ঢাকা | বঙ্গাব্দ

‘বন্ধু’ থাকার অঙ্গীকার মাস্কের

ইলন মাস্ক বলেন, প্রেসিডেন্টের বন্ধু ও উপদেষ্টা হিসেবে পাশে থাকার অপেক্ষায় রইলাম।
  • অনলাইন ডেস্ক | ৩১ মে, ২০২৫
‘বন্ধু’ থাকার অঙ্গীকার মাস্কের মাস্কের বিদায়ী বক্তব্য।

বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তি এলন মাস্ক শুক্রবার হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে এক ব্যতিক্রমী উপস্থিতির মধ্য দিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বিদায় জানিয়েছেন। বিদায়ের সময় তার ডান চোখে ছিল কালো জখমের দাগ (ব্ল্যাক আই), মাদক সেবনের অভিযোগ এড়িয়ে তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্টের ‘বন্ধু ও উপদেষ্টা’ হিসেবে পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছেন।


ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানায়, ‘সরকারি ব্যয়ের কাটছাঁট প্রধান’ হিসেবে মাস্কের ভূমিকা শেষ হওয়ায় রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাকে ‘অবিশ্বাস্য সেবা’র জন্য প্রশংসা করেন এবং হোয়াইট হাউসের একটি স্বর্ণের চাবি উপহার দেন। তবে ট্রাম্প জোর দিয়ে বলেন, মাস্ক আদতে বিদায় নিচ্ছেন না। বিগত চার মাস ধরে মাস্ক ‘ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি (ডগে)’ পরিচালনার মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে ব্যাপক ছাঁটাই, সংস্থা বন্ধ ও বিদেশি সাহায্যে ব্যাপক কাটছাঁট করেছেন।


ট্রাম্প বলেন, ‘তিনি ফিরে আসবেন বারবার।’ তিনি মাস্কের প্রশংসায় বলেন, ‘গত কয়েক প্রজন্মে সবচেয়ে ব্যাপক ও গুরুত্বপূর্ণ সরকারি সংস্কার কর্মসূচি পরিচালনা করেছেন তিনি।’ দক্ষিণ আফ্রিকান বংশোদ্ভূত মাস্ক কালো টি-শার্টে ‘ডগেফাদার’ লেখা এবং মাথায় ডগে টুপি পরে জানান, তিনি যে এক ট্রিলিয়ন ডলারের সাশ্রয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তার বাস্তবায়ন সময় সাপেক্ষ। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্টের বন্ধু ও উপদেষ্টা হিসেবে পাশে থাকার অপেক্ষায় রইলাম। তবে উপস্থিত সবার নজর পড়ে যায় মাস্কের ডান চোখের নীচের কালো দাগে।


‘ঘুষি মারো’ -


স্পেসএক্স ও টেসলার এই প্রতিষ্ঠাতা বলেন, তার পাঁচ বছর বয়সী ছেলে এই আঘাতের জন্য দায়ী। ৫৩ বছর বয়সী মাস্ক বলেন, ‘আমি ছোট এক্স-এর সঙ্গে মজা করছিলাম। বললাম, ‘দেখি, ঘুষি মারো আমার মুখে’। সে মেরে দিলো। পাঁচ বছর বয়সীর ঘুষিও যথেষ্ট জোরের হয়, বুঝলাম।’ এরপর তিনি থেমে যান। তবে মাদক সেবনের অভিযোগের বিষয়ে তিনি এড়িয়ে যান।


নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ২০২৪ সালের নির্বাচনী প্রচারে মাস্ক এত বেশি কেটামিন সেবন করেন যে তার মূত্রথলিতে সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়া তিনি এক্সটেসি, সাইকোঅ্যাকটিভ মাশরুমও সেবন করেন এবং সবসময় ওষুধের বাক্স সঙ্গে রাখতেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।


মিডিয়ার কড়া সমালোচক মাস্ক পাল্টা বলেন, ‘এটা কি সেই পত্রিকা না, যারা রাশিয়া গেট নিয়ে মিথ্যা রিপোর্টের জন্য পুলিৎজার পেয়েছিল?' তিনি আরও বলেন, ‘চলুন, এগিয়ে যাই। পরের প্রশ্ন।’ হোয়াইট হাউসও এই প্রতিবেদনকে গুরুত্ব দেয়নি।


ট্রাম্পের উপ-চিফ অব স্টাফ স্টিফেন মিলার বলেন, ‘যে মাদক নিয়ে আমরা চিন্তিত, তা হচ্ছে দক্ষিণ সীমান্ত দিয়ে আসা মেক্সিকোর মাদক।’ উল্লেখ্য, মিলারের স্ত্রী মাস্কের প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। এর আগে মাস্ক স্বীকার করেন, তিনি নেতিবাচক মানসিক অবস্থা মোকাবেলার জন্য কেটামিন সেবন করেন এবং এই সেবনে তার কাজের উপকার হয়েছে বলেও দাবি করেন।


‘হতাশ’ -


টেলিভিশনের জন্য সাজানো সর্বশেষ এই ওভাল অফিস নাটক ছিল মাস্কের বিদায়কে ইতিবাচকভাবে তুলে ধরার প্রয়াস। তবে মাস্ক বিদায় নিচ্ছেন একরকম অসন্তোষ নিয়ে। নিজের দায়িত্ব নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন এবং ট্রাম্পের ব্যয় পরিকল্পনারও সমালোচনা করেছেন।


প্রথমদিকে ট্রাম্পের ছায়াসঙ্গী হয়ে মাস্ক ছিলেন সবসময় প্রেসিডেন্টের সঙ্গে—এয়ার ফোর্স ওয়ান, মেরিন ওয়ান, হোয়াইট হাউস এমনকি মার-আ-লাগোতেও। সেই সময় তার ডগে সংস্থা ‘টেক ব্রো’দের নেতৃত্বে আদর্শিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিভাগে রীতিমতো ছাঁটাই অভিযান চালায়। তবে মাস্কের ২ ট্রিলিয়ন ডলারের সাশ্রয়ের লক্ষ্য পূরণ হয়নি। হোয়াইট হাউস বলছে, ডগে এখন পর্যন্ত ১৭০ বিলিয়ন ডলারের সাশ্রয় করেছে। স্বতন্ত্র ওয়েবসাইট ‘ডগে ট্র্যাকার’ বলছে, এই সাশ্রয় মাত্র ১২ বিলিয়ন ডলার। আটলান্টিক ম্যাগাজিন দাবি করেছে, প্রকৃত সাশ্রয় মাত্র ২ বিলিয়ন ডলার।


‘দ্রুত এগোও এবং যা কিছু থাকে তা ভেঙে দাও’—মাস্কের এই মন্ত্র তার মন্ত্রিসভার অনেক সহকর্মীর সঙ্গেই সাংঘর্ষিক ছিল। চলতি সপ্তাহেই তিনি বলেন, ট্রাম্পের প্রস্তাবিত বৃহৎ কর ও ব্যয় বিল ডগের কৃচ্ছ্রসাধনের বিপরীত, যা তাকে হতাশ করেছে। এদিকে মাস্কের নিজস্ব কোম্পানিগুলোতেও চাপ বেড়েছে। টেসলার শেয়ারহোল্ডাররা তাকে কাজে ফিরতে বলেছেন, কারণ বিক্রি হ্রাস পেয়েছে এবং ইভি কোম্পানির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলছে। অন্যদিকে স্পেসএক্সও একের পর এক রকেট ব্যর্থতায় পর্যুদস্ত।


সূত্র: এএফপি


এসজেড