ঢাকা | বঙ্গাব্দ

সামরিক হস্তক্ষেপের প্রস্তুতিতে চীন

শনিবার সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত বার্ষিক নিরাপত্তা সম্মেলন শাংরি-লা ডায়ালগে দেওয়া বক্তব্যে হেগসেথ এই মন্তব্য করেন।
  • অনলাইন ডেস্ক | ৩১ মে, ২০২৫
সামরিক হস্তক্ষেপের প্রস্তুতিতে চীন পিট হেগসেথ

এশিয়ায় শক্তির ভারসাম্য বদলে দিতে চীন ‘বিশ্বাসযোগ্যভাবে সামরিক হস্তক্ষেপের প্রস্তুতি নিচ্ছে’ বলে সতর্ক করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ। তিনি বলেন, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র ‘স্থায়ীভাবে অবস্থান’ করতে এসেছে। সিঙ্গাপুর থেকে এএফপি জানায়, শনিবার সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত বার্ষিক নিরাপত্তা সম্মেলন শাংরি-লা ডায়ালগে দেওয়া বক্তব্যে হেগসেথ এই মন্তব্য করেন। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের সঙ্গে বেইজিংয়ের বাণিজ্য, প্রযুক্তি ও কৌশলগত প্রভাব বিস্তার নিয়ে চলমান দ্বন্দ্বের মধ্যে তিনি এ মন্তব্য করলেন।


চীনের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখতে গিয়ে হেগসেথ বলেন, 'চীনের পক্ষ থেকে আসা হুমকি বাস্তব এবং তা অচিরেই বাস্তবায়িত হতে পারে।' তিনি জানান, বেইজিং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ক্ষমতার ভারসাম্য বদলে দিতে সামরিক শক্তি ব্যবহারের বাস্তব প্রস্তুতি নিচ্ছে। তিনি আরও বলেন, চীনা সেনাবাহিনী তাইওয়ান আক্রমণের সক্ষমতা অর্জনে কাজ করছে এবং ‘বাস্তব অভিযানের মহড়াও চালাচ্ছে’।


চীন সম্প্রতি তাইওয়ানের আশপাশে বড় পরিসরের সামরিক মহড়া চালিয়েছে, যা অনেকেই সম্ভাব্য অবরোধ কিংবা হামলার প্রস্তুতি হিসেবে দেখছেন। যুক্তরাষ্ট্র এখন কমিউনিস্ট চীনের আগ্রাসন রুখতে নিজেদের অবস্থান পুনর্গঠনের পথে রয়েছে বলে জানান হেগসেথ। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই আমাদের এশীয় মিত্র ও অংশীদাররা দ্রুত নিজেদের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়াক।’


চীনের সাম্প্রতিক আচরণকে ‘জাগরণ ঘণ্টা’ বলে উল্লেখ করেন হেগসেথ। তিনি বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে সাইবার হামলার মাধ্যমে জীবন বিপন্ন করা, প্রতিবেশী দেশগুলোকে হয়রানি করা এবং দক্ষিণ চীন সাগরের বিতর্কিত অঞ্চল দখল ও সামরিকীকরণের অভিযোগ তোলেন। চীন প্রায় পুরো দক্ষিণ চীন সাগর নিজেদের দাবি করলেও আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে সেই দাবি ভিত্তিহীন প্রমাণিত হয়েছে। এই জলপথ দিয়েই বিশ্বের প্রায় ৬০ শতাংশ সামুদ্রিক বাণিজ্য হয়।


সম্প্রতি চীনের সঙ্গে ফিলিপাইনের সংঘর্ষ বেড়ে গেছে, যা সিঙ্গাপুর সম্মেলনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এদিকে হেগসেথ যখন বক্তব্য দিচ্ছিলেন, ঠিক তখনই চীনা সামরিক বাহিনী ঘোষণা করে, তারা স্কারবোরো শোল এলাকায় ‘যুদ্ধ-প্রস্তুতির মহড়া’ চালাচ্ছে। ওই অঞ্চলটি চীন ও ফিলিপাইনের মধ্যে বিরোধপূর্ণ।


সিঙ্গাপুরে মার্কিন দূতাবাসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কেসি ম্যাসে সাংবাদিকদের বলেন, ‘চীন দক্ষিণ চীন সাগরে আগ্রাসন কয়েক বছরে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এই সম্মেলন হলো সেসব বিষয়ে পরস্পরের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনার সঠিক জায়গা।’ তবে চীন এবার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কাউকে সম্মেলনে পাঠায়নি; বরং পিপল’স লিবারেশন আর্মি ন্যাশনাল ডিফেন্স ইউনিভার্সিটি থেকে একটি প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছে।


হেগসেথ বলেন, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলই যুক্তরাষ্ট্রের ‘প্রথম অগ্রাধিকার’। তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, ‘চীন আমাদের বা আমাদের মিত্রদের আধিপত্যে নিতে পারবে না।’ তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্র ফিলিপাইন ও জাপানের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আরও জোরদার করেছে এবং ট্রাম্পের ভাষায় ‘তার প্রেসিডেন্সিতে চীন কখনোই তাইওয়ান আক্রমণ করতে পারবে না।’ তবে হেগসেথ জোর দিয়ে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের নিজস্ব সামরিক খরচ বাড়াতে হবে এবং দ্রুত প্রতিরক্ষা সক্ষমতা আধুনিক করতে হবে।


‘এশীয় মিত্রদের ইউরোপীয় দেশগুলোর দিকে তাকানো উচিত,’ বলেন তিনি। তিনি উল্লেখ করেন, জার্মানিসহ ন্যাটোর সদস্যরা এখন ট্রাম্পের নির্ধারিত লক্ষ্য অনুযায়ী জিডিপির পাঁচ শতাংশ প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। ‘নিরুৎসাহিতকরণের খরচ কম নয়,’ বলেন হেগসেথ।


সূত্র: এএফপি


এসজেড