সন্ধ্যার ঠিক একটু আগে জঙ্গলের ভিতর থেকে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নার আওয়াজ শুনতে পান এক রাখাল। আওয়াজটা শুনে মনে হচ্ছিল, কেউ খুব কষ্ট পাচ্ছেন। চারপাশ কিছুটা অন্ধকার হয়ে আসায় ভয়ও লাগছিল রাখালের। তারপরও কোন দিক থেকে আওয়াজটা আসছে, প্রথমে সেটা বোঝার চেষ্টা করেন। তারপর সেদিকেই ঘন জঙ্গলে এগিয়ে যান।
ভয় লাগলেও কৌতুহল ও সাহসে ভর করে ওই আওয়াজের কাছাকাছি পৌঁছাতেই চমকে ওঠেন রাখাল। তিনি দেখেন, ছেঁড়া পোশাক, গাছের সঙ্গে শিকলে পা বাঁধা মাঝবয়সী এক নারী। মুখ শুকিয়ে গেছে, চোখগুলো যেন ঠিকরে বেরিয়ে আসছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে, বেশ কয়েকদিন ধরে অভুক্ত। গভীর জঙ্গলে একজন নারীকে এমন অবস্থায় দেখে রাখাল পুরো অবাক হয়ে যান। দ্রুত তিনি স্থানীয়দের বিষয়টি জানান। তারা পুলিশে খবর দেয়। এরপর পুলিশ এসে ওই নারীকে উদ্ধার করে। রহস্যময় এই ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের সিন্ধুদুর্গের একটি জঙ্গলে। খবর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ও এনডিটিভি।
পুলিশ জানায়, ওই নারীর পা শিকল গিয়ে গাছের সঙ্গে বাঁধা ছিল। তার কাছ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পাসপোর্ট এবং বেশকিছু কাগজ পাওয়া গেছে। তাকে উদ্ধার করে সাবন্তওয়াড়ির এক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে সিন্ধুদুর্গের ওরসে স্থানান্তরিত করা হয়। পরে তাকে গোয়া মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। তার অবস্থা এখন স্থিতিশীল। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, নারীর মানসিক সমস্যা রয়েছে। তার কাছে কয়েকটি প্রেসক্রিপশনও পাওয়া গেছে।
পুলিশ আরও জানিয়েছে, ওই নারীর কাছে একটি আধার কার্ডও (ভারতীয় পরিচয় পত্র) পাওয়া গেছে। তামিলনাড়ুর একটি ঠিকানা লেখা রয়েছে তাতে। মাঝবয়সী এই নারীর নাম ললিতা কায়ি বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। উদ্ধার হওয়া নথি যাচাই করে জানার চেষ্টা চলছে তিনি ভারতের নাগরিক না কি অন্য কোনো দেশের। প্রাথমিকভাবে পুলিশ জানতে পেরেছে, ১০ বছর ধরে ভারতেই রয়েছেন মহিলা। তবে কীভাবে ওই জঙ্গলে পৌঁছলেন, কে বা কারা তাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছিল, তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ।