ঢাকা | বঙ্গাব্দ

আল জাজিরার অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এলো হাসিনার নির্মমতা-পাশবিকতা

‘হাসিনা-জুলাইয়ের ৩৬ দিন’ শীর্ষক প্রামাণ্যচিত্রে শেখ হাসিনার গোপন কথোপকথনের রেকর্ডিং প্রকাশ করে আল জাজিরা দাবি করেছে, তিনি হেলিকপ্টার থেকে গুলিবর্ষণসহ কঠোর তৎপরতার নির্দেশনা দিয়েছিলেন।
  • নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৪ জুলাই, ২০২৫
আল জাজিরার অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এলো হাসিনার নির্মমতা-পাশবিকতা ছবি : সংগৃহীত।

গত বছর ২০২৪ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশে ছাত্র-জনতা আন্দোলন দমন করতে সরাসরি গুলি চালানোর ও প্রাণহানির নির্দেশ দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা—এমন তথ্য উঠে এসেছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে।

‘হাসিনা-জুলাইয়ের ৩৬ দিন’ শীর্ষক প্রামাণ্যচিত্রে শেখ হাসিনার গোপন কথোপকথনের রেকর্ডিং প্রকাশ করে আল জাজিরা দাবি করেছে, তিনি হেলিকপ্টার থেকে গুলিবর্ষণসহ কঠোর তৎপরতার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। রেকর্ডিং করা হয় তাঁর আমলের গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে, যারা পরবর্তীতে এই দলিল ফাঁস করে।

প্রকাশিত ফোনালাপে ২০২৪ সালের ১৮ জুলাই শেখ হাসিনা সাবেক ঢাকা দক্ষিণের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপশকে বলেন, “আমার নির্দেশ তো আগেই দেয়া হয়ে গেছে। আমি তো পুরোপুরি ওপেন অর্ডার দিয়ে দিয়েছি। এখন ওরা মারবে, যেখানে পাবে সেখানে গুলি করবে... আমি তো এতদিন থামিয়ে রেখেছিলাম। আমি ছাত্রদের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবছিলাম।”

অন্য এক রেকর্ডিংয়ে তিনি বলেন, “যেখানে তারা কোনো জটলা দেখছে, সেটা উপর থেকে- এখন তো উপর থেকেই হচ্ছে এরই মধ্যে কয়েক জায়গায় শুরু হয়ে গেছে। শুরু হয়ে গেছে। কিছু সরেছে।”

আন্দোলনের অন্যতম প্রতীক ছাত্র আবু সাঈদের হত্যাকাণ্ড নিয়ে বেশ বিতর্ক ও কৌশল চালানো হয়েছে। আল জাজিরা জানায়, পোস্টমর্টেম রিপোর্ট পাঁচবার পরিবর্তন করা হয়। এক চিকিৎসক বলেন, পুলিশের চাপে বারবার রিপোর্ট বদলাতে বাধ্য হন তিনি, আর সরকারের শীর্ষ মহল থেকেই সর্বোচ্চ স্তরে কারসাজি চালানো হয়েছে। পাশাপাশি শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকেও ফোনে রিপোর্ট সংগ্রহের নির্দেশ দিতে শোনা গেছে।

আল জাজিরার অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, নিহত আবু সাঈদের পরিবারকে চাপ দিয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করানো হয়। হত্যাকাণ্ডের পর তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন এবং রাষ্ট্রের হুমকি-প্রভাবের মুখে সাক্ষাতে বাধ্য হন। মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ ঢাকতেই এমন কৌশল নেওয়া হয়েছে বলে গণমাধ্যমটি উল্লেখ করেছে।

তদন্তে আরও জানা যায়, তৎকালীন সরকার ইন্টারনেট বন্ধ রেখে আন্দোলনের ভয়াবহ ছবি-ভিডিও বিশ্বমিডিয়া থেকে গোপন রাখার চেষ্টা করেছিল। প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুলাই আন্দোলনের মাত্র তিন সপ্তাহে প্রায় ১৫০০ জন নিহত হন এবং ২৫ হাজারের বেশি আহত। নিরস্ত্র জনতার ওপর ছোড়া হয় প্রায় ৩০ লাখ রাউন্ড গুলি।

আল জাজিরার এই অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ইতিহাসে আলোড়ন সৃষ্টির সম্ভাবনা রাখে।

thebgbd.com/NA