ঢাকা | বঙ্গাব্দ

বিশেষ নিয়ামত পাবেন জান্নাতি নারীরা

পরম করুণাময় মহান আল্লাহর ওপর ঈমান এবং তার প্রিয় বন্ধু নবীজি হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সুন্নত মেনে চলবে আখিরাতে আছে পরম সুখ ও শান্তি।
  • | ০৬ জুন, ২০২৪
বিশেষ নিয়ামত পাবেন জান্নাতি নারীরা বিশেষ নিয়ামত পাবেন জান্নাতি নারীরা

পরম করুণাময় মহান আল্লাহর ওপর ঈমান এবং তার প্রিয় বন্ধু নবীজি হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সুন্নত মেনে চলবে আখিরাতে আছে পরম সুখ ও শান্তি। নারী, পুরুষ কোনো ভেদাভেদ নয় সবাইকে সমানভাবে করা হবে পুরস্কৃত।


জান্নাতের নিয়ামত আলাদা করে পুরুষের জন্য করা হয়নি। বরং এখানে নারী-পুরুষের কোনো তারতম্য করা হয়নি। এতেই উপলদ্ধি করা যায়, মহান আল্লাহ জান্নাতে নারীদেরও বহু নিয়ামত দান করবেন।


এ বিষয়ে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘অতঃপর তাদের রব তাদের ডাকে সাড়া দিলেন যে নিশ্চয়ই আমি তোমাদের কোনো পুরুষ অথবা নারী আমলকারীর আমল নষ্ট করব না। তোমাদের একে অপরের অংশ। সুতরাং, যারা হিজরত করেছে এবং যাদেরকে তাদের ঘর থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে এবং যাদেরকে আমার রাস্তায় কষ্ট দেওয়া হয়েছে, আর যারা যুদ্ধ করেছে এবং নিহত হয়েছে, আমি অবশ্যই তাদের ত্রুটি-বিচ্যুতিসমূহ বিলুপ্ত করে দেব এবং তাদেরকে প্রবেশ করাব জান্নাতসমূহে, যার তলদেশে প্রবাহিত হচ্ছে নহরসমূহ, আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রতিদানস্বরূপ। আর আল্লাহর নিকট রয়েছে উত্তম প্রতিদান।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৯৫)


জান্নাতি নারীদের জন্য মহান আল্লাহ যেভাবে পুরস্কৃত করবেন:


জান্নাতি নারীদের রূপ-লাবণ্য বাড়িয়ে দেওয়া হবে। তাদের দেখতে হুরের মতো লাগবে। শুধু তাই নয়, তাদের আলাদা আরও কিছু বৈশিষ্ট্য থাকবে। বৃদ্ধা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলেও জান্নাতি নারীদের দেখতে লাগবে চিরযৌবনা।


এ বিষয়ে হাদিস শরিফে এসেছে, একবার এক বৃদ্ধা মহিলা নবী (সা.)-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহর কাছে দোয়া করুন যেন আমি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারি। তিনি বলেন, ওহে, কোনো বৃদ্ধা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। এ নিয়ে বলেন, (তা শুনে) সে কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল। নবী (সা.) বলেন, তাকে এ মর্মে খবর দাও যে তুমি বৃদ্ধাবস্থায় জান্নাতে প্রবেশ করবে না। কারণ আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আমি তাদেরকে বিশেষভাবে সৃষ্টি করেছি। আর তাদেরকে করেছি কুমারী।’ [সুরা : ওয়াকিয়া, আয়াত : ৩৫-৩৬]। (শামায়েলে তিরমিজি, হাদিস : ১৭৯)


জান্নাতি নারীরা জান্নাতে স্বামীভক্ত হবেন, যা নারীদের শ্রেষ্ঠ চরিত্র। পাশাপাশি তারা তাদের সমবয়স্কা হবেন, যা তাদের মধ্যে বোঝাপড়া ও প্রেমময় সম্পর্ক দৃঢ় রাখতে সাহায্য করবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘(জান্নাতি নারী হবে) সোহাগিনী ও সমবয়সী।’ (সুরা : ওয়াকিয়া, আয়াত : ৩৭)


এছাড়া জান্নাতি নারীরা তার স্বামীকেই জান্নাতে পাবেন, যদি সেই পুরুষও জান্নাতি হন। আর কোনো নারীর যদি একাধিক বিয়ে হয়, তাহলে তার শেষ স্বামী জান্নাতেও তার স্বামী হবেন। হুজাইফা (রা.) তার স্ত্রীকে বলেন, ‘তুমি যদি চাও তাহলে জান্নাতেও আমার স্ত্রী হতে পারো, তাই আমার পরে অনত্র বিয়ে কোরো না। কেননা নারীরা জান্নাতে তার শেষ স্বামীকে পাবে।’ এ জন্যই আল্লাহ তাআলা নবীপত্নীদের জন্য নবীজির ওফাতের পর অন্যত্র বিয়ে করা হারাম করেছেন। তাঁরা জান্নাতেও নবীজি (সা.)-এর স্ত্রী হবেন। আর যাঁরা বিয়ের আগেই দুনিয়া থেকে চলে যাবেন, তাঁরা মহান আল্লাহর পছন্দের পাত্রের সঙ্গে জান্নাতে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হবেন। (বায়হাকি)


আবু হুরায়রা (রা.) ইরশাদ করেছেন, রসুল (সা.) বলেছেন, যে দল প্রথমে জান্নাতে প্রবেশ করবে তাদের চেহারা পূর্ণিমার রাতের চাঁদের মতো উজ্জ্বল হবে। তারা সেখানে থুতু ফেলবে না, নাক ঝাড়বে না, মলমূত্র ত্যাগ করবে না। সেখানে তাদের পাত্র হবে স্বর্ণের, তাদের চিরুনি হবে স্বর্ণ ও রৌপ্যের, তাদের ধুনুচিতে থাকবে সুগন্ধি কাষ্ঠ। তাদের গায়ের ঘাম মিসকের মতো সুগন্ধময় হবে। তাদের প্রত্যেকের জন্য এমন দুজন স্ত্রী থাকবে, যাদের সৌন্দর্যের কারণে গোশত ভেদ করে পায়ের নলার হাড়ের মজ্জা দেখা যাবে। তাদের মধ্যে কোনো মতভেদ থাকবে না; পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ থাকবে না। তাদের সবার অন্তর এক অন্তরের মতো হবে। তারা সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর তাসবিহ পাঠ করতে থাকবে। (বুখারি, হাদিস : ৩২৪৫)


পূর্ণ চারিত্রিক পবিত্রতা : জান্নাতের নারীরা চরিত্রের দিক থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র হবেন, তাদের মনে স্বামী ছাড়া অন্য কেউ থাকবে না। তারা কখনো অন্যের স্বামীর দিকে দৃষ্টিও দেবেন না। পবিত্র কোরআন শরীফে এসেছে, ‘সেখানে থাকবে সতীসাধ্বী সংযত-নয়না কুমারীরা, পূর্বে যাদের স্পর্শ করেনি কোনো মানুষ বা কোনো জিন।’ (সুরা : আর রহমান, আয়াত : ৫৬)


এ থেকেই স্পষ্টত দুনিয়ার যে স্ত্রী জান্নাতি হুরদের সর্দার হবেন, তারাও পূর্ণ সতীসাধ্বী হবেন। আর তাদের অন্তরে কখনো একাধিক পুরুষপ্রাপ্তির আশা জাগবে না।