ইউক্রেনের সঙ্গে ১০ বছর মেয়াদি একটি নিরাপত্তা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর আওতায় ইউক্রেনীয় বাহিনীকে প্রশিক্ষণ, অস্ত্র উৎপাদনে সহযোগিতা বাড়ানোসহ আরও কিছু পদক্ষেপ নেবে যুক্তরাষ্ট্র।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) ইতালিতে চলমান বিশ্বের শীর্ষ ধনী দেশগুলোর জোট জি-৭ সম্মেলনের ফাঁকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এই চুক্তি স্বাক্ষর করেন। দুই দেশের মধ্যে কয়েকমাসের আলোচনার পর এই চুক্তি হলো।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার নির্বাহী আদেশে হওয়া এই চুক্তির বিষয়ে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা আমাদের সমর্থন (ইউক্রেনের ওপর থেকে) সরিয়ে নিচ্ছি না। প্রকৃতপক্ষে, আমরা একসঙ্গে দাঁড়িয়ে অবৈধ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করছি।’
এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
এই চুক্তি অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীকে ১০ বছরের জন্য প্রশিক্ষণ দেবে, অস্ত্র উৎপাদনে সহযোগিতা বাড়াবে, সামরিক সহায়তা অব্যাহত রাখবে এবং গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান বাড়াবে।
এ চুক্তি ইউক্রেনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘমেয়াদী নিরাপত্তা সম্পর্কের ভিত স্থাপন করলেও পরবর্তীতে কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট চাইলে চুক্তিটি নাও মানতে পারেন। তাছাড়া, এই চু্ক্তির আওতায় যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনে যুদ্ধের জন্য সেনা পাঠাতেও প্রতিশ্রুতিব্ধ থাকবে না।
শুধু ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা এবং শত্রু মোকাবিলার সক্ষমতা গড়ে তোলা এবং তা ধরে রাখা হবে এই চুক্তির উদ্দেশ্য। আর ভবিষ্যতে রাশিয়ার কোনো সশস্ত্র হামলার ক্ষেত্রে চুক্তির আওতায় ইউক্রেনের সঙ্গে আলোচনা করে তাদেরকে প্রয়োজনীয় সমর্থন ও সহযোগিতা করবে যুক্তরাষ্ট্র।
এদিকে, মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম এনবিসি নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই চুক্তির পাশাপাশি জি-৭ জোটভুক্ত দেশগুলো রাশিয়ার জব্দ করা সম্পদের সুদ থেকে প্রতিবছর ইউক্রেনকে ৫০ বিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ব্যাপারেও একমত হয়েছে। এর মাধ্যমে রাশিয়ার অর্থনীতিকে আরও চাপে ফেলার পরিকল্পনা করেছে জোটটি।
প্রস্তাবিত পরিকল্পনা অনুসারে, রাশিয়ার কাছ থেকে জব্দ করা জি-৭ ভুক্ত ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে থাকা ৩২ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের সম্পদের সুদ থেকে প্রাপ্ত অর্থ ইউক্রেনকে ঋণ আকারে দেওয়া হবে। রাশিয়া ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন আক্রমণের পর পশ্চিমা দেশগুলো পর্যায়ক্রমে এসব সম্পদ জব্দ করে।
আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসারে, কোনো দেশ রাশিয়ার কাছ থেকে জব্দ করা সম্পত্তি ইউক্রেনকে দিতে পারবে না। কিন্তু জি-৭ এই পরিকল্পনা পাশের পর সরাসরি না দিলেও সেই সম্পদ থেকে অর্জিত সুদ ইউক্রেনকে দেওয়া সম্ভব হবে, যা দেশটিকে রণক্ষেত্রে দারুণ সুবিধা দেবে।
এই চুক্তির প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের এই নিরাপত্তা চুক্তির নিন্দা জানিয়ে এর ‘শাস্তি না হয়ে যাবে না’ বলে জানিয়েছেন।
সূত্র: এএফপি