ঢাকা | বঙ্গাব্দ

ওয়েনাড়কে রাহুলের আবেগপ্রবণ চিঠি

চলতি লোকসভা নির্বাচনে ওয়েনাড় এবং পরে রায়বরেলী থেকে লড়েছেন রাহুল। দু’টি আসনেই জয়ী হন। যদিও শেষ পর্যন্ত মা সোনিয়া গান্ধীর ছেড়ে যাওয়া রায়বরেলী আসনটি রেখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
  • | ২৪ জুন, ২০২৪
ওয়েনাড়কে রাহুলের আবেগপ্রবণ চিঠি কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী

এক জায়গা পাঁচ বছরের চেনা, আরেকটা নতুন। পাকেচক্রে এখন নতুনের জন্য পুরনোকে বিদায় জানাতে হয়েছে। রাজনীতির এমনই জটিল ‘নীতি’! কিন্তু বিদায় দেওয়া মানেই তো ভুলে যাওয়া নয়, উপেক্ষাও নয়। দরকারের সময় পাশে ছিলেন ওয়েনাড়বাসীই। ‘সুরক্ষা এবং ভালবাসা’ দিয়েছেন। ওয়েনাড় লোকসভা আসন ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর পিছুটান নিয়েই ওয়েনাড়বাসীর উদ্দেশে সেখানকার মানুষজনকে আবেগপ্রবণ চিঠি লিখলেন সাংসদ রাহুল গান্ধী।  

চিঠিতে জানালেন, ওয়েনাড় আসনটি ছাড়ছেন বলে দুঃখিত। তবে সান্ত্বনা একটাই, ওই আসনে লড়তে চলেছেন তার বোন প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা। ওয়েনাড়বাসী সুযোগ দিলে তিনি ভাল কাজ করবেন বলে নিশ্চিত রাহুল। সোমবার লোকসভায় শপথ গ্রহণ করবেন নতুন নির্বাচিত সাংসদেরা। তার আগে রাহুলের এই চিঠি প্রকাশ্যে এল। রোববার (২৩ জুন) তিনি লিখেছেন, ‘‘ওয়ানড় ছেড়ে আসতে হওয়ায় দুঃখিত। কিন্তু সান্ত্বনা হল, আমার বোন প্রিয়াঙ্কা ওখানে আপনাদের প্রতিনিধিত্ব করবে। সুযোগ পেলে প্রিয়াঙ্কা ভালো কাজ করবেন বলে বিশ্বাস করি।” তার বিশ্বাস, ওয়েনাড়বাসী সুযোগ দিলে ভাল কাজ করবেন প্রিয়াঙ্কা।

চলতি চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনে ওয়েনাড় ও রায়বরেলি – দুই আসন থেকেই জিতেছেন সোনিয়াপুত্র। একটি আসন ছাড়তে হতো তাকে। যদিও শেষ পর্যন্ত ১৭ জুন গান্ধীদের গড় মা সোনিয়া গান্ধীর ছেড়ে যাওয়া আসন রায়বরেলি রাখতে ওয়েনাড় ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রাহুল। আর তাই শেষবেলায় দক্ষিণ ভারতের এই যুদ্ধক্ষেত্রে এতদিনের সমর্থকদের কৃতজ্ঞ জানালেন তিনি।

রাহুল আরও লিখেছেন, ‘‘আমার কাছে আরও একটা সান্ত্বনা, রায়বরেলির লোকজন আমার পরিবারের মতো। তাদের সঙ্গে একটি বন্ধন রয়েছে। আপনাদের এবং রায়বরেলির মানুষের কাছে আমার অঙ্গীকার, দেশে যে হিংসা এবং ঘৃণা ছড়াচ্ছে, তার বিরুদ্ধে লড়াই।’’ ওয়েনাড়বাসীকে কী ভাবে ধন্যবাদ জানাবেন, তা অজানা বলেও চিঠিতে লিখেছেন রাহুল। যখন তার সব থেকে বেশি দরকার ছিল, তখনই এখানকার মানুষজন ‘ভালবাসা এবং সুরক্ষা’ দিয়েছেন। ওয়েনাড়বাসী তার পরিবারেরই অংশ। প্রত্যেক মানুষের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন রাহুল। প্রসঙ্গত, সোমবারই লোকসভায় শপথ নিতে চলেছেন নতুন সাংসদেরা। দু’দিন ধরে চলবে শপথগ্রহণ। রায়বরেলির সাংসদ হিসাবে শপথ নেবেন রাহুলও। তার আগে প্রকাশ্যে এল এই চিঠি।

