ঢাকা | বঙ্গাব্দ

মার্কিন কোম্পানিকে ঘিরে ইরাকের মামলা

বাগদাদের এক সরকারি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘মামলায় এসব চুক্তি অবৈধ ঘোষণা এবং বাতিলের দাবি জানানো হয়েছে।’
  • | ২৭ মে, ২০২৫
মার্কিন কোম্পানিকে ঘিরে ইরাকের মামলা কুর্দিস্তানের একটি তেল ক্ষেত্র।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দুটি কোম্পানির সঙ্গে স্বায়ত্তশাসিত কুর্দিস্তান আঞ্চলিক সরকারের (কেআরজি) করা গ্যাস চুক্তি বাতিলের দাবিতে মামলা করেছে ইরাকের কেন্দ্রীয় সরকার। বাগদাদ থেকে এএফপি জানায়, কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই চুক্তি ইরাকের সার্বভৌম অর্থনৈতিক নীতির পরিপন্থী এবং কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদন ছাড়াই সম্পাদিত হওয়ায় এগুলো অবৈধ বলে বিবেচিত হচ্ছে।


মামলাটি দায়ের করা হয়েছে বাগদাদের আল-কারখ বাণিজ্যিক আদালতে। বাগদাদের একজন জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা এএফপিকে জানিয়েছেন, ‘মামলায় এসব চুক্তি অবৈধ ঘোষণা এবং বাতিলের দাবি জানানো হয়েছে।’


চুক্তির পটভূমি ১৯ মে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে কুর্দিস্তান আঞ্চলিক সরকার ও দুটি মার্কিন কোম্পানির মধ্যে এই চুক্তিগুলো সই হয়। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এগুলো ছিল প্রাকৃতিক গ্যাস অনুসন্ধান, উত্তোলন, প্রক্রিয়াকরণ ও রপ্তানির দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প, যার আর্থিক পরিমাণ ‘দশকের পর দশক মেয়াদে’ দশ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি।


যদিও মার্কিন কোম্পানিগুলোর নাম এবং চুক্তির সুনির্দিষ্ট শর্তাবলি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি, ধারণা করা হচ্ছে এসব কোম্পানি ইতোমধ্যে ইরাকের উত্তরাঞ্চলে কার্যক্রম চালাচ্ছে অথবা সম্প্রসারণের পরিকল্পনায় আছে।


ইরাকের কেন্দ্রীয় সরকার ও কুর্দিস্তান আঞ্চলিক সরকার দীর্ঘদিন ধরেই প্রাকৃতিক সম্পদ, বিশেষ করে তেল ও গ্যাস সম্পদের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দ্বন্দ্বে লিপ্ত। কুর্দিস্তান সরকার বারবার নিজস্ব চুক্তির মাধ্যমে বিদেশি কোম্পানিকে সম্পদ ব্যবহারের অধিকার দিয়েছে, যাকে বাগদাদ বৈধ বলে স্বীকৃতি দেয় না। ২০২২ সালে ইরাকের সুপ্রিম কোর্ট এক রায়ে কুর্দিস্তানের তেল ও গ্যাস আইনকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করে এবং এই ধরনের চুক্তিকে কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে বৈধ বলেও মন্তব্য করে।


কুর্দি প্রতিক্রিয়া


এক কুর্দি কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এএফপিকে জানান, ‘কেন্দ্রীয় সরকার এই মামলা করে আমাদের অর্থনৈতিক বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করতে চাইছে। এই ধরনের চুক্তি বৈধভাবেই সই হয়েছে এবং এগুলো কুর্দিস্তান অঞ্চলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, এই মামলায় আদালতের মাধ্যমে চুক্তি বাতিলের দাবি খারিজ হয়ে যাবে এবং প্রকল্পগুলো যথারীতি বাস্তবায়ন হবে।’


রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক মাত্রা


এই ঘটনা যুক্তরাষ্ট্র-ইরাক সম্পর্কেও একটি সূক্ষ্ম উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে। ওয়াশিংটনে চুক্তি সই হওয়া এবং এতে মার্কিন কোম্পানির জড়িত থাকা কূটনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর। কারণ যুক্তরাষ্ট্র ইরাকের কেন্দ্রীয় সরকারের প্রধান কৌশলগত মিত্র হলেও কুর্দিদের প্রতিও ঐতিহাসিকভাবে সহানুভূতিশীল।


একটি চুক্তির প্রশ্ন নয়; এটি দেশটির অভ্যন্তরীণ ক্ষমতা কাঠামো, ফেডারেলিজমের ভবিষ্যৎ এবং প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রশ্নেও একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে। এখন দেখার বিষয়, আদালত এই মামলায় কী সিদ্ধান্ত দেয় এবং তা ইরাক-কুর্দিস্তান সম্পর্ক ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ওপর কী প্রভাব ফেলে।


সূত্র: এএফপি


এসজেড