ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বহুল আলোচিত আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ড ঘিরে মুখ্যমন্ত্রী মমতার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে রাজ্য সচিবালয় ঘেরাও করে হাজার হাজার মানুষ। মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) সকালের দিকে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সচিবালয় অভিমুখে ‘নবান্ন অভিযান’ শুরু করে শিক্ষার্থীদের অরাজনৈতিক সংগঠন পশ্চিমবঙ্গ ছাত্রসমাজ।
দেশটির সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতার রাস্তায় রাস্তায় ব্যাপক বিশৃঙ্খলপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। জায়গায় জায়গায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বেধেছে আন্দোলনকারীদের। বিক্ষুব্ধদের ঠেকাতে চলছে লাঠি থেকে কাঁদানে গ্যাস, জলকামান। তবে বিক্ষোভকারীরা আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে লক্ষ্য করে পাল্টা ইট-পাথর নিক্ষেপ করেছেন।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের পদত্যাগের এক দফা দিবিতে পশ্চিমবঙ্গ ছাত্রসমাজের ডাকে শত শত মানুষ সচিবালয় অভিমুখে পদযাত্রা শুরু করে। নবান্ন অভিযানের ডাক ‘ছাত্র সমাজ’ দিলেও আরজি কর-কাণ্ডের বিচারের দাবিতে রাস্তায় নামতে দেখা গিয়েছে মধ্যবয়সিদেরও।
আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে মঙ্গলবার নবান্ন অভিযানের ডাক দেয় ‘পশ্চিমবঙ্গের ছাত্র সমাজ’। কোনও সংগঠন নয়, তারা সমাজের প্রতিনিধি— এই মর্মেই নিজেদের পরিচয় দেন নবান্ন অভিযানের ডাক নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করা তিন ছাত্র।
‘ছাত্র’দের এই অভিযান নিয়ে সতর্ক ছিল পুলিশ। দিকে দিকে নিরাপত্তা এবং টহলদারির ব্যবস্থা করা হয়। বড় বড় ব্যারিকেড তৈরি করা হয় সাঁতরাগাছি, হাওড়া ময়দান, ফোরশোর রোড, লক্ষ্মীনারায়ণতলা এবং মন্দিরতলায়। নবান্নের আশপাশে গলির মুখগুলো ব্যারিকেড দিয়ে ঘিরেও ফেলা হয়। জলকামান এবং ড্রোনের ব্যবস্থাও ছিল। কলেজ স্ট্রিট এবং এজেসি বোস রোড-সহ শহরের বিভিন্ন জায়গায় আন্দোলনকারীদের আটকাতে ক্রেনের মাধ্যমে কন্টেনার নামায় পুলিশ।
তবে অভিযানের সময় গড়াতেই দিকে দিকে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। কলকাতা-হাওড়ার বিভিন্ন জায়গায় জমায়েত বাড়ে। পরিস্থিতি সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় পুলিশকে। হাওড়ার ফোরশোর রোডেও ছড়ায় উত্তেজনা। ফের পুলিশের ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করেন প্রতিবাদীরা। পাল্টা লাঠিচার্জ করে পুলিশের। ব্যবহার করা হয় জলকামানও।
ব্যারিকেডের ওপরে উঠে স্লোগান দিতে থাকে বিক্ষোভকারীরা। মিছিল এবং জমায়েত থেকেও স্লোগান উঠেছে, দাবি এক, দফা এক, মমতার পদত্যাগ। বিক্ষোভকারীদের অনেকের হাতে থাকা কালো পোস্টারেও ছিল এই স্লোগান। কারও কারও হাতে রয়েছে জাতীয় পতাকা। বিক্ষোভকারীদের বক্তব্য, আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে তারা নবান্নে যেতে চান। কিন্তু পুলিশ তাদের বাধা দিচ্ছে।
১টা নাগাদ সাঁতরাগাছিতে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে এগোনোর চেষ্টা করেন বিক্ষোভকারীরা। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ছোড়া হয় বলেও অভিযোগ। পাল্টা লাঠিচার্জ করে পুলিশ। পুলিশের লাঠিচার্জে সাময়িক ভাবে ছত্রভঙ্গ হয় জমায়েত। বিক্ষোভকারীদের ছোড়া ইটে সাঁতরাগাছিতে মাথা ফাটে র্যাফের এক জনের। তাকে ভর্তি করানো হয় হাসপাতালে। সাঁতরাগাছিতে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ছুড়তে শুরু করেন বিক্ষোভকারীরা। ইটের আঘাতে আহত হন কয়েক জন পুলিশকর্মী। সাঁতরাগাছি স্টেশনে ট্রেন চলাচল থমকে যায়।
হাওড়া সেতুতেও পুলিশের ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করেন বিক্ষোভকারীরা। ব্যারিকেডের একাংশ ভাঙতেই জলকামান চালানো শুরু করে পুলিশ। ব্যবহার করা হয় কাঁদানে গ্যাসও। লাঠিচার্জ করা হয়। পুলিশের ত্রিমুখী আক্রমণে ছত্রভঙ্গ হয়ে গিয়েও ফিরে ফিরে আসেন বিক্ষোভকারীরা।
কলকাতার পুলিশ ট্রেনিং স্কুল (পিটিএস)-এর কাছেও বিক্ষোভকারীদের আটকাতে জলকামান চালায় পুলিশ। পিটিএসে কয়েক জন বিক্ষোভকারীকে ব্যারিকেডের উপরে উঠে স্লোগান দিতে দেখা যায়। মহাত্মা গান্ধী রোডেও উত্তেজনা ছড়ায়। সেখানে পুলিশের ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করেন বিক্ষোভকারীরা। পুলিশও জলকামান ছোড়ে। তেড়ে যায় লাঠি উঁচিয়ে।
কয়েক জায়গায় আন্দোলনকারীদের প্রতিহত করতে সক্রিয় হয় পুলিশ। বেশ কয়েক জনকে আটক করা হয়। আন্দোলনকারীদের টেনেহিঁচড়ে গাড়িতে তুলতেও দেখা গিয়েছে পুলিশকে। আবার হাওড়া ময়দানে পুলিশকে ধরে মারধর করার ছবিও প্রকাশ্যে এসেছে। বিক্ষোভকারীদের ছোড়া ইটের ঘায়ে আহত হয়েছেন চন্ডীতলার এক সার্কল ইনস্পেক্টর (সিআই)। হাওড়া ময়দানে পুলিশকে তাড়া বিক্ষোভকারীদের একাংশের। পুলিশকে রাস্তায় ফেলে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে।