মঙ্গলবার ব্যাংক অফ জাপানের (বিওজে) নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত ঘোষণার আগে ডলারের বিপরীতে ইয়েনের কিছুটা দরপতন হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ব্যাংকটি সুদের হার অপরিবর্তিত রাখলেও তাদের সরকারি বন্ড ক্রয়নীতিতে কিছু পরিবর্তন আনবে।
টোকিও থেকে এএফপি জানিয়েছে, বিশ্লেষক ও সংবাদমাধ্যমগুলো এ জানিয়েছে যে গত বছর বিওজে ঘোষণা করেছিল যে তারা ধীরে ধীরে বিশাল পরিমাণে সরকারি বন্ড কেনা কমিয়ে দেবে। এটি মূলত স্থিতিশীলতা ও দীর্ঘস্থায়ী মূল্যস্ফীতির অভাব মোকাবিলায় গৃহীত পরিমাণগত সহজিকরণ নীতি থেকে সরে আসার প্রচেষ্টার অংশ। তবে এখন সেই কমানোর গতি কিছুটা মন্থর করার চিন্তা করছে ব্যাংকটি।
কমনওয়েলথ ব্যাংক অব অস্ট্রেলিয়ার বিশ্লেষক ক্যারল কং বলেন, ‘বন্ড ক্রয় হ্রাসের গতি কমানো হলে সুদের হার তুলনামূলকভাবে নিচে থাকবে, যা চলমান বাণিজ্যিক অনিশ্চয়তার মধ্যে অর্থনীতিকে সহায়তা করবে।’ তিনি জানান,‘সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ‘সুপার লং’ মেয়াদি জাপানি সরকারি বন্ডের মুনাফা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যাওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার জল্পনা বেড়েছে।’ মঙ্গলবার সকালের লেনদেনে ডলারের বিপরীতে ইয়েন ১৪৫ ছাড়িয়ে যায়, যেখানে সোমবার তা ছিল প্রায় ১৪৪.৩০ ইয়েন।
এমইউএফজি-এর এর লি হার্ডম্যান বলেন, ‘ইয়েনের সাম্প্রতিক দুর্বলতা আংশিকভাবে বাজারের মাঝে বিওজে’র সতর্ক অবস্থানের প্রত্যাশাকেই প্রতিফলিত করছে। পাশাপাশি, মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতের জের ধরে জাপানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে।’
ব্যাংক অব জাপানের প্রধান সুদের হার বর্তমানে প্রায় ০.৫ শতাংশ, যা মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের ৪.২৫ু৪.৫ শতাংশের তুলনায় অনেক কম। গত বছর বিওজে তার দীর্ঘদিনের শিথিল নীতি থেকে সরে এসে ধীরে ধীরে ঋণ ব্যয় বাড়ানো শুরু করে। কমনওয়েলথ ব্যাংক অব অস্ট্রেলিয়ার বিশ্লেষক ক্যারল কং আরও বলেন, ‘মার্কিন বাণিজ্য নীতি নিয়ে আরও স্পষ্টতা না আসা পর্যন্ত ব্যাংকটি নতুন করে সুদ বাড়াবে না বলেই ধারণা।’
জাপান, যা যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান মিত্র ও বৃহৎ বিনিয়োগকারী, ট্রাম্প প্রশাসনের আরোপিত ১০ শতাংশ সাধারণ শুল্কের পাশাপাশি গাড়ি, ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর অতিরিক্ত শুল্কের আওতায় রয়েছে। চলতি বছরের এপ্রিলের শুরুতে ট্রাম্প জাপানের ওপর ২৪ শতাংশ ‘পারস্পরিক’ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিলেও পরে তা স্থগিত করেন, যেমনটি অন্যান্য দেশেও করেন। কানাডায় অনুষ্ঠিত জি৭ শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক শেষে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা জানান, মার্কিন বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে এখনও কোনও অগ্রগতি হয়নি।
সুমি ট্রাস্ট-এর বিশ্লেষক কাতসুতোশি ইনাডোমে বলেন, ‘আমরা এখনও বিশ্বাস করি, ব্যাংকটি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে সুদের হার বাড়াতে পারে, কারণ তারা ধাপে ধাপে নীতি স্বাভাবিকীকরণের পথে অঙ্গীকারবদ্ধ।’ তিনি আরও বলেন, দেশীয় চাহিদা স্থিতিশীল থাকবে বলে আমাদের ধারণা এবং অর্থনৈতিক অবস্থা আরও উন্নত হলে বিওজে তখন সুদের হার বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
সূত্র: এএফপি
এসজেড