রাজতন্ত্র ফেরানোর দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলন ঘিরে তিন সপ্তাহের ব্যবধানে আবার অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে নেপাল। শনিবার রাজধানী কাঠমান্ডু সংলগ্ন এলাকায় সাবেক রাজা জ্ঞানেন্দ্রের সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে দুই জনের মৃত্যু এবং শতাধিক আহত হওয়ার ঘটনায় অচল হয়ে পড়েছে দেশের বিস্তীর্ণ অংশ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বিভিন্ন শহরে কার্ফু ও সেনা টহল চলছে।
শুক্রবার সাবেক রাজা জ্ঞানেন্দ্রকে ফেরানোর দাবিতে আন্দোলনকারীরা একাধিক সরকারি ভবন ভাঙচুরের পাশাপাশি যানবাহন, বিভিন্ন শপিং মল ও দোকানে লুঠ ও অগ্নিসংযোগও করে। তাদের অনেকেই সশস্ত্র দেখা গেছে। নতুন সংবিধান কার্যকরের সময় বিলুপ্ত রাজতন্ত্র এবং ‘রাজধর্ম’ ফেরানোর দাবি তোলেন তারা। সেই সঙ্গে নেপাল কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান তথা দেশের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি এবং বিরোধী দলনেতা প্রচণ্ডের বিরুদ্ধেও স্লোগান দেন।
১৯ ফেব্রুয়ারি এক ভিডিওবার্তায় দেশের অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে পাশে দাঁড়ানোর আবেদন জানান জ্ঞানেন্দ্র। তারপরই তার প্রতি অভূতপূর্ব সমর্থনের ঢল নেমেছে। রাজতন্ত্রের সমর্থক রাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র পার্টির পাশাপাশি গণতন্ত্রপন্থী নেপালি কংগ্রেসের সমর্থকদের একাংশও ‘প্রতীকী রাজতন্ত্রের’ প্রত্যাবর্তন চাইছেন। শুক্রবার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা মাওবাদী নেতা প্রচণ্ড (পুষ্পকমল দাহাল) পাল্টা রাজতন্ত্র বিরোধী সভা করে প্রকাশ্যে হুঁশিয়ারি দেওয়ার পরেই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
চলতি মাসের শুরুতে নেপালের পশ্চিমাঞ্চল সফর শেষে জ্ঞানেন্দ্র কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানাতে হাজির হয় বিপুলসংখ্যক সাধারণ নাগরিক। সেখানে স্লোগান ওঠে ‘আবার রাজতন্ত্র চাই’। জ্ঞানেন্দ্রকে আবার রাজপ্রাসাদে বসবাস করতে দেওয়ার দাবিও ওঠে। সেদিনই পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের প্রথম সংঘর্ষ হয়।
প্রায় দু’দশক আগে ২০০৬ সালে ক্ষমতাচ্যুত হন শেষ রাজা জ্ঞানেন্দ্র। ২০০৮ সালের মে মাসে সংবিধান সংশোধন করে ২৪০ বছরের পুরনো রাজতন্ত্র ভেঙে নেপালে প্রতিষ্ঠিত হয় গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা। ক্ষমতাচ্যুত জ্ঞানেন্দ্র সাধারণ নাগরিক হিসাবে বাস করেন। কোনও রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ক্ষমতা নেই। অনুমতি নেই রাজপ্রাসাদে যাওয়ার। এমনকি, সরকারি কোনও সুবিধাও তিনি পান না।
১৭৬৮ সালে নেপালে শাহ রাজবংশের সূচনা হয়। জ্ঞানেন্দ্রের দাদা রাজা বীরেন্দ্র ছিলেন পৃথ্বীনারায়ণের নবম প্রজন্ম। তাকে হত্যা করে যুবরাজ দীপেন্দ্র আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। মৃত্যুশয্যাতে অভিষেক হলেও দীপেন্দ্র বাঁচেননি। ২০০১ এর জুন মাসের হত্যাকাণ্ডের পর জ্ঞানেন্দ্র সিংহাসনে বসেন। ২০০৫ সালে নেপালে গণতান্ত্রিক সরকারকে সরিয়ে ক্ষমতা হাতে নেন জ্ঞানেন্দ্র। দ্রুত তার বিরুদ্ধে গণবিক্ষোভ দানা বাঁধে। এবারে গণবিক্ষোভ তাকে ‘সিংহাসনে’ ফেরানোর দাবিতে।
সূত্র: মালয় টাইমস
এসজেড