ইউক্রেন যুদ্ধের মাঝে হঠাৎই উত্তর কোরিয়ায় যাচ্ছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। দীর্ঘ ২৪ বছর পর ‘বন্ধু’ কিম জং উনের দেশে পা রাখবেন তিনি। যুক্তরােষ্ট্রর দাবি, এবার দুদেশের মধ্যে অস্ত্র চুক্তি নিয়েই পুতিনের এই সফর। গত কয়েকমাসে রুশ সেনার বিরুদ্ধে লড়াই করতে বেশ বেগ হতে হচ্ছে ইউক্রেনীয় বাহিনীকে। হাতিয়ার চেয়ে পশ্চিমা বিশ্বের কাছে ‘হাহাকার’ করছে ইউক্রেন। ফলে এবার কিম ও পুতিনের মধ্যে অস্ত্র চুক্তি হলে চাপ বাড়বে কিয়েভের।
যুক্তরাষ্ট্রের চোখরাঙানি উপেক্ষা করে গত বছরের সেপ্টেম্বরে রাশিয়ায় যান কিম। বন্ধু পুতিনকে আশ্বাস দেন, যুদ্ধে রাশিয়াকে সবরকমভাবে নিঃশর্ত সাহায্যের। পাশাপাশি রুশ প্রেসিডেন্টকে আমন্ত্রণ জানান পিয়ংইয়ংয়ে যাওয়ার জন্য। সেই ডাকে সাড়া দিয়েই এবার উত্তর কোরিয়ায় যাচ্ছেন পুতিন।
মঙ্গলবার (১৮ জুন) পিয়ংইয়ংয়ে পা রাখবেন তিনি। বুধবার পর্যন্ত থাকবেন বন্ধুর দেশে। রয়টার্স সূত্রে খবর, এই দুদিনে পুতিন বৈঠক করার পাশাপাশি ঘুরে দেখবেন কিমের অত্যাধুনিক অস্ত্রভাণ্ডার। ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকেই পরমাণু অস্ত্রধারী এই দেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও মজবুত করতে উঠেপড়ে লেগেছে মস্কো। কারণ এই যুদ্ধে হাতিয়ার জুগিয়ে ইউক্রেনের পাশে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যা মোটেই ভালোভাবে নেননি পুতিন। তাই যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী দেশের সঙ্গে জোট বাঁধতে চাইছেন তিনি।
এর আগে বহুবার যুক্তরাষ্ট্র দাবি করেছে, সকলের নজর এড়িয়েই রাশিয়াকে অস্ত্র যোগাচ্ছে উত্তর কোরিয়া। যা নিয়ে দুদেশকেই কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। পালটা পরমাণু যুদ্ধের ভয় দেখিয়ে দিয়েছেন পুতিনও। ফলে তার এই সফরকে কেন্দ্র করে এবার মস্কো ও পিয়ংইয়ংয়ের সঙ্গে সংঘাত আরও তীব্র হবে ওয়াশিংটনের।
দুদেশের মধ্যে আসন্ন অস্ত্র চুক্তি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে হোয়াইট হাউস। এনিয়ে সোমবার মার্কিন পররাষ্ট্রদফতর জানিয়েছে, ‘পুতিন এই সফর নিশ্চিত ছিল। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য অস্ত্র চাইতেই তিনি উত্তর কোরিয়ায় যাচ্ছেন। দুদেশের এই সম্পর্কে আমরা উদ্বিগ্ন।’
মার্কিন বিদেশ দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারও দাবি করেন, “ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার অস্ত্রভাণ্ডারে টান পড়েছে। তারা চাইছে ইরান ও উত্তর কোরিয়ার থেকে অস্ত্র নিয়ে সেই ঘাটতি পূরণ করতে। আমরা জানি, এর মধ্যে পিয়ংইয়ং থেকে কয়েক ডজন ব্যালিস্টিক মিসাইল ও ১১ হাজার কন্টেনারে গোলাবারুদ রাশিয়ায় গিয়েছে। যা মস্কো ব্যবহার করছে কিয়েভের বিরুদ্ধে আক্রমণে।” প্রসঙ্গত, ২০০০ সালে শেষবার উত্তর কোরিয়ায় যান পুতিন।
এদিকে, এই সফর সম্পর্কে পুতিনের পররাষ্ট্রনীতি উপদেষ্টা ইউরি উশাকভ জানিয়েছেন, নিরাপত্তা বিষয়ে সহযোগিতার ক্ষেত্রে একটি বিশেষ চুক্তি স্বাক্ষর হবে রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে। তবে এই চুক্তি কোনও দেশের বিরুদ্ধে পরিচালিত হবে না বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। তার কথায়, “দৃঢ় সহযোগিতার সম্ভাবনার রূপরেখা, এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমাদের দেশগুলোর মধ্যে যা ঘটেছে তা বিবেচনায় নিয়ে স্বাক্ষরিত হবে। আন্তর্জাতিক কূটনীতি, অর্থনীতি, নিরাপত্তা বিষয়গুলো বিবেচিত হবে এই চুক্তিতে।”
পুতিনের সঙ্গে এই সফরে থাকবেন রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী আন্দ্রেই বেলোসভ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ এবং ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টার আলেকজান্ডার নোভাক। বিশ্লেষকদের মতে, হাতিয়ার ও প্রযুক্তির আদানপ্রদানের মাধ্যমে রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে সম্পর্ক আরও মজবুত হতে চলেছে। যা এখন মাথাব্যথার কারণ যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের।