ঢাকা | বঙ্গাব্দ

১৮ জুলাই: নিভে যাওয়া আন্দোলনে আগুন জ্বালায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক ছাত্র আন্দোলন যখন সরকারি দমন-পীড়নে প্রায় স্তিমিত, ঠিক সেই সময় ফিনিক্স পাখির মতো উঠে আসে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
  • নিজস্ব প্রতিবেদক | ১৮ জুলাই, ২০২৫
১৮ জুলাই: নিভে যাওয়া আন্দোলনে আগুন জ্বালায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছবি : সংগৃহীত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক ছাত্র আন্দোলন যখন সরকারি দমন-পীড়নে প্রায় স্তিমিত, ঠিক সেই সময় ফিনিক্স পাখির মতো উঠে আসে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ১৫ জুলাই ছাত্রলীগ ও পুলিশের নারকীয় হামলার পরও থেমে যায়নি ছাত্রসমাজ। আন্দোলনের স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে পড়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। তবে ১৭ জুলাই অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণা ও ব্যাপক গ্রেপ্তার অভিযানে প্রতিবাদের ধারা বেশ খানিকটা স্তিমিত হয়ে পড়ে।


এই চরম সংকটময় মুহূর্তেই রাজপথে দৃঢ় অবস্থান নেয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ১৮ জুলাই রাজধানীর রামপুরা, বাড্ডা, প্রগতি সরণীসহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভে ফেটে পড়ে তারা। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় পুরো এলাকা। প্রাণ হারান একাধিক শিক্ষার্থী। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঢুকে পড়ে।


ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী জানান, "সন্ধ্যা ৬টার দিকে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেওয়ার মাত্র ২০ মিনিটেই ২০০ জনের বেশি শিক্ষার্থী জড়ো হয়ে যায়। সেখান থেকেই আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে রওনা দেই।" আরেক শিক্ষার্থী বলেন, “টিয়ার শেল ছুড়লে আমরা ক্যাম্পাসের তালাবদ্ধ গেট ভেঙে ভেতরে আশ্রয় নিই।”


ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর হামলার খবর পেয়ে এগিয়ে আসে ইস্টওয়েস্টসহ আশেপাশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাদের প্রতিরোধে পিছু হটতে বাধ্য হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরে হেলিকপ্টারে করে নিরাপত্তা সদস্যদের সরিয়ে নিতে হয়।


ইস্টওয়েস্টের এক শিক্ষার্থী বলেন, "পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়ার পর ঢাকার রাজপথে আন্দোলনের প্রধান শক্তি হয়ে ওঠে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।"


একজন নারী শিক্ষার্থী বলেন, “আন্দোলনটা যখন নিভু নিভু হয়ে যাচ্ছিল, তখন ১৮ জুলাই আমরা আবার আগুন জ্বালিয়ে তুলি।”


এই আন্দোলনে যুক্ত হয় নর্থ সাউথ, এআইইউবি, ইউআইইউ, নর্দান, ইউল্যাব, ড্যাফোডিল, কানাডিয়ান, স্টামফোর্ডসহ প্রায় সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। জানা যায়, এসব সংঘর্ষে প্রাণ হারান অন্তত ৩০ জন শিক্ষার্থী।


তাদের একজন মারারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাকিল পারভেজ। ২৩ বছর বয়সী শাকিল ১৮ বার রক্ত দিয়েছেন মানুষের জন্য। ১৮ জুলাই পুলিশের গুলিতে তার জীবনপ্রদীপ নিভে যায়।


শাকিলের বাবা বলেন, “১৮ বার রক্ত দিয়েছিল ছেলেটা। ১৮ জুলাই সে নিজের শেষ রক্তটুকুও দিল জাতির জন্য। জানতাম ফ্যাসিবাদ রক্ত ছাড়া যাবে না, কিন্তু নিজের ছেলের রক্ত যাবে সেটা কখনো ভাবিনি।”


বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোনো হিসাব মেলাতে নামেনি। তাদের আত্মত্যাগ গণঅভ্যুত্থানের পাতায় রক্তের অক্ষরে লেখা এক অনন্য ইতিহাস।


thebgbd.com/NA