ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে আবারও অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। যুদ্ধবিরতির আলোচনা নিয়ে আবারও আলোচনা করতে হামাসের নেতা মিসরের রাজধানী কায়রোতে ফিরে গেলেও, যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে গেছে বলে জানা গেছে। কারণ, গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দাবি প্রত্যাখান করেছেন ইসরাইলি নেতা বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। অচলাবস্থার জন্য দুই পক্ষ একে অপরকে দায়ী করেছে।
যুক্তরাজ্যের বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও বিবিসি জানিয়েছে, রোববার মিশর ও কাতারের মধ্যস্থতাকারীদের সাথে হামাসের কর্মকর্তাদের দ্বিতীয় দিনের আলোচনায় দুই পক্ষই তাদের অবস্থান ও দাবির বিষয়ে অনড় রয়েছে হামাস বলছে, যদ্ধবিরতির চুক্তির মধ্যে অবশ্যই স্থায়ীভাবে যুদ্ধ বন্ধের প্রতিশ্রুতি থাকতে হবে। হামাসের এই দাবি সরাসরি প্রত্যাখান করেছে ইসরাইল। দেশটি যুদ্ধে বন্ধের কোন চুক্তিতে রাজি নয়।
কায়রো সংলাপের সঙ্গে জড়িত একটি সূত্র জানিয়েছে, দুই পক্ষের অনড় অবস্থার কারণে যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা ভেস্তে যেতে পারে। তিনি বলেছেন, গাজা উপত্যকায় একটি যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি বিনিময়ের জন্য একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। কারণ, ইসরাইল যুদ্ধ শেষ করতে অস্বীকার করছে। এই অস্বীকৃতির কারণে আলোচনায় আর কোন অগ্রগতি হয়নি।
রোরবার কায়রো টিভি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, আলোচনার বিষয়ে একটি ইতিবাচক পরিবেশ রয়েছে। হামাসের একজন কর্মকর্তা একই দিনে সিবিএসকে বলেছেন, আলোচনায় কোনো অগ্রগতি হয়নি। হামাস বারবার বলে আসছে যুদ্ধ বন্ধের লিখিত প্রতিশ্রুতি ছাড়া কোন চুক্তিতে তারা নেই। রোববার তেল আবিব থেকে এই দাবি প্রত্যাখান করায়, যুদ্ধবিরতির আপাতত কোন সম্ভাবনা দেখতে না সংশ্লিষ্টরা।
গাজা উপত্যকায় যুদ্ধরিরতি নিয়ে হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য শনিবার ছিলো শেষ দিন। কিন্তু সেদিন হামাসের নেতারা কায়রোতে সফর করলেও, ইসরাইল কোন প্রতিনিধি দল পাঠায়নি। ফলে আরও একদিন সময় বাড়ানো হয়। আলোচনার টেবিলে সবাই যখন তেল আবিবের সবশেষ অবস্থান জানার জন্য অপেক্ষায় করছিলেন, তখনই খবর আসেনি হামাসের দাবি প্রত্যাখান করেছেন নেতানিয়াহু।
এক ইসরাইলি কর্মকর্তা মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি’কে জানিয়েছেন, গাজার দক্ষিণে রাফাহ শহরে অভিযানের বিষয়ে ইসরাইল প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ইসরাইলে হামলা শুরুর পর রাফাহতে আশ্রয় নিয়েছেন গাজার প্রায় ১২ লাখ বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি। তাই সেখানে অভিযান চালানো হলে বড় ধরনের মানবিক বিপর্যয় হতে পারে বলে ইসরাইলকে সতর্ক করে আসছে আমেরিকা ও পশ্চিমারা।
ইসরাইলের ওই কর্মকর্তা এপি’কে আরও জানান, জিম্মি মুক্তির বিনিয়মে গাজায় স্থায়ীভাবে যুদ্ধের বন্ধ এবং রাফাহ অভিযান বন্ধে কোন অবস্থাতেই রাজি হবে না তেল আবিব। আর হামাসের একজন কর্মকর্তা শনিবার আল-জাজিরাকে নিশ্চিত করেছেন যে, আলোচনায় ইসরাইলের অনড় অবস্থান একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর সম্ভাবনাকে বাধাগ্রস্ত করেছে। তিনি মনে করেন, যুদ্ধ চালিয়ে নেয়ার পক্ষেই রয়ে গেছে ইসরাইল।
হামাসের কর্তকর্তা বলেন, ইসরাইল যুদ্ধ বন্ধ করতে রাজি হচ্ছে না, কারণ তারা দখলদারিত্ব অব্যাহত রাখতে চায়। গাজায় আগ্রাসন বন্ধের প্রতিশ্রুতি না দিয়ে, কাঠামোগত শর্তের বিনিয়মে ইসরাইলি জিম্মিদের মুক্ত কর নিতে চাইছে। তিনি জানান, নেতানিয়াহু ব্যক্তিগতভাবে চুক্তিতে পৌঁছাতে বাধা দিয়েছেন। হামাস কোনভাবে এমন চুক্তিতে রাজি হবে না, যেখানে স্পষ্টভাবে যুদ্ধ বন্ধের প্রতিশ্রুতি নেই।
নেতানিয়াহুর জোটের উগ্র ডানপন্থী দলের নেতারা, জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন গাভির এবং অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়ে গাজায় যুদ্ধের যবনিকা টানা হলে এবং রাফাহ অভিযান বাতিল হলে সরকার থেকে সরে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুও বলছেন, চুক্তি হোক না হোক রাফাগ অভিযান থেকে সরে আসবেন না তিনি।