ঢাকা | বঙ্গাব্দ

চালের দাম বাড়তির দিকে, ভোক্তাদের স্বস্তি মিলছে না

গত কয়েকমাস ধরেই অস্থির দেশের চালের বাজার। বিভিন্ন সময় সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে দাম কমানোর কথা বলা হলেও হয়নি কোনো লাভ। কাজে আসেনি চাল আমদানিতে শুল্ক ছাড়ের ঘোষণাও।
  • নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৫ এপ্রিল, ২০২৫
চালের দাম বাড়তির দিকে, ভোক্তাদের স্বস্তি মিলছে না ফাইল ছবি

চালের বাজারের অস্থিরতা কাটছেই না। বরং আরও বেড়েছে। এর মধ্যেই খাদ্য উপদেষ্টার ‘বাজারে চালের দাম কিছুটা বাড়বে’-এমন আভাসের পর নতুন করে অস্থিরতা তৈরি হতে পারে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ী ও বাজার বিশ্লেষকরা।


গত কয়েকমাস ধরেই অস্থির দেশের চালের বাজার। বিভিন্ন সময় সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে দাম কমানোর কথা বলা হলেও হয়নি কোনো লাভ। কাজে আসেনি চাল আমদানিতে শুল্ক ছাড়ের ঘোষণাও।


সবশেষ গত ১৩ এপ্রিল বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছিলেন, দুই সপ্তাহের মধ্যে বাজারে বোরো ধানের চাল আসবে। নতুন ধান উঠলে চালের বাজার আরও সহনীয় হয়ে উঠবে। তবে বাণিজ্য উপদেষ্টার আশ্বাসের ঠিক উল্টো কথা জানালেন খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার।

 

আরও পড়ুন: বাজারে চালের দাম কিছুটা বাড়তে পারে: খাদ্য উপদেষ্টা

 

গত ২৪ এপ্রিল সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জে ধান সংগ্রহ অভিযান উদ্বোধন অনুষ্ঠানে খাদ্য উপদেষ্টা বলেন, ধান-চাল ক্রয় নিয়ে কোনো সিন্ডিকেট আর হবে না, হতে দেবে না সরকার। কৃষকের স্বার্থে বিগত বছরের চেয়ে কেজিতে চার টাকা বেশি দামে ধান-চাল ক্রয় করছে সরকার। সরকারের বেশি দামে কেনার কারণে বাজারে চালের দাম কিছুটা বাড়বে।

 

এতে কৃষক লাভবান হবেন উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, কৃষক পরিশ্রম করে ধান উৎপাদন করে তাদের উপযুক্ত মূল্য দিতে না পারলে কৃষক ধান চাষের আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন। সরকারিভাবে ধান চালের দাম নির্ধারণ না করা হলে মধ্যস্বত্বভোগী ভোগী ব্যবসায়ীরা কম দামে কৃষকের ধান কিনে নেবে তাই সরকারিভাবে ধান চালের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।

 

এই যখন অবস্থা তখন বাজার পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কায় ভোক্তারা। আদিব হোসেন নামে এক ক্রেতা বলেন, এক উপদেষ্টা বলছেন চালের দাম কমবে, আরেক উপদেষ্টা বলছেন দাম বাড়বে। বাজার আসলে কোন দিকে যাবে?

 

এদিকে চড়া চালের বাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট ৮৬-৯০ টাকা, আটাইশ ৬০-৬২ টাকা, নাজিরশাইল ৭৬-৮৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি কেজি পোলাও চাল বিক্রি হচ্ছে ১১৬-১১৮ টাকায়।

 

দেশের প্রধান এই খাদ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণের দাবি জানিয়ে সাধারণ মানুষ বলছেন, বাজার কাঠামো ঠিক রাখতে সরকার ব্যর্থ হলে বেকায়দায় পড়বেন ভোক্তারা।

 

নাসিম নামে এক ক্রেতা বলেন, চালের দাম দিনে দিনে বাড়ছেই। এরমধ্যে সরকার বলছে চালের দাম আরও বাড়তে পারে। যা ব্যবসায়ীদের দাম বাড়ানোর সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে। যার প্রভাব সব শ্রেণির ভোক্তার ওপরই পড়ছে। সরকারের উচিত বাজারে তদারকি বাড়ানোর পাশাপাশি মজুতদারদের সিন্ডিকেট ভেঙে দেয়া।

 

ব্যবসায়ীরা বলছেন, নতুন ধান ওঠা শুরু হয়েছে। চালের দাম বাড়ানোর কোনো কারণ নেই এই মুহূর্তে। রাজধানীর কারওয়ানবাজারের বরিশাল রাইছ এজেন্সির বিক্রেতা জানান, বোরো মৌসুমের ধান ওঠা শুরু হয়ে গেছে। এখনও নতুন চাল বাজারে আসেনি। আসলে দাম কিছুটা কমতে পারে।

 

চালের বাজারে স্বস্তি ফেরাতে মিল পর্যায়ে অভিযান চালানোর পরামর্শ দিয়ে তিনি আরও বলেন, মিল মালিকদের কারসাজিতে চালের দাম কমছে না। সরকার মিলে অভিযান পরিচালনা করে না। মিলে অভিযান করলে চালের দাম কমতে বাধ্য।

 

আর মনিটরিং না বাড়ালে চালের দাম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন বাজার বিশ্লেষকরা। কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, সরকারিভাবে চালের দাম চার টাকা বাড়ানো হোক আর না হোক ব্যবসায়ীরা দাম বাড়াবেই। কারণ তারা দাম বাড়িয়ে সুবিধা করতে পারছেন। দাম বাড়ানোর পর তাদের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়নি কখনও। তাই উপদেষ্টার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ার চেয়ে ব্যবসায়ীদের অতিমুনাফার মানসিকতাই মূল কারণ।

 

বাজারে নিয়মিত তদারকি করা হয় না অভিযোগ করে তিনি আরও বলেন, অনিয়ন্ত্রিত ও তদারকিহীন বাজার এভাবেই চলবে। ভোক্তাদের নাভিশ্বাস হলেও সরকারি দফতর নীরব থাকে, এটাই প্রচলিত হয়ে আসছে।


thebgbd.com/NIT