সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যায় জড়িত কসাই জিহাদ হাওলাদারকে দিয়ে ‘টিআই প্যারেড’ বা মহড়া পরিচালনা করেছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। এ সময় পশ্চিমবঙ্গ সিআইডি ও নিউটাউন থানার পুলিশ কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
এমপি আনারের খুনের রহস্য উদ্ঘাটনে গত রোববার (২৬ মে) হারুন অর রশীদের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি দল কলকাতায় যায়। কিন্তু তদন্তের অংশ হিসেবে ডিবি প্রধানের দ্বিতীয় দিনের সফরও ছিল বৃষ্টি বিঘ্নিত।
আজ সোমবার (২৭ মে) বেলা পৌনে ১১টায় গাড়ি বহর নিয়ে কলকাতার নিউটাউনের সাঞ্জিভা গার্ডেন্সে প্রবেশ করেন ডিবির হারুন। আবাসনের বি-ইউ ভবনের বেজমেন্ট দিয়ে আনার হত্যায় জড়িত জিহাদকে নিয়ে আসে সিআইডি।
এরপর এমপি আনারকে যে ফ্ল্যাটে হত্যা করা হয় বলে উল্লেখ করা হচ্ছে, কসাই জিহাদকে সেখানে নিয়ে একটি চেয়ারে বসিয়ে রেখে জেরা করেন হারুন। শুরু হয় হত্যাকাণ্ডের টিআই প্যারেড বা মহড়ার কাজ। চলে প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে।
মহড়ায় জিহাদ দেখান, কী নৃশংসভাবে হত্যার পর এমপি আনারের দেহ কুচি কুচি করে কাটা হয়।
এরপর ঝড়-বৃষ্টির মধ্যেই জিহাদকে নিয়ে গোয়েন্দাদের গাড়ি বহর এগিয়ে চলে হত্যাকাণ্ড থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে বাগজোলা খালের দিকে। জিহাদের দেয়া তথ্যানুযায়ী, খালে কিছু সময় থাকার পর, সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ডিবি প্রধান। জানান বেশ কিছু তথ্য পাওয়ার কথা।
তিনি বলেন,
আমরা দুবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। অভিযুক্ত জিহাদকে টিআই প্যারেডের জন্য ঘটনাস্থলে নিয়ে গেছি। জিহাদকে নিয়ে আজ ফের বাগজোলা খালে যেখানে লাশ ফেলা হয়েছে বলে অভিযোগ, সেখানে এসেছি। আমাদের আশা স্বল্প সময়ের মধ্যে লাশের খণ্ডিত অংশ উদ্ধার করতে পারব।
বাগজোলা খাল থেকে নিউটাউনের বেশ কয়েকটি সন্দেহভাজন জায়গায়ও ঘুরে দেখে বাংলাদেশ থেকে আসা গোয়েন্দা দল।
গোয়েন্দা সূত্রের খবর, হত্যাকারীরা দুটি দলে ভাগ হয়ে এমপি আনারের মৃতদেহ গুম করে। একটি দলের দায়িত্বে ছিল কসাই জিহাদ, সে দেহাংশ ফেলে বাগজোলা খালে। অন্য একটি দলের নেতৃত্ব দিয়েছে ফয়জুল, সে দেহাংশ ফেলে যশোর রোডের কোথাও।
যশোর রোডেও গোয়েন্দারা তল্লাশি চালিয়েছে, কিন্তু সেখানেও কিছু পাওয়া যায়নি। এছাড়া এমপি আনারকে হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি বা চাপাতি কোথায় গেল, ভুক্তভোগীর জামাকাপড়ইবা কোথায়; সেসব প্রশ্নের উত্তরও মেলেনি। তবে জানা গেছে, সাঞ্জিভা গার্ডেন্সের সেই ফ্ল্যাটের ওপরে একটি ঘর রয়েছে যেটি সেন্সর লক দিয়ে আটকানো। সেই ঘরেও গোয়েন্দারা তল্লাশি করেছেন কি না, সেটিও স্পষ্ট করে জানাননি কোনো দেশের গোয়েন্দারা।
এদিকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা প্রধানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল আরও ৫ দিন কলকাতায় থেকে আনার হত্যা মামলার তদন্ত করবেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।
জানা গেছে, দুদিনেও তদন্তে খুব বেশি অগ্রগতি না হওয়ায় সময় বাড়ানো হয়েছে। প্রথম দফায় তারা তিন দিনের জন্য কলকাতায় গিয়েছিলেন, কিন্তু সেটা বাড়িয়ে মোট সাত দিন করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৮ মে) আবারও তদন্ত-সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু জায়গায় যাওয়ার কথা রয়েছে ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের।
গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে চুয়াডাঙ্গার দর্শনার গেদে সীমান্ত দিয়ে ভারতে যান সংসদ সদস্য আনার। ওঠেন পশ্চিমবঙ্গে বরাহনগর থানার মণ্ডলপাড়া লেনে গোপাল বিশ্বাস নামে এক বন্ধুর বাড়িতে। পরদিন ডাক্তার দেখানোর কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। এরপর থেকেই রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ আনোয়ারুল আজিম।
বাড়ি থেকে বেরোনোর পাঁচদিন পরে, গত ১৮ মে বরাহনগর থানায় আনার নিখোঁজের বিষয়ে একটি জিডি করেন বন্ধু গোপাল বিশ্বাস। এরপরও খোঁজ মেলেনি তিনবারের এই সংসদ সদস্যের। বুধবার (২২ মে) হঠাৎ খবর ছড়ায়, কলকাতার পার্শ্ববর্তী নিউটাউন এলাকায় বহুতল সঞ্জিভা গার্ডেনস নামে একটি আবাসিক ভবনের বিইউ ৫৬ নম্বর রুমে সংসদ সদস্য আনার খুন হয়েছেন। ঘরের ভেতর পাওয়া গেছে রক্তের ছাপ। তবে ঘরে মেলেনি মরদেহ।
হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করার অভিযোগে গ্রেফতার সৈয়দ আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, ফয়সাল আলী সাহাজি ওরফে তানভীর ভূঁইয়া ও শিলাস্তি রহমানের ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন দেশের আদালত। অন্যদিকে হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়া জিহাদ হাওলাদার ওরফে কসাই জিহাদকে ১২ দিনের রিমান্ড দিয়েছেন ভারতের বারাসাতের আদালত।