ভোলার মনপুরায় নির্বাচনী জ্বরে আক্রান্ত স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা। সে কারণে চরমভাবে উপেক্ষিত হচ্ছে ঘূর্ণিঝড় রিমালে ঘরবাড়ি হারা কয়েক হাজার মানুষ।
গত ৮ দিনেও মাথা গোঁজার ঠাঁই করতে না পারা এসব মানুষ বিধ্বস্ত ঘর আর শূন্যভিটায় অনাহারে মানবেতর জীবনযাপন করছে। অথচ তাদের খবর নেয়া বা পাশে দাঁড়ানোর সময় পায়নি স্থানীয় প্রশাসন বা জনপ্রতিনিধিরা। মেঘনার জোয়ারে ভেসে, রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে সপ্তাহ পার করা দুর্গতদের খবর না নিলেও নির্বাচনী উৎসব থেমে নেই। দায়িত্বশীলদের এমন উদাসীন আচরণে ক্ষুব্ধ ক্ষতিগ্রস্তরা।
ঘূর্ণিঝড় রেমালের সর্বস্বহারা মনপুরার কলাতলীর চরের গোলখাল এলাকার আনোয়ারা বেগম। মেঘনার তীরের বাড়িতে গবাদি পশু লালন পালন করে বৃদ্ধা বয়সে জীবিকা নির্বাহ করেন। গত ২৭ মে মেঘনার ঢলে গরু- ছাগলসহ সব হারিয়ে দিশেহারা মনোয়ারার আক্ষেপের শেষ নেই।
আনোয়ারের প্রতিবেশী তৌহিদের টিনের ঘরের ভাঙাচোরা অংশ ভিটার ওপর পড়ে আছে গত ৮ দিন ধরে। ঝড়ে বসতঘর পড়ে গেছে। মেঘনার ঢলে ভেসে গেছে ভিটার মাটিসহ আসবাবপত্র। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বিধ্বস্ত ঘরে দিন কাটাচ্ছে তৌহিদের পরিবার। পাশের মাইন উদ্দিনের টিনের ঘরের খুঁটির ওপর চারটি চালা দাঁড়িয়ে থাকলেও বেড়া ভিটার মাটি, হাড়ি-পাতিল কিছুই নেই তার। ঘর চাপা পড়ে চারটি গরু মারা গেছে। রান্না করার মতো কোনো অবস্থা বা সামর্থ্য নেই এ পরিবারের।
২৭ মে এর পর থেকে গত মঙ্গলবার (৪ জুন) পর্যন্ত অনাহারে কেটেছে মাইনুদ্দিনের ৫ সদস্যের সংসার। ওই এলাকার আবদুর রহমান, নিজাম, মফিয়া খাতুন, মো. হাসান, সলেমা বেগমসহ ১৫টি ঘর বিধ্বস্ত অবস্থায় পড়ে আছে গত ৮ দিন। সর্বস্বহারা অসহায় এসব পরিবার টাকার অভাবে ঘর তুলতে পারছে না। গোল খালের মতোই কলাতলী ইউনিয়নের দক্ষিণ ও পশ্চিমপাশের মেঘনার তীর ঘেঁষা এলাকার শতাধিক ঘরহারা পরিবারের একই অবস্থা।
রিমালের রেখে যাওয়া ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যেই সীমাহীন দুঃখ কষ্টের মধ্যে দিন কাটলে কেউ তাদের খবর নিচ্ছে না। তারা জানান, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ১০ কেজি করে খাদ্য সহায়তা দিলেও চাল-চুলা ও হাড়ি পাতিলের অভাবে রান্না করা যাচ্ছে না। এদের অভিযোগ, খেয়ে না খেয়ে শত শত পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করলেও স্থানীয় প্রশাসন ও চেয়ারম্যান মেম্বাররা ব্যস্ত নির্বাচন নিয়ে।
মনপুরার কলাতলি ইউনিয়নে ১ হাজার ৭শ’ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে সম্পূর্ণ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৩শ’ পরিবারের। তবে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে না থাকার বিষয়টি এড়িয়ে তাদের জন্য পুনর্বাসনে গৃহনির্মাণ সামগ্রী দাবি জানান কলাতলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আলাউদ্দিন হাওলাদার।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার জহিরুল ইসলাম জানান, খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়েছে। সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্তদের গৃহনির্মাণ সামগ্রী দিয়ে সহায়তা করা হবে।
মনপুরা উপজেলায় আড়াই হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে সম্পূর্ণ ঘরবাড়ি হারিয়েছে চার শতাধিক পরিবার।