প্রথম ধাপে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় এখন পর্যন্ত ৮১ জন নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিস্কারের পরও তৃণমূলের নেতাদের দমাতে পারছে না বিএনপি। ফলশ্রুতিতে দ্বিতীয়ধাপের নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছেন, যা প্রথম ধাপের থেকে বেশি। ধারণা করা হচ্ছে, তৃতীয় ধাপে আরও প্রার্থী বাড়তে পারে।
সারাদেশ থেকে প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রথম ধাপের চেয়ে দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিএনপির প্রার্থীর সংখ্যা বেশি। প্রথম ধাপে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হন ২৮ জন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত দ্বিতীয় ধাপে ৩৩ জন নেতা চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। একইভাবে ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীর সংখ্যাও অনেক।
বহিষ্কারের মতো কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়েও বিএনপির নেতাদের উপজেলা নির্বাচন থেকে ফেরানো যাচ্ছে না। দলটির কেন্দ্রীয় দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, উপজেলা পরিষদের দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে বিএনপির ৭৩ জন নেতা মনোনয়ন ফরম নিয়েছিলেন। এর মধ্যে মাত্র ১২ জনকে বুঝিয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করানো সম্ভব হয়েছে। এখনো ৬১ নেতা নির্বাচনে রয়ে গেছেন। তৃতীয় ধাপেও বিএনপির অন্তত অর্ধশত নেতা–কর্মী প্রার্থী হয়েছেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী দলটির সাবেক, বর্তমান ও একজন বহিষ্কৃত নেতাসহ ২৬ জনের নাম পাওয়া গেছে। বাকি ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র নিয়েছেন।
বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, যে ৬১ জন নেতা দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন, তাঁদের গত বৃহস্পতিবার কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়েছে। পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে প্রথম ধাপের মতো দ্বিতীয় ধাপেও ৬১ জনকে একযোগে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তের দিকে যাচ্ছে বিএনপি। যদি এর মধ্যে কেউ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা না দেন, তাহলে প্রথম ধাপের ৭২ জনসহ দুই ধাপে বিএনপির নেতাদের বহিষ্কারের সংখ্যা দাঁড়াবে ১৩৩–এ।
প্রথম ধাপে বহিষ্কৃত নেতাদের মধ্যে ২৮ জন উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে, ২৪ জন ভাইস চেয়ারম্যান পদে এবং ২১ জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্যকারীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ময়মনসিংহে। এই সাংগঠনিক বিভাগের ১৬ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়া রংপুরে ১১, রাজশাহীতে ১০, সিলেটে ৯, কুমিল্লায় ৮, ফরিদপুরে ৬, ঢাকায় ৫, চট্টগ্রামে ৪, খুলনায় ৩ এবং বরিশাল বিভাগের ১ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
বিএনপির নেতারা বলছেন, প্রার্থীরা দলীয় নির্দেশনা অমান্য করার পাশাপাশি সাংগঠনিক ব্যবস্থাকেও আমলে নিচ্ছেন না। এমনকি প্রার্থীদের নির্বাচনবিমুখ করতে কেন্দ্রীয়, বিভাগীয় ও জেলার নেতাদের বিশেষভাবে দায়িত্ব দেওয়া হলেও সেটিও খুব একটা কাজে লাগছে না। এ নিয়ে দলের নীতিনির্ধারকেরা অস্বস্তিতে পড়েছেন।
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে চেয়ারম্যান পদের প্রার্থী উপজেলার আহ্বায়ক রহিমুল ইসলাম জানান, দলের অবস্থান যে কঠোর, তা তিনি জানেন, তবু তিনি নির্বাচন করবেন।
প্রথম ধাপেও প্রার্থীদের থামাতে বিএনপির নেতৃত্বের তৎপরতা তেমন একটা কাজে লাগেনি। বোঝানোর পর মাত্র ১৬ জন নেতা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন। শেষ পর্যন্ত প্রথম ধাপে ৭২ জনকে বহিষ্কার করতে হয়। বহিষ্কৃত ব্যক্তিদের মধ্যে ২৮ জন চেয়ারম্যান পদে, ২৪ জন ভাইস চেয়ারম্যান ও ২০ জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী রয়েছেন।
সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ভোট করে আগেও জিতেছিলেন গণেন্দ্র চন্দ্র সরকার। এবারও ভোটে আছেন। বিএনপি ভোটে না থাকায় তিনি এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী। গণেন্দ্র ছিলেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি। বহিষ্কারাদেশ পেয়েও তিনি দমে যাননি। বরং ভোটের প্রচারে নেমে কেন্দ্রীয় নেতাদের তীব্র সমালোচনা করছেন।
তিনি বলেন, আমার ৫০ বছরের রাজনৈতিক জীবন। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে তৃণমূলের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা কেন্দ্রে বসে নির্দেশনা দেয়। বাস্তবে মাঠের খবর নেয় না।
তৃণমূলের কর্মীদের থেকে কেন্দ্রীয় নেতারা দূরে সরে যাচ্ছেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, তারা দলকে ধ্বংস করে দিচ্ছেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের বহিষ্কারের এই হঠকারী সিদ্ধান্তকে আমি মানি না। আমি নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবো।