হিটলারের প্রচারমন্ত্রী জোসেফ গোয়েবলসের একটি বাড়ি বিনামূল্যে দেওয়ার প্রস্তাব করেছে বার্লিন সরকার। কয়েক দশক ধরে এটি বিক্রির জন্য ক্রেতা না খুঁজে পেয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
শুক্রবার (৩ মে) ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফের এক প্রতিবেদনে এ কথা জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বার্লিন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী স্টেফান ইভার্স বৃহস্পতিবার (২ মে) ঘোষণা করেছেন, এই জরাজীর্ণ বাড়িটি ‘যে কেউ’ নিতে চাইলে তাকে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
১৭ হেক্টর জায়গার উপর নির্মিত বাড়িটি রক্ষণাবেক্ষণে সরকারের প্রচুর অর্থ খরচ হচ্ছে। তাই বাড়িটি নিতে আগ্রহী কাউকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বার্লিন কর্তৃপক্ষ।
হ্রদের পাশের এই দৃষ্টিনন্দন বাড়ি ঘিরে অবশ্য অপ্রীতিকর ইতিহাস রয়েছে। জার্মানির রাজধানী বার্লিনের উত্তরে নিরিবিলি এলাকায় বাড়িটির অবস্থান।
১৯৩৯ সালে হিটলারের হাত ধরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জড়ায় জার্মানি। সঙ্গে ছিল মিত্র ইতালি ও জাপান। তাদের অক্ষশক্তি বলা হতো। প্রতিপক্ষ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও সোভিয়েত ইউনিয়নের জোট মিত্রপক্ষ নামে পরিচিত। এই বিশ্বযুদ্ধে ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ গণহত্যা দেখে বিশ্ববাসী। প্রচারমন্ত্রী হিসেবে গোয়েবলস হিটলারের বেশ ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তিনি নাৎসিদের বিভিন্ন প্রোপাগান্ডা ছড়াতে মূল ভূমিকা পালন করেন।
বিভিন্ন গণমাধ্যম যেমন— সংবাদপত্র, রেডিও, চলচ্চিত্র ব্যবহার করে নাৎসিদের নানা বিষয় প্রচারে দক্ষতা ছিল গোয়েবলসের। এছাড়া তিনি জার্মানির ভেতর তথ্যপ্রবাহের বিষয়টিও নিয়ন্ত্রণ করতেন।
হিস্টোরি ডটকমের তথ্য অনুযায়ী, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে স্ত্রী ও ছয় সন্তানকে নিয়ে আত্মহত্যা করেন গোয়েবলস।
১৯৩৬ সালে গোয়েবলস বাড়িটি তৈরি করেন। বিভিন্ন অভিনেত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে এই বাড়িটি ব্যবহার করতেন।
বর্তমানে এ বাড়ি বার্লিন সরকারের সম্পত্তি। কিন্তু বাড়িটির সঙ্গে জড়িয়ে থাকা নাৎসি শাসনামলের অন্ধকার ইতিহাস ও রক্ষণাবেক্ষণের অধিক ব্যয় নিয়ে বিপদে পড়েছে কর্তৃপক্ষ।
বার্লিনের অর্থমন্ত্রী স্টেফান ইভার্স বলেন, যিনি বাড়িটির দেখভাল করতে আগ্রহী হবেন, তাকে সরকারের তরফ থেকে বাড়িটি উপহার হিসেবে দেওয়া হবে।
গোয়েবলসের এই বাড়িতে ২০০০ সাল থেকে কেউ বসবাস করে না। বার্লিন থেকে ১০ মাইল উত্তরে অবস্থিত বাড়িটি এখন ভগ্নদশায়। এখানকার অনেক জানালা ভেঙে গেছে। অনেক দরকারি জিনিসপত্র খোয়া গেছে। বাড়িটিতে বসবাস করতে হলে তা মেরামত করতে হবে।
বাড়িটি ঘিরে এখন নানা রকম প্রস্তাব দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে ফেডারেল সরকারের অধীনে বাড়িটিকে দেওয়ার পাশাপাশি প্রয়োজনে ব্যক্তিমালিকানায় এটি দেওয়া যেতে পারে।
অর্থমন্ত্রী জানান, ‘যদি কোনো নতুন মালিক না পাওয়া যায় যেমনটি গত দশক থেকে পাওয়া যাচ্ছে না, তাহলে বার্লিন সরকারের কাছে ধ্বংস করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প থাকবে না।’
জার্মান ব্রডকাস্টার জেডডিএফের মতে, ব্র্যান্ডেনবার্গ রাজ্যটি এখন পর্যন্ত সম্পত্তি অধিগ্রহণ করতে আগ্রহী নয়। কারণ, এটি সংস্কারে খরচ হবে আনুমানিক ৩৫০ মিলিয়নে পাউন্ড।
অপরদিকে এটি ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিলে খরচ হবে ৫০ মিলিয়ন পাউন্ড।