ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের জোফা এবং ভারজাকানের মধ্যে অবস্থিত সানগুন নামক একটি তামার খনির কাছে দেশটির প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বহনকারী হেলিকপ্টারটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। তবে এখন পর্যন সেই হেলিকপ্টারের সন্ধান মেলেনি বলে জানিয়েছে ইরানের রেড ক্রিসেন্ট।
রোববার (১৯ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।
রোববারের (১৯ মে) এই দুর্ঘটনার পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু গুজব ছড়িয়ে পড়ে। কেউ কেউ জানান, আছড়ে পড়া হেলিকপ্টারটিতে রাইসি ছিলেন না। আবার অনেকে দাবি করেন, প্রেসিডেন্টের হেলিকপ্টার থেকে হেডকোয়ার্টারে যোগাযোগ করা হয়েছে।
তবে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা জানিয়েছে, ইরানি প্রেসিডেন্টের হেলিকপ্টারে না থাকা এবং হেলিকপ্টার থেকে যোগাযোগ করার যে তথ্য ছড়ানো হয়েছে— সেগুলোর কোনোটিই সত্যি নয়।
কিন্তু যেটি সত্য সেটি হলো রাইসি এখনো নিখোঁজ রয়েছেন এবং তাকে খুঁজে পেতে অভিযানের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
ইরানের রেড ক্রিসেন্ট বলেছে, এই অঞ্চলে তারা ৪০টি পৃথক দল মোতায়েন করেছে... এখন পর্যন্ত দলগুলো এলাকায় পৌঁছেছে, তবে হেলিকপ্টারটি ঠিক কোথায় বিধ্বস্ত হয়েছে তা নির্দিষ্ট করা যায়নি।
এর কারণ হিসেবে বিরূপ আবহাওয়ার কথা জানিয়েছে রেড ক্রিসেন্ট।
আলজাজিরা আরও জানিয়েছে, হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা নিয়ে ইরানেই ধোঁয়াশা চলছে। কেউ স্পষ্টভাবে কোনো তথ্য জানাচ্ছে না।
হেলিকপ্টারটি পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের একটি ঘন বন ও পাহাড়ি এলাকায় আছড়ে পড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ওই জায়গাটি একটি প্রত্যন্ত অঞ্চল হওয়ায় সেখানে উদ্ধারকারীদের পৌঁছাতে কয়েক ঘণ্টা সময় লাগতে পারে।
এর আগে, পূর্ব আজারবাইজানে সফর করার সময় ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির হেলিকপ্টারটি দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে জানিয়েছে ইরানের বার্তাসংস্থা তাসনিম।
আজারবাইজানের সীমান্তবর্তী এলাকায় একটি বাঁধ উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যান প্রেসিডেন্ট রাইসি। সেখান থেকে ফেরার সময় ভারজাকান এলাকায় হেলিকপ্টারটি অবতরণের সময় বিধ্বস্ত হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির সঙ্গে হেলিকপ্টারে সৈয়দ মোহাম্মদ-আলি আল-হাশেম, তাবরিজের জুমার নামাজের ইমাম এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমিরাবদুল্লাহিয়ানও ছিলেন বলে জানা গেছে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিকে বহনকারী একটি হেলিকপ্টার আজারবাইজান প্রদেশে দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়েছে। তবে হেলিকপ্টারে থাকা রাইসির কয়েকজন সঙ্গী ‘নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের সাথে যোগাযোগ করতে সক্ষম হয়েছেন।’
আরও বলা হয়েছে, হেলিকপ্টারের অনুসন্ধানে এরই মধ্যে অভিযান শুরু হয়েছে। কয়েকটি উদ্ধারকারী দল দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন।
দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আরও জানিয়েছে, এই বহরে তিনটি হেলিকপ্টার ছিল। যার মধ্যে দুটি নিরাপদে ফিরে আসে।
যে হেলিকপ্টারটি আছড়ে পড়েছে সেটিতে প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ছাড়াও ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেন আমিরাব্দুল্লাহিয়ান এবং আয়াতুল্লাহ মোহাম্মদ আলী আলি-হাসেম। তিনি ওই অঞ্চলে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার প্রতিনিধি ছিলেন।
জ্বালানিমন্ত্রী আলী আকবর মেহরাবিয়ান এবং আবাসন ও পরিবহণমন্ত্রী মেহেরদাদ বাজারপাস অন্য দুটি হেলিকপ্টারে ছিলেন। যেগুলো নিরাপদে ফিরে এসেছে।
সূত্র: আল জাজিরা