ঢাকা | বঙ্গাব্দ

তৈরি পোশাকের শুল্ক ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব দেবেন প্রধান উপদেষ্টা

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের বড় বাজার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তবে দেশটিতে তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্ষেতে শুষ্কে বড় বৈষম্যের শিকার হচ্ছে বাংলাদেশ।
  • | ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
তৈরি পোশাকের শুল্ক ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব দেবেন প্রধান উপদেষ্টা ছবি : সংগৃহীত।

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের বড় বাজার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তবে দেশটিতে তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্ষেতে শুষ্কে বড় বৈষম্যের শিকার হচ্ছে বাংলাদেশ। ভিয়েতনাম মাত্র ৭ শতাংশ শুল্কে দেশটিতে তৈরি পোশাক রপ্তানি করলেও বাংলাদেশকে দিতে হয় ১৮ শতাংশ।


মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্ক স্থানীয় সময় সকাল ১১টায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সাইডলাইনে হচ্ছে ওই বৈঠক। ভেন্যু জাতিসংঘ সদর দপ্তর।


সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী পররাষ্ট্রনীতির কারণে বৈষম্যের বিষয়টি সমাধান সম্ভব হয়নি। তবে ইউনূস-বাইডেনের এ বৈঠকে এই শুষ্ক কমিয়ে ৫ শতাংশ বা ভিয়েতনামের সমান করার প্রস্তাব দেবেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।


প্রায় তিন দশক বছর পর হওয়া এ বৈঠকে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক খাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জিএসপি সুবিধা ফেরত, শুল্ক ১৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করবেন নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এছাড়াও বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক দীর্ঘমেয়াদী উন্নত করা, যে প্রক্ষাপটে তিনি বাংলাদেশ দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন তার বর্ণনা দিতে পারেন ইউনূস। ভারতে অবস্থান করা শেখ হাসিনার বিষয়ে দুই রাষ্ট্রপ্রধানের বৈঠকে উঠে আসতে পারে বলেও জানা গেছে।  


জাতিসংঘের স্থায়ী মিশনের কূটনীতিকরা বলছেন, জাতিসংঘ অধিবেশনের ফাঁকে কোনো রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধানের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্টের এমন বৈঠক বিরল ঘটনা। আর বাংলাদেশের জন্য এটা ছিল অনেকটা স্বপ্নের মত।


৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ৮ সেপ্টেম্বর সরকার গঠনের পর প্রধান উপদেষ্টার এটাই প্রথম বিদেশ সফর।


প্রধান উপদেষ্টার জাতিসংঘ অধিবেশনকে ঘিরে বিশ্বনেতাদের নজর থাকবে। বিশেষ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গেবৈঠকটি সবাইকে অবাক করে দিয়েছে।


আগামী শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘে গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা। তার বক্তব্যে বিগত দুই মাসে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া অভাবনীয় গণঅভ্যুত্থানের বিবরণ ও আগামীদিনে জনভিত্তিক, কল্যাণমুখী ও জনস্বার্থে নিবেদিত একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলার দৃঢ় প্রত্যয় বিশ্ব-দরবারে তুলে ধরবেন। 


পাশাপাশি আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের বলিষ্ঠ অবস্থান, জলবায়ু পরিবর্তন ও এর প্রভাব, জলবায়ু ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, বিশ্বব্যাপী সংঘাত, রোহিঙ্গা সংকট, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতিকূলতা, উন্নয়নশীল দেশসমূহ থেকে সম্পদ পাচার প্রতিরোধ, নিরাপদ অভিবাসন, অভিবাসীদের মৌলিক পরিষেবা প্রাপ্তির নিশ্চয়তা, জেনারেটিভ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পরিপ্রেক্ষিতে প্রযুক্তির টেকসই হস্তান্তর এবং ফিলিস্তিন সম্পর্কিত বিষয়সমূহ তার বক্তব্যে স্থান পাবে।


তাছাড়া প্রধান উপদেষ্টা ডাচ্‌ প্রধানমন্ত্রী, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, নেপালের প্রধানমন্ত্রী, ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, জাতিসংঘ মহাসচিব, জাতিসংঘ মানবাধিকার সম্পর্কিত হাইকমিশনার, বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রেসিডেন্ট এবং ইউএসএইড’র প্রশাসকের সঙ্গে বৈঠক করবেন।


ইতালির প্রেসিডেন্ট, কুয়েতের ক্রাউন প্রিন্সের সঙ্গেও বৈঠক হতে পারে। এছাড়াও, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করতে পারেন বলে আলোচনা রয়েছে।


এ বিষয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এম তৌহিদ হোসেন বলেন, এ কথা বলার অবকাশ রাখে না যে, প্রধান উপদেষ্টার পরিচিতি এবং সুনাম বিশ্বব্যাপী। এ কারণে অনেকগুলো বিশ্বখ্যাত সংবাদ সংস্থা তার সাক্ষাৎকার গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছে। এছাড়া, বিভিন্ন পর্যায়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ও সভায় অংশগ্রহণের জন্যও অনুরোধ এসেছে। যেহেতু তিনি মাত্র তিনদিন নিউ ইয়র্কে অবস্থান করবেন, সেহেতু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষে এই স্বল্প সময়ের মধ্যে সবার অনুরোধ রক্ষা করা বেশ কঠিন।


প্রধান উপদেষ্টার সফর সঙ্গী একজন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের গার্মেন্টস পণ্যের সবচেয়ে বড় ক্রেতা। আমি আশা করব ড. ইউনূস-বাইডেন বৈঠকে জিএসপি ফিরে পাওয়ার ও শুষ্ক কমানোর বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে স্থান পাবে।