রাখা হবে।


বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বনিম্ন বয়স নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ বছর ৬ মাস, যা ২০১৮ সালের পরিপত্রে নির্ধারিত। নতুন প্রস্তাবে এই বয়স বাড়িয়ে ১৩ বছর করা হতে পারে। তবে নির্যাতিতা নারী বা বীরাঙ্গনাদের ক্ষেত্রে বয়সের সীমা প্রযোজ্য হবে না।


খসড়ায় ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’কে সংজ্ঞায়িত করে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল ঘোষণাপত্রে বর্ণিত গণতন্ত্র, সমতা, মানবিক মূল্যবোধ ও সামাজিক ন্যায়বিচারের চেতনা হলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।


অনেক মুক্তিযোদ্ধা এবং বিশিষ্ট ব্যক্তি মনে করছেন, এ ধরনের পরিবর্তন মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানহানি ঘটাতে পারে। বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক হারুন হাবীব বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ৫৩ বছর পরও একটি নির্ভুল তালিকা তৈরি না হওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক। সংজ্ঞায় পরিবর্তনের ফলে মুক্তিযোদ্ধারা হয়রানির শিকার হতে পারেন, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।


সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা জেড আই খান পান্না বলেন, মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার জন্য অস্ত্রধারণই একমাত্র শর্ত নয়। যারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ভূমিকা রেখেছেন, তারাও মুক্তিযোদ্ধা। সংজ্ঞার এই পরিবর্তনে তাদের অবদান অবমূল্যায়িত করা ঠিক হবে না।


খসড়া সংজ্ঞা যাচাই-বাছাইয়ের পর উপদেষ্টা পরিষদে উপস্থাপন করা হবে। এরপর আইন সংশোধনের মাধ্যমে নতুন সংজ্ঞা ও বিধিমালা কার্যকর করা হবে। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সঠিক ইতিহাস ধরে রাখার জন্য সংজ্ঞাটি ন্যায়সংগতভাবে নির্ধারণ করা হবে।


thebgbd.com/NIT