চিঠিতে রাহুল উল্লেখ করেছেন, তার জীবনের কঠিন সময়, যখন তাকে পদে পদে অপমান করা হচ্ছে, ছোট করা হচ্ছে, বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, তখন নিঃশর্ত ভালোবাসা দিয়ে নিজেদের জনপ্রতিনিধিকে আগলে রেখেছেন ওয়েনাড়বাসী। সংসদে তাদের ‘কণ্ঠ’ হয়ে ওঠার জন্য তিনি গর্বিত। এটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। এ প্রসঙ্গে তিনি কেরালার ভয়াবহ বন্যার কথাও উল্লেখ করেছেন। সেই দুঃসময়েও নিজেদের জনপ্রতিনিধির ওপর তারা ভরসা রেখেছেন। ওয়েনাড়বাসীকে তিনি পরিবার বলে মনে করেছেন, এখনও তাই মনে করবেন।

রায়বরেলিতে এ বার রেকর্ড ভোটে জয়ী হয়েছেন রাহুল। এই আসনে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সাংসদ ছিলেন সোনিয়া। তারও আগে রায়বরেলি থেকে কংগ্রেসের সাংসদ ছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। তবে কংগ্রেসের এই পুরনো গড়ে রাহুল এ বছর পেয়েছেন মা সোনিয়ার থেকেও বেশি ভোট। বিজেপির প্রার্থীকে হারিয়েছেন প্রায় চার লক্ষ ভোটে। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে উত্তরপ্রদেশের আমেঠি থেকে হেরে গেলেও কেরালার ওয়েনাড় জিতিয়েছিল রাহুলকে। রায়বরেলিতে জেতার পরে সেই ওয়েনাড় ছেড়ে দেন রাহুল।

রাহুলের ছেড়ে দেওয়া আসনে লড়তে চলেছেন প্রিয়াঙ্কা। এই প্রথম সংসদীয় রাজনীতিতে পা রাখছেন তিনি। প্রসঙ্গত, এই প্রথম গান্ধী-নেহরু পরিবারের কোনও রাজনীতিক শুধুমাত্র দক্ষিণ ভারত থেকে জীবনে প্রথম বার লোকসভা ভোটে লড়তে চলেছেন। রাহুল এবং তার ঠাকুমা দক্ষিণ ভারত থেকে লোকসভা ভোটে লড়ে জিতলেও জীবনের প্রথম নির্বাচন উত্তরপ্রদেশ থেকে লড়েছেন। সোনিয়া গান্ধী ১৯৯৯ সালে প্রথম বার লোকসভা নির্বাচনে লড়েছেন। সে বার উত্তরপ্রদেশের রায়বরেলির পাশাপাশি কর্নাটকের বল্লারীকেও বেছে নেন।

উনিশে আমেঠি হারের ক্ষত চব্বিশের লোকসভা ভোটে পূরণ করে দিয়েছে রায়বরেলি। সোনিয়ার গড় থেকে এবার রেকর্ড ভোটে জিতেছেন তার পুত্র। আবার কেরালার ওয়েনাড় থেকেও জিতেছেন রাহুল। ওয়েনাড় আসনটি ছেড়ে তিনি রায়বরেলির সাংসদ হয়ে সোমবার (২৪জুন) শপথ নেবেন। আর ওয়েনাড়ে প্রতিনিধিত্ব করতে পাঠিয়েছেন বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে। ভাইয়ের শক্ত ঘাঁটিতে উপনির্বাচন দিয়ে সংসদীয় রাজনীতিতে পা রাখতে চলেছেন প্রিয়াঙ্কা। তবে রাহুলের রাজনৈতিক জীবনে ওয়েনাড়-পর্ব শেষের আগে তার এই চিঠি নিঃসন্দেহে অন্য ছাপ রেখে গেল।