মঙ্গলবার ভারত শাসিত কাশ্মীরের পহেলগামে ভয়াবহ হামলার পর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে। কারণ, এরইমধ্যে বেশ কিছু পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপ ঘোষণা করেছে দু’দেশ। একে কেন্দ্র করে সামরিক সংঘাতের আশংকা করছেন বিশ্লেষকরা। ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে একথা বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হতাহতরা কোনো সৈনিক, যোদ্ধা বা কর্মকর্তা ছিলেন না। বরং ভারতের সবচেয়ে মনোরম উপত্যকাগুলোর মধ্যে একটিতে ছুটি কাটাতে আসা বেসামরিক নাগরিক ছিলেন। কেবল এই কারণেই এই হামলাটি এতটা মর্মান্তিক এবং প্রতীকী হয়ে উঠেছে। হামলার ঘটনার পরপরই দিল্লি দ্রুত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ ঘোষণা করে। তার মধ্যে প্রধান সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ করে দেয়া, একটি গুরুত্বপূর্ণ পানি-বণ্টন চুক্তি স্থগিত করা এবং কূটনীতিকদের বহিষ্কার করা।
সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ হলো, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং ‘কঠোর প্রতিশোধ’ নেয়ার হুশিয়ারি দিয়েছেন। কেবল অপরাধীদের বিরুদ্ধেই নয়, ভারতীয় মাটিতে ‘ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডের’ পিছনের মূল পরিকল্পনাকারীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। এই অবস্থায় সামরিক সংঘাতের ঝুঁকি অনেকটাই বেড়েছে বলে আশংকা করছেন আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশ্লেষকরা।
সামরিক ইতিহাসবিদ শ্রীনাথ রাঘবন বিবিসি’কে বলেছেন, ‘আমরা সম্ভবত একটি ভয়াবহ যুদ্ধের অপেক্ষায় আছি।’ রাঘবন ২০১৬ এবং ২০১৯ সালে ভারতের পূর্ববর্তী দুটি বড় প্রতিশোধের দিকে ইঙ্গিত করেছেন। এই দুটো ঘটনাতেই সীমান্ত অথবা বিমান হামলার মধ্য দিয়ে প্রতিক্রিয়া জানানো হয় বলেও জানান তিনি।
২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে উরিতে ভয়াবহ হামলায় ১৯ জন ভারতীয় সেনা নিহত হওয়ার পর, ভারত কার্যত সীমান্ত পেরিয়ে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ নামে একটি অভিযান চালায়। যা নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) নামেও পরিচিত। এছাড়া ২০১৯ সালে, পুলওয়ামায় কমপক্ষে ৪০ জন আধাসামরিক সদস্য নিহত হওয়ার পর ভারত বালাকোটে বিমান হামলা চালায়। ১৯৭১ সালের পর পাকিস্তানের গভীরে প্রথম এই ধরনের হামলা চালানো হয়।
পাকিস্তান পাল্টা বিমান হামলার মাধ্যমে এর প্রতিক্রিয়া জানায়, যার ফলে সংঘর্ষ হয় এবং একজন ভারতীয় পাইলটকে অল্প সময়ের জন্য আটক করা হয়। উভয় পক্ষই পাল্টাপাল্টি শক্তি প্রদর্শন করে কিন্তু যুদ্ধ এড়িয়ে যায়। এর দুই বছর পর ২০২১ সালে, তারা নিয়ন্ত্রণ রেখায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় যা মূলত বহাল রয়েছে।
এদিকে, পররাষ্ট্র নীতি বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান মনে করেন, কাশ্মীরের সাম্প্রতিক হামলায় ২৬ জনের নিহত হওয়া এবং ভারতীয় বেসামরিক নাগরিকদের টার্গেট করায় সামরিক সংঘাতের ঝুঁকি অত্যন্ত বেড়েছে। ‘যদি দিল্লি পাকিস্তানের জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ দেখাতে পারে তবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতীয় সামরিক যুদ্ধের একটি ভয়াবহ ঝুঁকির আশংকা রয়েছে।’
‘ভারতের জন্য এই ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখানোর একটি সুবিধা আছে। তা হলো রাজনৈতিক। কারণ, ভারতের উপর জোরালো প্রতিক্রিয়া জানানোর প্রবল চাপ থাকবে জনসাধারণের তরফ থেকে।’ কুগেলম্যান বিবিসি’কে বলেন।
সূত্র: ওয়াশিংটন পোস্ট
এসজেড