ঢাকা | বঙ্গাব্দ

পাপুয়া নিউগিনিতে ভূমিধস, শতাধিকের ‘জীবন্ত কবর’

মুলিতাকার আশপাশের গ্রামের লোকজন জানান, শিশুসহ ৮০ থেকে ১০০ জনকে দাফন করা হতে পারে। কর্তৃপক্ষ এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে মৃতের সংখ্যা জানাতে পারেনি।
  • | ২৪ মে, ২০২৪
পাপুয়া নিউগিনিতে ভূমিধস, শতাধিকের ‘জীবন্ত কবর’ ভূমিধসে অন্তত ৫০টি বাড়ি ধ্বংস হয়েছে

প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দ্বীপরাষ্ট্র পাপুয়া নিউগিনির উত্তরাঞ্চলের একটি প্রত্যন্ত গ্রামে বড় আকারে ভূমিধসে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার দিবাগত রাত ৩ টার দিকে দেশটির এঙ্গা প্রদেশের পোরগেরা-পাইলা জেলার কাওকালাম গ্রামে ঘটেছে এই দুর্ঘটনা।

কাওকালাম গ্রামের বাসিন্দা নিঙ্গা রোলে টেলিফোনে রয়টার্সকে জানান, ভূমিধসে অন্তত ৫০টি বাড়ি ধ্বংস হয়েছে। গভীর রাতে সবাই ঘুমিয়েছিলেন, তাই দুর্যোগের সময় অধিকাংশই বাড়ি থেকে বের হতে পারেননি। ফলে, এই ৫০টি বাড়িতে বসবাসকারী লোকজনদের মধ্যে অল্প কয়েকজন বাদে বাকি সবার মৃত্যু হয়েছে জীবন্ত অবস্থায় মাটিচাপা পড়ে।

কাওকালাম গ্রামটির পাপুয়া নিউগিনির এঙ্গা প্রদেশে, রাজধানী পোর্ট মোরেসবি থেকে ৪০০ কিলোমিটার উত্তরে। নিঙ্গা রোলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু ছবি ও ভিডিও ফুটেজ আপলোড করেছেন। সেসব ফুটেজে দেখা গেছে, লোকজন ধ্বংস্তূপ থেকে পাহাড় ও গাছের শেকড় বেয়ে ওপরে ওঠার চেষ্টা করছেন।

রয়টার্সকে রোলে বলেন, ‘গ্রামের যে এলাকায় ভূমিধস হয়েছে, সেটি খুব দুর্গম। ওই এলাকার প্রায় চারপাশ ঘিরে পাহাড় আর বড় বড় গাছ। ফলে যারা বেঁচে আছে এখনও, তাদের সেখান থেকে বের করে আনা কঠিন।’

পাপুয়া নিউগিনির  প্রধানমন্ত্রী জেমস মারাপে শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘ভূমিধস কবলিত এলাকাটি দুর্গম এবং সেখানে উদ্ধার তৎপরতা চলাতে আমরা ইতোমধ্যে দুর্যোাগ মোকাবিলা বাহিনী, পুলিশ ও সেনাদের সমন্বয়ে একটি যৌথ দল গঠন করেছি। এছাড়া মাটির স্তূপ থেকে মরদেহ উদ্ধার, সৎকার ও ত্রাণ তৎপরতা পরিচালনা করতে সরকারি কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

মুলিতাকার আশপাশের গ্রামের লোকজন জানান, শিশুসহ ৮০ থেকে ১০০ জনকে দাফন করা হতে পারে। কর্তৃপক্ষ এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে মৃতের সংখ্যা জানাতে পারেনি।

এঙ্গার প্রাদেশিক প্রশাসক স্যান্ডিস সাকা বলেছেন, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয়ে পুলিশ এবং স্বাস্থ্যকর্মীসহ সংশ্লিষ্টদের একটি জরুরি দল সেখানে পাঠানো হয়েছে।

সাকা বলেন, ‘বিধ্বংসী এই ভূমিধসকে নজিরবিহীন প্রাকৃতিক বিপর্যয় হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে, যা আজ ভোরের দিকে ঘটে। এতে মানুষের জানমালের যথেষ্ট ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, যার পরিমাণ এখনও জানা যায়নি।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এই ভূমিধসের ছবিতে দেখা গেছে, ভূমিধসের ফলে এর ধ্বংসাবশেষ হিসেবে বিশাল বিশাল পাথর ও গাছের গুঁড়ি সব জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী এলিজাবেথ লারুমা অস্ট্রেলিয়ার মিডিয়াকে বলেন, পাহাড়ের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তিনি দেখেছেন যে, ভূমিধসের ফলে গ্রামের বাড়িঘরগুলো ধ্বংস হয়ে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে।

লারুমা এবিসিকে বলেন, ‘এটি যখন ঘটেছে তখন ভোর ছিল, সবাই ঘুমিয়ে ছিল। আর এর মধ্যেই পুরো গ্রাম তলিয়ে গেছে। যা অনুমান করতে পারি, ১০০-এর বেশি মানুষ মাটির নিচে চাপা পড়েছে।’

এই ভূমিধসের ফলে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। ফলে শহরের নিজস্ব জ্বালানি এবং পণ্য সরবরাহ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন লারুমা।

কাওকালাম গ্রামের কাছেই পোরগেরা স্বর্ণ খনি। সেই খনির একাংশও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ভূমিধসের কারণে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, স্বর্ণ আহরণের জন্য খনি অঞ্চলে অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়িই এ ধসের কারণ।

সূত্র : রয়টার্স