ঢাকা | বঙ্গাব্দ

জেনে নিন ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানকে

২০১৩ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে প্রত্যাহার করেন এবং ২০২১ সালের নির্বাচনে আবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে প্রত্যাখ্যাত হন।
  • | ০৬ জুলাই, ২০২৪
জেনে নিন ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানকে ইরানের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান

ইরানের ১৪তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন সংস্কারপন্থী মাসুদ পেজেশকিয়ান। ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির আশীর্বাদপুষ্ট রক্ষণশীল সাঈদ জালিলিকে বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থার বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।

১৯৫৪ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর জন্ম নেওয়া মাসুদ পেজেশকিয়ান পেশায় একজন সনামধন্য হার্ট সার্জন। সংস্কারবাদী রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত পেজেশকিয়ান কুর্দি বংশোদ্ভূত আজারবাইজানীয় ইরানি।

মাসুদ পেজেশকিয়ান ১৯৭৩ সালে ডিপ্লোমা অর্জন করেন এবং তার নিয়োগের দায়িত্ব পালনের জন্য জাবোল চলে যান। এই সময়েই তিনি ওষুধের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। চাকরি শেষ করার পর নিজ প্রদেশে ফিরে এসে মেডিকেল স্কুলে প্রবেশ করেন এবং সাধারণ চিকিৎসায় স্নাতক হন। আশির দশকে ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় পেজেশকিয়ান সরাসরি যুদ্ধের ময়দানে যোগ দেন। সেই সময় তিনি আহত সেনাদের চিকিৎসা করেন।

১৯৮৫ সালে তিনি জেনারেল প্র্যাকটিশনার কোর্স শেষ করেন এবং মেডিকেল কলেজে ফিজিওলজি পড়া শুরু করেন। যুদ্ধের পর তাবরিজ ইউনিভার্সিটি অব মেডিকেল সায়েন্সে সাধারণ অস্ত্রোপচারে বিশেষীকরণ করে তার শিক্ষা চালিয়ে যান।

১৯৯৩ সালে ইরান ইউনিভার্সিটি অব মেডিকেল সায়েন্সেস থেকে কার্ডিয়াক সার্জারিতে একটি উপ-স্পেশালিটি পান। পরে হার্ট সার্জারিতে একজন বিশেষজ্ঞ হয়ে ওঠেন। যার ফলে তিনি ১৯৯৪ সালে তাবরিজ ইউনিভার্সিটি অফ মেডিকেল সায়েন্সের প্রেসিডেন্ট হন। এই পদে তিনি পাঁচ বছর ছিলেন।

মাসুদ পেজেশকিয়ানের রাজনৈতিক যাত্রা শুরু হয় ১৯৯৭ সালে। তিনি মোহাম্মদ খাতামির প্রশাসনে উপ-স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে যোগদান করেন। চার বছর পর তিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিযুক্ত হন। ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ইরানের পার্লামেন্টে তাবরিজ, ওস্কু এবং আজারশাহর নির্বাচনী জেলার প্রতিনিধিত্ব করেন। ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত এর প্রথম ডেপুটি স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৩ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে প্রত্যাহার করেন এবং ২০২১ সালের নির্বাচনে আবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে প্রত্যাখ্যাত হন।

মে মাসে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি নিহত হওয়ার পর দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেন মাসুদ পেজেশকিয়ান। কট্টরপন্থীদের ব্যাপক নির্বাচনী প্রচারণার মাঝে নারীর অধিকার, অধিক সামাজিক স্বাধীনতা, পশ্চিমের সঙ্গে বৈরিতায় সতর্কতা ও অর্থনৈতিক সংস্কারের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেন তিনি।

দেশে সংস্কারের পক্ষে থাকলেও ইরানের শক্তিশালী নিরাপত্তাব্যবস্থা ও শাসকদের মোকাবিলা করার কোনো উদ্দেশ্যের কথা জানাননি পেজেশকিয়ান। এছাড়া ইরানের ধর্মতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার প্রতি বিশ্বাস রয়েছে এই সাবেক আইনপ্রণেতার। তার সঙ্গে সাবেক প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির দৃষ্টিভঙ্গির বৈপরীত্য আছে।

কয়েক বছর আগেও ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির অনুগত থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে তার সমালোচক বনে যান পেজেশকিয়ান। তিনি টেলিভিশন বিতর্ক ও সাক্ষাৎকারে খামেনির নীতির বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

২০২২ সালে হিজাব পরার বিধান লঙ্ঘনের অভিযোগে ইরানের নৈতিকতা পুলিশের হেফাজতে মারা যান মাহসা আমিনি নামে এক তরুণী। তার মৃত্যুর ঘটনায় কর্তৃপক্ষের কাছে ব্যাখ্যা চান পেজেশকিয়ান। মাহসা আমিনির মৃত্যু ঘিরে ইরানজুড়ে কয়েক মাস ধরে টানা অস্থিরতা তৈরি হয়।

কিন্তু চলতি মাসের শুরুর দিকে তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বৈঠকে সরকারবিরোধী বিক্ষোভের সঙ্গে জড়িত অভিযোগে আটক শিক্ষার্থীদের বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে পেজেশকিয়ান বলেছেন, ‘রাজনৈতিক বন্দিদের নিয়ে আমার কিছুই করার সুযোগ নেই। যদি কিছু করতে চাই, তাহলে দেখব আমার কোনো কর্তৃত্ব নেই।’

১৯৯৪ সালে এক গাড়ি দুর্ঘটনায় স্ত্রী ও এক সন্তানকে হারিয়েছেন পেজেশকিয়ান। এরপর তার দুই ছেলে ও এক মেয়েকে একাই বড় করেছেন। সেই সময় আর বিয়ে করবেন না বলে ঘোষণা দেন যা এখনও বলবত আছে।