ঢাকা | বঙ্গাব্দ

গৃহযুদ্ধে দেশছাড়া ৪০ লাখ সুদানি

যুদ্ধ অব্যাহত থাকলে মানুষের দেশত্যাগ আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ হবে।
  • অনলাইন ডেস্ক | ০৩ জুন, ২০২৫
গৃহযুদ্ধে দেশছাড়া ৪০ লাখ সুদানি মানুষ চরম আবহাওয়া, নিরাপত্তাহীনতা ও পানির সংকটে পড়েছে।

সুদানে ২০২৩ সালে গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ৪০ লাখেরও বেশি মানুষ দেশ ছেড়ে পালিয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। মঙ্গলবার সংস্থাটি এ সংখ্যাকে ‘ধ্বংসাত্মক মাইলফলক’ বলে অভিহিত করেছে। জেনেভা থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।


জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা- ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে, যুদ্ধ অব্যাহত থাকলে মানুষের দেশত্যাগ আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ হবে। সুদানের নিয়মিত সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে ক্ষমতার লড়াইয়ে গৃহযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। যুদ্ধে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে এবং দেশটিতে বিশ্বের বৃহত্তম ক্ষুধা ও বাস্তুচ্যুতির সংকট তৈরি হয়েছে।


জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে ইউএনএইচসিআরের মুখপাত্র ইউজিন বাইউন বলেন, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ৪০ লাখ মানুষ সুদান থেকে প্রতিবেশী দেশগুলোতে পালিয়ে গেছে। এ যুদ্ধ এখন তৃতীয় বছরে গড়িয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষতিকর বাস্তুচ্যুতি সংকটের ক্ষেত্রে এটি একটি ধ্বংসাত্মক মাইলফলক। তিনি বলেন, যদি এ সংঘাত অব্যাহত থাকে, তাহলে আরও হাজার হাজার মানুষ পালিয়ে যেতে থাকবে, যা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক স্থিতিশীলতাকে ঝুঁকির মুখে ফেলবে।


ইউএনএইচসিআরের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সোমবার পর্যন্ত ৪০ লাখ ৩ হাজার ৩৮৫ জন শরণার্থী, আশ্রয় প্রার্থী ও প্রত্যাবর্তনকারী হিসেবে সুদান থেকে পালিয়ে এসেছেন। এর মধ্যে মিশরে পালিয়েছে ১৫ লাখ। ১১ লাখের বেশি দক্ষিণ সুদানে গেছেন, তাদের মধ্যে আট লাখ প্রত্যাবর্তনকারী, যারা নিজেরাও সুদানে শরণার্থী ছিলেন।


- প্রতিবেশী শাদের ওপর চাপ -


ইউএনএইচসিআর পূর্ব শাদে একটি গভীরতর মানবিক জরুরি অবস্থা বর্ণনা করেছে, যেখানে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে সুদানি শরণার্থীর সংখ্যা তিনগুণেরও বেশি বেড়েছে। সংঘাত শুরু হওয়ার আগে দেশটি চার লাখের বেশি বেশি সুদানি শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়। এখন এ সংখ্যা ১২ লাখ ছাড়িয়েছে।


শাদে ইউএনএইচসিআরের প্রধান পরিস্থিতি সমন্বয়কারী দোসো প্যাট্রিস আহোয়ানসো বলেছেন, এটি তাদের প্রতি শাদের সাড়া দেওয়ার ক্ষমতার ওপর অস্থিতিশীল চাপ সৃষ্টি করছে। তিনি বলেন, সুদানের উত্তর দারফুর অঞ্চলে সহিংস হামলার পর এপ্রিলের শেষের দিক থেকে সীমান্ত পেরিয়ে অনুপ্রবেশ শুরু হয়েছে। বাস্তুচ্যুত শিবিরগুলোতেও হামলা হয়েছে।


আহোয়ানসো বলেন, মাত্র এক মাসেরও বেশি সময়ে শাদের ওয়াদি ফিরা ও এননেদি এস্ট প্রদেশে ৬৮ হাজার ৫৫৬ জন শরণার্থী এসেছে, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে প্রতিদিন গড়ে এক হাজার চারশ’ জন মানুষ সীমান্ত অতিক্রম করছে। তিনি বলেন, জরুরি সাড়াদান ‘বিপজ্জনকভাবে অপ্রতুল’, মানুষ ‘ভয়াবহ’ আশ্রয়স্থলে বাস করছে এবং হাজার হাজার মানুষ চরম আবহাওয়া, নিরাপত্তাহীনতা ও পানির সংকটে পড়েছে।


ইউএনএইচসিআর বলেছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সুদানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর ঘটনাগুলো নিয়ে উদ্বেগ এবং এর বিরুদ্ধে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। আহোয়ানসো বলেন, উল্লেখযোগ্য তহবিল বাড়ানো ছাড়া জীবন রক্ষাকারী সহায়তা সরবরাহ সম্ভব নয়। 


এ রক্তক্ষয়ী সংঘাত সুদানকে দুটি ভাগে বিভক্ত করেছে। একদিকে সেনাবাহিনী কেন্দ্র, পূর্ব ও উত্তরাঞ্চল দখল করেছে, অপরদিকে আধাসামরিক বাহিনী ও তাদের মিত্ররা দারফুরের প্রায় সমস্ত অংশ ও দক্ষিণের কিছু অংশ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে।


সূত্র: এএফপি 


এসজেড