ঢাকা | বঙ্গাব্দ

ব্রাজিলের সাত গোল খাওয়ার দশকপূর্তি

ব্রাজিলের ফুটবলের সবচেয়ে দুঃখের দিন হিসেবে মারাকানা ট্র্যাজেডির নামই সবার আগে আসে।
  • | ০৮ জুলাই, ২০২৪
ব্রাজিলের সাত গোল খাওয়ার দশকপূর্তি সংগৃহীত

ব্রাজিলের ফুটবলের সবচেয়ে দুঃখের দিন হিসেবে মারাকানা ট্র্যাজেডির নামই সবার আগে আসে। ১৯৫০ সালের বিশ্বকাপে উরুগুয়ের আলসিদেস ঘিঘিয়া স্তব্ধ করে দিয়েছিলেন ব্রাজিলিয়ানদের। ভেঙে দিয়েছিলেন ব্রাজিলের প্রথম বিশ্বকাপ শিরোপার স্বপ্ন। তবে এর ৬৪ বছর পর ঘরের মাঠের দ্বিতীয় বিশ্বকাপে ব্রাজিলের সঙ্গে যা ঘটে, তা ছাপিয়ে যায় মারাকানার ট্র্যাজেডিকেও।



৮ জুলাই, ২০১৪। মারাকানা স্টেডিয়ামে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত স্বাগতিক ‘হট ফেভারিট’ ব্রাজিল। সেমিফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ শক্তিশালী জার্মানি। ম্যাচের আগে সবাই ধরেই নিয়েছিলো যে জার্মানদের উড়িয়ে দিয়ে ফাইনালে যাবে ব্রাজিল। তবে কে জানতো, সেই দিন ব্রাজিলের ইতিহাসের অন্যতম বিভীষিকাময় দিন হতে চলেছে।



ইনজুরির কারণে ব্রাজিলিয়ান তারকা নেইমার ম্যাচটিতে খেলতে পারেননি। এদিকে খেলা শুরুর পর স্টেডিয়ামে দর্শকরা তখনও নিজেদের সিটে ভালোভাবে বসতেও পারেননি, এরইমধ্যে জোয়াকিম লোর শিষ্যরা প্রথম থেকেই মরিয়া গোলের জন্য। ম্যাচের ১১ মিনিট চলছে। জার্মানির হয়ে প্রথম গোল করেন টমাস মুলার।



চোখের সামনেই হলো ৫টি গোল! তাও আবার ম্যাচের ২৯ মিনিটের মধ্যে। জার্মানি ৫, ব্রাজিল ০! বিশ্বকাপ ইতিহাসেই কোনো সেমিফাইনালের প্রথমার্ধে ৫ গোল হয়নি। এদিকে ব্রাজিল গোল করা তো দূরের কথা জার্মানির আক্রমণই হজম করতে পারছিলো না। ২৩ মিনিটে মিরোস্লাভ ক্লোসা দ্বিতীয় গোল করার পরই পাশের গ্যালারিতে গায়ে হলুদ জার্সি, গালে জাতীয় পতাকা আঁকা এক তরুণীকে দেখা যায় হাউমাউ করে কাঁদতে। পরের ৭ মিনিটের মধ্যে জার্মানি আরও ৩ গোল করে ফেলার পর সেই কান্না সংক্রামক হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে গোটা মারাকানা স্টেডিয়ামে।



পাসিং ফুটবল দলগতভাবে কীভাবে খেলতে হয়, সেটাই যেন ব্রাজিলকে শেখাচ্ছিলো জার্মানরা। জার্মানির সেই বিজয়ী দলের খেলোয়াড় ম্যাটস হামেলস পরে জানিয়েছিলেন, তারা ইচ্ছা করেই বিরতির পর আর কোনো জাদুকরী খেলা খেলতে চাননি। তারা শুধু চেয়েছিলেন ম্যাচটি শেষ করতে। ম্যাটস হামেলস বলেন, ‘আমরা শুধু চেয়েছি খেলায় মনোযোগী থাকতে। খেলার মধ্যে সেলেসাওদের কোনোভাবেই অপমান করতে চাইনি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, খেলার মধ্যে সিরিয়াস থাকতে হবে। তবে ব্রাজিলকে অপমান করা হয়, এমন কিছু থেকে বিরত থাকব। খেলার মধ্যে জয়-পরাজয় থাকবে। তবে প্রতিপক্ষকে সম্মান দেখাতে হবে। আমরা সে কাজ করেছি। দ্বিতীয়ার্ধের পর আমরা কোনো জাদুকরী খেলা দেখাইনি। ’



ম্যাচের ৯০ মিনিটে ব্রাজিলের হয়ে সান্ত্বনার একটি গোল করেন অস্কার। খেলা শেষে ম্যাচের স্কোরলাইন দাঁড়ায় ৭-১। খেলার শেষে জার্মানিরা সেলেসাওদের সান্ত্বনা দিয়েছিলো। অঝোরে কেঁদেছিলেন ব্রাজিলের ভক্ত-সমর্থক হতে শুরু করে ফুটবলাররা। অশ্রুসিক্ত চোখে দর্শকদের কাছে হাতজোড় করে ক্ষমা চাইতেও দেখা যায় ব্রাজিলিয়ান তারকা ডেভিড লুইজকে।



বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে জার্মানির এই জয়টি ছিল সর্বকালের সবচেয়ে বড় জয়। সেইবারের বিশ্বকাপ হাতছাড়া হয়নি জার্মানদেরও। ব্রাজিলকে কাঁদানোর পর ফাইনালে অতিরিক্ত সময়ের শেষদিকের গোলে আর্জেন্টিনার স্বপ্নভঙ্গ করে চতুর্থবারের মতো ফুটবল বিশ্বকাপ জিতে নেয় জার্মানি।