উপমহাদেশের একপ্রান্তে যখন ঘূর্ণিঝড়-ভারী বর্ষণের তাণ্ডব চলছে, সে সময় ভয়াবহ তাপপ্রবাহে রীতিমতো গলে যাচ্ছে পাকিস্তান। আবহাওয়া দপ্তরের তথ্য অনুসারে, সোমবার (২৭ মে) পাকিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ সিন্ধের ঐতিহাসিক শহর মোহেঞ্জোদারোর তাপমাত্রা পৌঁছে ৫২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
সিন্ধের মোহেঞ্জোদারো শহর এই উপমহাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন জনপদগুলোর মধ্যে একটি। সিন্ধু নদীর তীরবর্তী যেসব অঞ্চলে আজ থেকে প্রায় সাড়ে চার হাজার বছর আগে গড়ে উঠে প্রাচীন সিন্ধু সভ্যতা, সেই সভ্যতার অন্যতম কেন্দ্র ছিল মোহেঞ্জোদারো।
বর্তমানে মোহেঞ্জোদারো সিন্ধ প্রদেশের একটি ছোট শহর আর এই শহরের আবহাওয়া প্যাটার্ন হলো— গ্রীষ্মকালে ব্যাপক গরম, শীতকালে মৃদু শীত এবং নিম্ন বৃষ্টিপাত, অর্থাৎ প্রায় মরু আবহাওয়া। তবে ছোটো শহর হলেও এখনও মার্কেট, বেকারি, চায়ের দোকান, মেশিন-ইলেকট্রনিক্স মেরামতসহ বিভিন্ন দোকানে রীতিমতো সরগরম থাকে মোহেঞ্জোদারো।
পাকিস্তানের আবহাওয়া দপ্তরের শীর্ষ নির্বাহী সরদার সরফরাজ রয়টার্সকে জানিয়েছেন, মোহেঞ্জোদারোতে যে তাপাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে, তা এখন পর্যন্ত এই মৌসুমের সর্বোচ্চ দৈনিক তাপমাত্রার রেকর্ড।
অসহনীয় গরম-তাপপ্রবাহে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে মোহেঞ্জোদারোর জনজীবন। শহরের একটি রেস্তোরাঁর মালিক ওয়াজিদ আলী (৩২) রয়টার্সকে বলেন, ‘লোকজন পারতপক্ষে ঘর থেকে বের হচ্ছে না। ফলে গত বেশ কয়েক দিন ধরে রেস্তোরাঁতেও খদ্দের আসছে না। রেস্তোরাঁ খুলে প্রতিদিন আমি আর আমার কর্মচারীরা অলস হয়ে বসে থাকি। এই প্রচণ্ড গরমে দিনে কয়েকবার গোসল করলে কিছুটা শান্তি পাওয়া যায়। এদিকে ঘন ঘন লোডশেডিং হচ্ছে। আমরা খুব কষ্টে আছি।’
মোহেঞ্জোদারোর স্থানীয় চিকিৎসক মুশতাক আহমেদ বলেন, অতি গরম আবহাওয়া থেকে বাঁচতে লোকজন খুব বেশি প্রয়োজন না থাকলে বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন না।
পাকিস্তানের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দৈনিক তাপমাত্রার রেকর্ড ৫৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০১৭ সালের দেশটির দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ বেলুচিস্তানে এই তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। পাকিস্তানের সর্বোচ্চ দৈনিক তাপমাত্রার রেকর্ডের পাশাপাশি এটি এশিয়ার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এবং বিশ্বের চতুর্থ সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড।
দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফের জলবায়ু বিষয়ক উপদেষ্টা রুবিনা খুরশীদ আলম রয়টার্সকে বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও উষ্ণতাবৃদ্ধির কারণে যেসব দেশ নিয়মিত বিভিন্ন আবহাওয়াগত দুর্যোগের শিকার হচ্ছে, সেসব দেশের তালিকায় পঞ্চম স্থানে রয়েছে পাকিস্তান।
সূত্র : রয়টার্স