সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজীম আনার কলকাতায় খুন হয়েছেন,ভারত ও বাংলাদেশের পুলিশ এমনটাই জানিয়েছে। তবে খুনের ঘটনার বেশ কয়েক দিন অতিবাহিত হলেও এই রহস্যের কোনো কূল-কিনারা করতে পারেনি দুই দেশের পুলিশ। রাত-দিন এক ঘরে তল্লাশি ও উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করলেও তার লাশ বা কথিত লাশের খণ্ডিত অংশের সন্ধান মেলেনি।
এত দিন পার হলেও লাশের সন্ধান না পাওয়ায় এখন প্রশ্ন উঠছে আনারের লাশ কোনো দিন না পাওয়া গেলে কী হবে? মৃত্যু সনদ বা ডেথ সার্টিফিকেট কীভাবে ইস্যু করবে দুই দেশের কর্তৃপক্ষ? যদি মৃত্যু সনদ পেতে বিলম্ব হয় তাহলে ঝিনাইদহ-৪ আসনের উপনির্বাচনের কী হবে?
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, এমপি আনারের লাশ বা খণ্ডিত অংশ না পাওয়া গেলে ময়নাতদন্ত করা যাবে না। এর মানে হলো আত্মীয়দের কাছে এমপি আনারের মৃত্যু সনদ দেয়া হবে না। শুধু তাই নয়, মৃত্যু সনদ পেতে পশ্চিমবঙ্গ সিআইডিকেও অন্তত সাত বছর অপেক্ষা করতে হবে।
এ বিষয়ে কলকাতার প্রবীণ আইনজীবী অ্যাডভোকেট নবকুমার ঘোষ বলেছেন, কোনো মৃত ব্যক্তির মরদেহ পাওয়া না গেলে মৃত্যু সনদপত্র জারি করতে সাত বছর সময় লাগতে পারে। এটাই ভারতের প্রতিষ্ঠিত আইন। সাত বছরের অপেক্ষা করতেই হবে। মরদেহ নেই, মৃত্যু সনদও নেই।
তবে বিষয়টি এখানেই সুরাহা হবে না বলেই জানিয়েছেন এই প্রবীণ আইনজীবী। তিনি বলেন, সাত বছর শেষ হলে কলকাতার সিআইডির সামনে মাত্র একটি পথ খোলা থাকবে। তাদের ভারতীয় সংবিধানের ২২৬ ধারার অধীনে কলকাতা হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করতে হবে। এই রিট পিটিশন দায়েরের পর আদালত প্রশাসনের একজন শীর্ষ কর্মকর্তার মাধ্যমে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিতে পারেন। তদন্ত শেষ হলে আদালত একটি আদেশ জারি করতে পারেন, যা এমপি আনারের মৃত্যু সনদপত্র হিসেবে কাজ করবে। এরপর বিষয়টি ভারতীয় গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রচার করতে হবে।
এ দিকে আনারের মরদেহ না মেলায় ঝিনাইদহ-৪ আসন শূন্য ঘোষণা করা নিয়েও আইনি জটিলতার মুখে পড়েছে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ। সাধারণত কোনো এমপির মৃত্যুর সপ্তাহ খানেকের মধ্যে তার আসন শূন্য ঘোষণা করে সংসদ সচিবালয়। এরপর উপনির্বাচনের তোড়জোড় শুরু করে নির্বাচন কমিশন। তবে এমপি আনারের ক্ষেত্রে এখনো এমনটি হয়নি।
প্রসঙ্গত, গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে চুয়াডাঙ্গার দর্শনার গেদে সীমান্ত দিয়ে ভারতে যান এমপি আনার। ওঠেন পশ্চিমবঙ্গে বরাহনগর থানার মণ্ডলপাড়া লেনে গোপাল বিশ্বাস নামে এক বন্ধুর বাড়িতে। পরদিন ডাক্তার দেখানোর কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন।
এরপর থেকেই রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ আনোয়ারুল আজীম। গত বুধবার (২২ মে) হঠাৎ খবর ছড়ায়, কলকাতার পার্শ্ববর্তী নিউটাউন এলাকায় বহুতল সঞ্জীবা গার্ডেনস নামে একটি আবাসিক ভবনের বিইউ ৫৬ নম্বর রুমে আনোয়ারুল আজীম খুন হয়েছেন। ঘরের ভেতর পাওয়া গেছে রক্তের ছাপ। তবে ঘরে মেলেনি মরদেহ।