ঝিনাইদহ-৪ আসনের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের দলীয় সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজিম আনার খুনের ঘটনা তদন্তে ভারতীয় পুলিশের একটি দল আজই ঢাকায় আসবে।
বৃহস্পতিবার (২৩ মে) বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান জানান, বেলা ২টা নাগাদ ভারতীয় পুলিশের দুইজন সদস্য আজই ঢাকায় পৌঁছাবেন। তারা এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও পরিবারের সঙ্গে কথা বলবেন।
এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বাংলাদেশে গ্রেফতার সন্দেহভাজন তিন আসামিকেও জিজ্ঞাসাবাদ করবেন বলে জানান তিনি।
এমপি আনার ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার নিউটাউনের সাঞ্জিভা গার্ডেনের বি ইউ ব্লকের ৫৬ নম্বর ফ্ল্যাটে পরিকল্পিত ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। শ্বাসরোধে হত্যার পর মরদেহ টুকরো টুকরো করে ট্রলিব্যাগে ভরে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে ফেলে দেয় হত্যাকারীরা।
এ ঘটনায় গতকাল (২২ মে) এমপি আনারের মেয়ে ডরিন বাদী হয়ে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় একটি মামলা করেছেন। একইসঙ্গে কলকাতায়ও একটি মামলার প্রস্তুতি চলছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের সূত্র ধরে এমপি আনারকে হত্যার পরিকল্পনা করেন তার বন্ধু আক্তারুজ্জামান শাহীন।
কলকাতার একটি সূত্র জানায়, যে ফ্ল্যাটে এমপি আনারকে খুন করা হয়েছে, ১৩ মে সেখানে দুজন পুরুষ ও একজন নারী প্রবেশ করেন। একদিন অবস্থানের পর ফ্ল্যাট থেকে বের হয়ে আসেন এক পুরুষ ও এক নারী। ধারণা করা হচ্ছে, ওই নারীই শিলাস্তি রহমান। ১৩ মে তিনি আমানুল্লাহ ও এমপি আনারের সঙ্গে ফ্ল্যাটে ঢুকে থাকতে পারেন।
ঢাকার ডিবি সূত্রও বলছে, তাদের ধারণা ওই নারীই শিলাস্তি রহমান। আর শিলাস্তিকে হানি ট্র্যাপ হিসেবে ব্যবহার করা হতে পারে। কারণ তিনি ১৫ মে বিমানে দেশে ফেরেন। তার সঙ্গে দেশে ফেরেন মূল কিলার আমানুল্লাহ। ধারণা করা হচ্ছে, হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান শাহীন এমপি আনারকে কলকাতা নিতে এ তরুণীকেই ফাঁদ হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। কারণ, সব পরিকল্পনা করে শাহীন ১০ মে দেশে ফিরে এলেও শিলাস্তি থেকে যান কলকাতায়।
এদিকে গতকাল (২২ মে) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান জানান, আনোয়ারুল আজিম কলকাতায় খুন হয়েছেন। এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যমতে, বাংলাদেশিরাই এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযোগে বাংলাদেশে সৈয়দ আমানুল্লাহ আমান, শিলাস্তি রহমান ও ফয়সাল আলী ওরফে সাজি নামে তিনজনকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।
গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, চাপাতির মুখে আনারকে জিম্মি করে আমান ও তার সহযোগী ফয়সাল, মোস্তাফিজ, সিয়াম ও জিহাদ। একপর্যায়ে তাকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করে। এরপর শাহীনের পরামর্শ মতো লাশ গুম করতে এমপি আনারকে কেটে টুকরো টুকরো করা হয়।
দুটি ট্রলিব্যাগে ভরে তা অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায় হত্যাকাণ্ডের সহযোগীরা। এছাড়া, অবস্থান শনাক্তে পুলিশকে বিভ্রান্ত করতে আনারের ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোন নিয়ে, ভারতের বিভিন্ন স্থানে যায় আমানের দুই সহযোগী। হত্যাকাণ্ডে এক নারীও জড়িত বলে তথ্য পেয়েছে পুলিশ। তবে আমান ও তার সহযোগিরা কত টাকার চুক্তিতে এমপি আনারকে কিলিংশ মিশনে অংশ নিয়েছে তাও খতিয়ে দেখছে দুই দেশের তদন্ত ও গোয়েন্দা সংস্থা।