ট্রেনে ইউরো ২০২৪-এর ম্যাচের ভেন্যুতে সময়মতো পৌঁছানো যেন সৌভাগ্যের বিষয়। দেশে-বিদেশে তীব্র সমালোচনার মুখে শেষ পর্যন্ত ক্ষমা চাইলো জার্মানির রেল যোগাযোগ কর্তৃপক্ষ ডয়চে বান।
ডয়চে বান-এর দূরপাল্লার যাত্রা ব্যবস্থাপনা বোর্ডের সদস্য মিশেল পেটারসন জার্মানির জনপ্রিয় সংবাদপত্র ‘বিল্ড’কে বলেন, ভক্ত, সমর্থকদের অসন্তোষ এবং সমালোচনার কারণ বুঝতে পারছি। সাম্প্রতিক সময়ে ডয়চে বান প্রত্যাশিত মান ধরে রাখতে পারছে না। তবে উন্নত সেবা দেওয়ার চেষ্টায় কোনো ত্রুটি নেই— এমন দাবি করে তিনি বলেন, ইউরো ২০২৪-এর সময় ৫০ লাখ যাত্রীকে দ্রুতগামী আইসিই এবং আইসি ট্রেনে সেবা দিচ্ছে ডয়চে বান-এর দেড় লাখ কর্মী।
কিন্তু দেড় লাখ কর্মির অক্লান্ত পরিশ্রম সত্ত্বেও রেল যোগাযোগে ফিরছে না শৃঙ্খলা। ইউরোর মতো আসর চলার সময়ে কমছে না যাত্রীদের ভোগান্তি। স্টেশনে দেখা যাচ্ছে শত শত যাত্রীর ভিড়। সময়মতো আসছে না, সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছাতেও পারছে না ট্রেন। ম্যাচে দেরিতে পৌঁছানোর ঘটছে প্রায় নিয়মিত। এমনও হয়েছে কষ্ট করে সমর্থকরা মাঠে পৌছে দেখেছেন খেলা শেষ।
নেদারল্যান্ডসের কোচ রোনাল্ড ক্যোমান ডয়চে বান-এর সেবার মান দেখে খুবই বিরক্ত। সোমবার অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ শেষে ১৯৮৮-র ইউরোজয়ী ডাচ দলের খেলোয়াড় জানান, অতীতে ডয়চে বান-এর সেবা এত ভালো ছিল যে ব্যক্তিগত বিমানে না চড়ে তিনি ট্রেনে চড়তেন। কিন্তু তার মতে, এখনকার পরিস্থিতি রীতিমতো ভীতিকর, ‘ম্যাচ শেষে আমরা ফিরতে পারছি না, কারণ, ভল্ফসবুর্গের দিকে আর কোনো ট্রেনই নেই।’ নেদারল্যান্ডসের সাবেক ডিফেন্ডার ক্যোমান জার্মানি এবং ডয়চে বান কর্তৃপক্ষকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘জার্মানি দাবি করে তারা টেকসই ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ আয়োজন করছে, অথচ তারা ব্যবস্থাপনাটাই করতে পারছে না।’
‘টুর্নামেন্ট এগিয়ে যায়, ট্রেন পারে না’
নানা দিকে নানা ধরনের খবর আর মন্তব্য ছড়াচ্ছে ডয়চে বানের পরিষেবা নিয়ে। অস্ট্রিয়ার এক চ্যানেল তুলে ধরেছে ই্উরোর ম্যাচ দেখার জন্য ট্রেনে উঠে বারবার থামা এবং থেমে চলতে প্রায় ভুলে যাওয়া টেনের প্রতি অস্ট্রিয়ার সমর্থকদের বিরক্তি। বিরক্তি, হতাশা চরমে পৌঁছে যাওয়ায় কেউ কেউ ‘ডয়চে বান পিছিয়ে পড়েছে’ স্লোগান দিচ্ছিলেন, কেউবা গাইছিলেন লুইস আর্মস্ট্রংয়ের গান, ‘হোয়েন দ্য সেইন্টস গো মার্চিং ইন।’
অন্যান্য চ্যানেলে দেখানো হয়েছে সময়মতো ভেন্যুতে পৌঁছানোর জন্য নির্ধারিত সময়ের অনেক আগে ডাচ সমর্থকদের বার্লিন ট্রেন স্টেশনে অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত হওয়ার দৃশ্য। নিউইয়র্ক টাইমস এক ফিচারের শিরোনাম করেছে, ‘‘জার্মানিতে টুর্নামেন্ট চলে মসৃণভাবে, তবে ট্রেন চলে না।”
আমরা ব্যর্থ হয়েছি: ফিলিপ লাম
ডয়চে বান-এর দুরবস্থায় জার্মানির সাবেক অধিনায়ক ফিলিপ লামও ক্ষুব্ধ। জার্মান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (ডিএফবি)-র ইউরো ২০২৪ কমিটির পরিচালক সোমবার ডয়চে বান-এর কঠোর সমালোচনা করে বলেন, ‘আমার মনে হয় সাম্প্রতিক কয়েক দশকে পরিকাঠামোর উন্নতিতে সামান্য কাজ করতেও আমরা জাতিগতভাবে ব্যর্থ হয়েছি।'
শুক্রবার ইউক্রেন-স্লোভানিয়া ম্যাচের ভেন্যুতে যেতে দেরি হয়ে যায় তার। তাই রোববার জার্মানির ম্যাচের আগে তিনি লিখেছেন, ‘প্রিয় ডয়চে বান, রোববার কিন্তু (জার্মান) টিমের সঙ্গে একেবারে ঠিক সময়ে আমাদের ফ্রাঙ্কফুর্টে পৌঁছাতেই হবে। আমাদের বিশ্বাস আমরা তা পারবো।’ ফিলিপ লামের মনস্কামনা সত্যি সত্যিই পূরণ হয় সেদিন।
২০১৪ বিশ্বকাপজয়ী জার্মান দলের অধিনায়ক জানিয়েছেন, ডিএফবি এবং ডয়চে বান ইউরো ২০১৪-এর দর্শকদের সেরা সেবা নিশ্চিত করার জন্য এখন সব চেষ্টাই করছে প্রবলভাবে ৷ তবে তিনি মনে করেন, এ চেষ্টা অনেক আগেই করা উচিত ছিল।