ঢাকা | বঙ্গাব্দ

জাপানে মুদ্রাস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি

দীর্ঘ সময় স্থির বা নিম্নমুখী দামের পর ২০২২ সালে ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের ফলে জাপানে মূল্যস্ফীতি ফিরে আসে।
  • অনলাইন ডেস্ক | ২৩ মে, ২০২৫
জাপানে মুদ্রাস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি জাপানে মুদ্রাস্ফীতি।

জাপানে মূল মুদ্রাস্ফীতির হার এপ্রিল মাসে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৫ শতাংশে। চালের দাম গত বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ায় এ বৃদ্ধির প্রধান কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে। শুক্রবার প্রকাশিত সরকারি জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। টোকিও থেকে এএফপি এই খবর জানিয়েছে। 


তাজা খাদ্যপণ্য বাদ দিয়ে হিসাব করা ভোক্তা মূল্যসূচক গত মার্চের ৩ দশমিক ২ শতাংশ থেকে বেড়ে এপ্রিল মাসে হয়েছে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ, যা বাজারের পূর্বাভাসের তুলনায় সামান্য বেশি। এ প্রবণতা ব্যাংক অব জাপান (বিওজে) সুদের হার বৃদ্ধির সম্ভাবনাকে আরো জোরদার করেছে। জ্বালানি ব্যয় বাদ দিলে, এপ্রিল মাসে মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল ৩ শতাংশ, যা মার্চে ছিল ২ দশমিক ৯ শতাংশ। সব ধরনের খরচ বিবেচনায় নিয়ে সামগ্রিক মুদ্রাস্ফীতি ছিল ৩ দশমিক ৬ শতাংশ, যা মার্চ মাসের তুলনায় অপরিবর্তিত।


মূল মুদ্রাস্ফীতি প্রায় তিন বছর ধরে বিওজে’র ২ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার ঊর্ধ্বে রয়েছে। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতিজনিত অনিশ্চয়তা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আপাতত সুদের হার অপরিবর্তিত রাখার পক্ষেই থাকতে বাধ্য করতে পারে। মে মাসের শুরুর দিকে অনুষ্ঠিত বিওজে’র সর্বশেষ বৈঠকে প্রধান সুদের হার অপরিবর্তিত রাখা হয়। তবে তারা সতর্ক করেছে যে, শুল্ক বৃদ্ধির কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা বাড়ছে এবং সে কারণে জাপানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে আনা হয়েছে।


দীর্ঘ সময় স্থির বা নিম্নমুখী দামের পর ২০২২ সালে ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের ফলে জাপানে মূল্যস্ফীতি ফিরে আসে। এই মূল্যবৃদ্ধি সরকারের জন্য রাজনৈতিক চাপে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে দেশের প্রধান খাদ্য চালের ক্ষেত্রে। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, মার্চ মাসে চালের দাম বেড়েছিল ৯২ দশমিক ৫ শতাংশ এবং এপ্রিল মাসে তা বেড়ে হয়েছে ৯৮ দশমিক ৪ শতাংশ। যা ২০২৪ সালের এপ্রিলের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।


মূল্যবৃদ্ধি মোকাবেলায় সরকার জরুরি মজুদের কিছু অংশ বাজারে ছেড়েছে। চালের সঙ্কটের কারণ হিসেবে সরকার বলছে, ২০২৩ সালে প্রচণ্ড গরমে ফসল নষ্ট হয়েছে। ভূমিকম্প সতর্কতায় মানুষ প্যানিক-বায়িং করেছে, রেকর্ডসংখ্যক পর্যটক এসে ভোক্তা চাহিদা বাড়িয়েছে এবং কিছু ব্যবসায়ী চাল মজুত করে রেখেছেন।


এই পরিস্থিতির মধ্যে সম্প্রতি কৃষিমন্ত্রী তাকু এটো এক বিতর্কিত মন্তব্য করে জনরোষের মুখে পদত্যাগ করেন। এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, ‘কখনও নিজে চাল কিনিনি, কারণ আমার সমর্থকরা এত চাল দান করেন, চাইলে তা বিক্রি করতে পারি।’


তার এই মন্তব্যে দেশজুড়ে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়লে প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘জাপানবাসীর কাছে ক্ষমা চাইছি। কারণ, তাকু এটোকে নিয়োগ দিয়েছি, তাই এর দায় আমার। চালের উচ্চমূল্য কোনো সাময়িক ঘটনা নয় বরং এটি একটি কাঠামোগত সমস্যা। এ নিয়ে আমাদের গভীরভাবে আলোচনা করতে হবে এবং অবশ্যই দাম কমাতে হবে।’


ক্যাপিটাল ইকোনমিক্সের বিশ্লেষক মার্সেল থিলিয়ান্ট জানান, ‘সাপ্তাহিক চালের দামে স্থিতিশীলতার ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে। ফলে চালের মূল্যস্ফীতি খুব শিগগিরই হ্রাস পেতে পারে। আমার ধারণা, ব্যাংক অব জাপান এই বছর নীতিমালা আরো কড়াকড়িভাবে প্রয়োগ করবে।’


সূত্র: এএফপি 


এসজেড