ভারতের উত্তর প্রদেশের হাথরসে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পদদলিত হয়ে নারী ও শিশুসহ অন্তত ১২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। সিকান্দারা রাউ শহরে বিশেষভাবে তৈরি করা তাঁবুতে এক ধর্মপ্রচারক তার অনুগামীদের উদ্দেশে ভাষণ দিচ্ছিলেন। অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর তাঁবু থেকে বের হওয়ার সময় শুরু হয় ঠেলাঠেলি।
মঙ্গলবার (২ জুলাই) বিকেলে যোগীর রাজ্য উত্তর প্রদেশের হাথরস জেলায় একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পদদলিত হয়ে এই প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। এডিজি আগ্রার জোন অফিসের পিআরও ১০৭ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, সৎসঙ্গে উপস্থিত লোকজন প্রচণ্ড গরমের মধ্যে সমস্যায় পড়ে যান। এরপরই লোকজন দৌড়াদৌড়ি শুরু করলে পদপিষ্টের ঘটনা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, এটা ছিল ধর্ম প্রচারক ভোলে বাবার সৎসঙ্গ সভা। অনুষ্ঠানের সময় প্রচণ্ড গরম ও আর্দ্রতা ছিল।
আলিগড় রেঞ্জের ইন্সপেক্টর জেনারেল শলভ মাথুর জানিয়েছেন, মঙ্গলবার বিকেলে ইটাহ ও হাথরস জেলার সীমান্তে ওই জায়গায় জড়ো হওয়ার জন্য সাময়িক অনুমতি দেওয়া হয়। একের পর এক মৃত্যুর ঘটনাকে ঘিরে স্বাভাবিকভাবেই উদ্বেগ ছড়িয়েছে। ক্রমশ বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা।
আহত এক ব্যক্তি জানিয়েছেন, ‘ধর্মীয় অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পরে পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনা ঘটে এবং সবাই জায়গা ছেড়ে যাওয়ার জন্য দৌড়াদৌড়ি করছিল।’ ওই অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত একজন জানিয়েছেন, ‘ঘটনাস্থলে ওই ধর্মীয় প্রচারকের অনুগামীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। বেরিয়ে যাওয়ার কোনো উপায় ছিল না। সবাই একসঙ্গে বের হওয়ার চেষ্টা করেন। সেই সময়ই পদপিষ্টের ঘটনা হয়। অনেকে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। যখন বের হওয়ার চেষ্টা করি, তখন বাইরে মোটরসাইকেল দাঁড়িয়ে থাকায় আমার পথ আটকে যায়।’
অপর এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘হাজার হাজার মানুষের জনসমাগম হয়। তবে প্যান্ডেলের মধ্যে কিছু হয়নি। রাস্তায় যে মেইন গেট তৈরি হয়, সেখান দিয়ে বের হওয়ার সময় অনেকে রাস্তার ডান দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেন, আর অনেকে বাঁ দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেন। সেই সময়ই ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। যারা মাটিতে পড়ে যান, তাদের ওপর দিয়েই অনেকে চলে যান।’
আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘সৎসঙ্গ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সবাই বেরিয়ে আসতে শুরু করে। অনুষ্ঠানস্থলের বাইরের একটি ড্রেন ঘেঁষে রাস্তা তৈরি করা হয়। এই রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় একের পর এক মানুষ ড্রেনে পড়তে থাকেন। এতে কিছু মানুষ পিষ্ট হয়েছেন।’ তবে ভয়াবহ এই দুর্ঘটনার সঠিক কারণ জানতে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ।
এদিকে, এই ঘটনায় গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। এই ঘটনা তদন্তে কয়েকটি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে যোগী আদিত্যনাথ। পাশাপাশি দুর্ঘটনাস্থলে ত্রাণ কাজ ত্বরান্বিত করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
দ্রুত উদ্ধার ও ত্রাণের জন্য হাথরস জেলা ও এর আশেপাশের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। এডিজি আগ্রা এবং আলিগড়ের কমিশনারের নেতৃত্বে ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে বলেও মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে জানানো হয়েছে।