ঢাকা | বঙ্গাব্দ

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট চরমে, শিক্ষার মান নিয়ে শঙ্কা

দেশের প্রাথমিক শিক্ষায় প্রধান ও সহকারী শিক্ষকের বড় ধরনের সংকট দেখা দিয়েছে।
  • নিজস্ব প্রতিবেদক | ১৫ জুলাই, ২০২৫
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট চরমে, শিক্ষার মান নিয়ে শঙ্কা ছবি : সংগৃহীত।

দেশের প্রাথমিক শিক্ষায় প্রধান ও সহকারী শিক্ষকের বড় ধরনের সংকট দেখা দিয়েছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ৫২ শতাংশে নেই প্রধান শিক্ষক, আর ২৪ হাজারের বেশি সহকারী শিক্ষকের পদও শূন্য রয়েছে। এতে শিক্ষা ও প্রশাসন উভয়দিকেই ব্যাঘাত ঘটছে—বিশেষ করে প্রান্তিক অঞ্চলের শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।


শূন্য ৩৪ হাজার প্রধান শিক্ষকের পদ


প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অনুমোদিত পদ রয়েছে ৬৫ হাজার ৪৫৭টি। এর মধ্যে ৩৪ হাজার ১০৬টি পদ শূন্য, যা মোট পদের ৫২ শতাংশের বেশি। যদিও ১৩ হাজার ৬৭৫ জন সহকারী শিক্ষককে চলতি দায়িত্বে প্রধান শিক্ষক হিসেবে কাজ করানো হচ্ছে, তবু স্থায়ী সমাধান হচ্ছে না।


সহকারী শিক্ষকের ঘাটতি ২৪ হাজার


৩ লাখ ৫৫ হাজার ৬৫৩টি সহকারী শিক্ষকের পদের মধ্যে ২৪ হাজার ৫৩৬টি এখনও শূন্য। এই ঘাটতির কারণে শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে।


নিয়োগে আইনি জটিলতা ও ধীরগতি


প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি ও সহকারী শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে মামলাজট এবং কোটাবিধি সংশোধনের কারণে। নতুন নিয়োগবিধি সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র।


মাঠপর্যায়ে চরম দুর্ভোগ


নেত্রকোনার ১ হাজার ৩১৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৫৯৯টি বিদ্যালয়ে নেই প্রধান শিক্ষক। সহকারী শিক্ষকরা অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। অনেক অভিভাবক জানিয়েছেন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকেরা অনেক সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। এতে পড়াশোনার মানও কমে যাচ্ছে।


প্রধান শিক্ষকের মর্যাদা নিয়ে অসন্তোষ


প্রধান শিক্ষকেরা এখন ১১তম গ্রেডে থাকলেও আদালতের রায় অনুযায়ী তাঁদের ১০ম গ্রেড ও দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড পদমর্যাদা পাওয়ার কথা। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় কেবল রিটকারী ৪৫ জনকে এই সুবিধা দিতে রাজি হয়েছে। এতে বাকি প্রধান শিক্ষকরা ক্ষুব্ধ এবং বৈষম্যের আশঙ্কায় আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।


বিশ্লেষকদের মত


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. মাহবুব মোর্দেশ বলেন, “প্রায় অর্ধেক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক না থাকাটা শিক্ষার গুণগত মানে বড় ধাক্কা। এছাড়া সহকারী শিক্ষকের ঘাটতিও শিক্ষার্থীদের ক্ষতিগ্রস্ত করছে—বিশেষ করে প্রান্তিক ও পিছিয়ে পড়া এলাকায়।”


তিনি আরও বলেন, “শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেতৃত্বহীনতা ও পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকলে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা মৌলিক দক্ষতায় পিছিয়ে পড়বে। এর খেসারত দিতে হবে গোটা জাতিকে।”


thebgbd.com/NA