অরবিন্দ কেজরিওয়ালের মুক্তি আটকাতে ফের সক্রিয় ইডি। শুক্রবার সকালেই দিল্লি হাই কোর্টে স্থগিতাদেশ চেয়ে আবেদন করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটি। কিন্তু স্থগিতাদেশে সায় না দিয়ে দ্রুত শুনানির ইডির আবেদন মঞ্জুর করেছে আদালত। আইনি খবর পরিবেশনকারী ওয়েবসাইট বার অ্যান্ড বেঞ্চের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আদালত জানিয়েছে, হাই কোর্টে এই মামলার শুনানি না হলে নিম্ন আদালতের নির্দেশ কার্যকর করা যাবে না। উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার কেজরির জামিন মঞ্জুর করে দিল্লির রাউস অ্যাভেনিউ আদালত। যেহেতু ইডি আদালতে আবেদন করেছে, তাই নিম্ন আদালতের রায়ে সাময়িক স্থগিতাদেশ দিয়েছে দিল্লি হাই কোর্ট।
শুক্রবার দিল্লি হাই কোর্টে আবেদন করে ইডির তরফে বলা হয়, বৃহস্পতিবার রাত আটটার সময়ে জামিন দেওয়া হয়েছে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে। এই রায়ের বিরোধিতা করার সুযোগ পায়নি ইডি। নিম্ন আদালতের রায়ে দ্রুত স্থগিতাদেশ চেয়ে আদালতে আবেদন করেন অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেল এস ভি রাজু। পাশাপাশি কেজরির জামিনের বিরোধিতা মামলার যেন দ্রুত শুনানি হয়, সেই আবেদনও জানায় ইডি। সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে শুরু হয় মামলার দ্রুত শুনানি।
শুনানির গোড়াতেই ইডির আইনজীবী তথা অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল রাজু জানান, ‘বেআইনি আর্থিক লেনদেন প্রতিরোধ আইন’ (পিএমএলএ)-এর ৪৫ নম্বর ধারা অনুযায়ী ইডির তরফে জামিনের বিরোধিতা করে জমা দেওয়া নথিগুলি যথাযথ ভাবে বিবেচনা করার কথা ছিল রাউস অ্যাভিনিউ আদালতের। তার অভিযোগ, সেই নথিগুলি পর্যালোচনা না করেই একতরফা ভাবে জামিন দেওয়া হয়েছে আপ প্রধানকে। সেই নথি পরীক্ষা করা হবে বলে হাই কোর্ট জানিয়েছে ইডিকে।
ইডির আবেদন মেনে স্থগিতাদেশ না দিলেও দিল্লি হাই কোর্টের অবকাশকালীন বেঞ্চের বিচারপতি সুধীরকুমার জৈন এবং বিচারপতি রবীন্দ্র দুদেজার বেঞ্চ জানায়, হাই কোর্টে পরবর্তী শুনানি না হওয়া পর্যন্ত জেলবন্দি কেজরি মুক্তি পাবেন না। কেজরির স্ত্রী সুনীতার অভিযোগ, বৃহস্পতিবার দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ আদালত জামিন মঞ্জুর করার পরে সেই রায় ওয়েবসাইটে আপলোড হওয়ার আগেই দিল্লি হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে ইডি।
ইডির তরফে বৃহস্পতিবার কেজরির জামিন ৪৮ ঘণ্টা পিছিয়ে দেওয়ার আবেদন করা হয় রাউস অ্যাভিনিউ আদালতে। কিন্তু তা গ্রাহ্য হয়নি। বিচারক ন্যায় বিন্দু ১ লক্ষ টাকার বন্ডে জামিন দেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে। সুনিতা শুক্রবার বলেন, ‘‘দেশে স্বৈরতন্ত্র সমস্ত সীমা লঙ্ঘন করেছে।’’ দিল্লি হাই কোর্টের অবকাশকালীন বেঞ্চে মামলাটির শুনানি হবে। আদালত জানিয়েছে, মামলাটি আগে হাই কোর্ট শুনবে। তার আগে নিম্ন আদালতের নির্দেশ কার্যকর হবে না।
প্রথমেই দিল্লি হাই কোর্টের দুই বিচারপতি জানিয়ে দেন, যেহেতু জামিনের আর্জির বিরোধিতা করে আদালতে শুনানি চলছে তাই সাময়িকভাবে স্থগিতাদেশ থাকবে রাউস অ্যাভেনিউ কোর্টের রায়ের উপরে। অর্থাৎ আপাতত আপ সুপ্রিমোর জামিনের প্রক্রিয়া শুরু করা যাবে না। ফলে তার জেলমুক্তি আরও পিছিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
উল্লেখ্য, ২১ মার্চ আবগারি দুর্নীতির অভিযোগে কেজরিওয়ালকে নিজেদের হেফাজতে নেয় ইডি। সপ্তাহদুয়েক পরে তাকে পাঠানো হয় তিহার জেলে। ইডির গ্রেফতারির বিরোধিতা করে শীর্ষ আদালতে মামলা করেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। পরে সুপ্রিম নির্দেশে ২১ দিনের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পান তিনি। পরে জামিনের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য শীর্ষ আদালতে আবেদন করেন। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট সেই আবেদন শুনতেই রাজি হয়নি। ২ জুন আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হন আপ সুপ্রিমো। অবশেষে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জামিন পান কেজরিওয়াল। কিন্তু আপাতত জেলমুক্তি হচ্ছে না তার। দিল্লি হাই কোর্টের নির্দেশের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে।