বাংলাদেশের মাটিতেই এবার অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের। তবে রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে এ টুর্নামেন্ট সরিয়ে নেয়া হয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে। সেখানেই উদ্বোধনী ম্যাচে আজ স্কটিশদের বিপক্ষে মাঠে নামে বাংলাদেশ। শারজায় আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ ১১৯ রানের সংগ্রহ পায়। সেই লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে টাইগ্রেস বোলারদের তোপে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১০৩ রানে থামে স্কটল্যান্ড। তাতে ১৬ রানের জয় পায় বাংলাদেশের মেয়েরা।
এতে ১০ বছর বিশ্বকাপে জয়ের দেখা পায় টাইগ্রেস মেয়েরা। বাংলাদেশের মেয়েরা বিশ্বকাপে মঞ্চে ২০১৪ থেকে শুরু করে, সেই বছরই দুইটি জয়ের দেখা পায়। এরপর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আর জয়ের দেখা পায়নি টাইগ্রেসরা। ম্যাচের হিসেবে ১৬ আর টুর্নামেন্টের হিসেবে ৪টি। অবশেষ নবম আসরে এসে সেই খরা কাটিয়ে জয়ের দেখা পেয়েছে। এদিকে এই ম্যাচে টস করতে নেমেই শততম ম্যাচের মাইলফলক ছুয়েছেন টাইগ্রেস অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি।
ওভার প্রতি ৬ রানের লক্ষ্য নিয়ে নামা স্কটিশদের বড় পরীক্ষায় ফেলেন রিতু মনি। ডানহাতি এ মিডিয়াম পেসার ৪ ওভারে ১৫ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট। তবে বাংলাদেশের দেওয়া ১২০ রানের ছোট লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি স্কটল্যান্ডের। দলীয় ১২ রানে ফাহিমা খাতুনের বলে আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন সাসকিয়া হোরলেই। প্যাভিলিয়নে যাবার আগে ৮ রান করেন তিনি। দ্বিতীয় উইকেটে চাপ সামলিয়ে জুটি গড়তে পারেননি সারাহ ও ক্যাথরিন ব্রেইস।
দলীয় ৩১ রানে ব্যাক্তিগত ১১ করে সাজঘরে ফেরেন ব্রেইস। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে ক্যাথরিন
ব্রাইসকে ফেরান মারুফা আক্তার। এরপর দ্রুত তৃতীয় উইকেটের দেখাও পায় বাংলাদেশের মেয়েরা। দলীয় ৪৯ রানে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন অ্যালিসা। যাওয়ার আগে ১১ রান করেন তিনি। এরপর আরে ঘুরে দাড়াতে পারেননি স্কটিশরা। একপ্রান্তে উইকেট হারালেও অন্যপ্রান্ত আগলে রেখে রানের চাকা সচল রাখেন সারাহ।
তবে সঙ্গ দিতে ব্যর্থ হন মিডেল অর্ডারের ব্যাটাররা। শেষ পাঁচ ওভারে ৪৮ আর শেষ দুই ওভারে ৩১ রানের সমীকরণ না মেলাতে পেরে পরিষ্কার ব্যবধানেই হারে প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলতে আসা স্কটল্যান্ড। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১০৩ রানে থামে স্কটিশদের ইনিংস। তাতে ১৬ রানের জয় পায় বাংলাদেশ।
বল হাতে টাইগ্রেসদের হয়ে সর্বোচ্চ ২ উইকেট নেন রিতু মনি। ফাহিমা খাতুন, মারুফা আখতার, রাবেয়া খান ও নাহিদা আখতার নেন একটি করে উইকেট। অপর স্কটিশ ব্যাটসম্যান রান আউট হন। এর মধ্যে ক্যাথারিন ফ্রেসারকে আউট করে আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে ১০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন নাহিদা। বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে এটি প্রথম কীর্তি, সব মিলিয়ে মেয়েদের ক্রিকেটে ১৪তম।
এর আগে শারজায় টসে জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের হয়ে ইনিংস শুরু করতে নামেন সাথী রানী ও মুর্শিদা খাতুন। তবে স্কটিশদের মিডিয়াম পেসের সামনে নিজেদেরকে মেলে ধরতে পারেননি টাইগ্রেস দুই ওপেনার। দলীয় ২৬ রানে ১২ রান করে আউট হন মুর্শিদা। দ্বিতীয় উইকেটে নামা সুবহানা মোস্তারিকে সঙ্গে নিয়ে ৪২ রানের জুটি গড়েন সাথী।
কিন্তু দলীয় ৬৮ রানে ৩২ বলে ২৯ রান করে ফিরে যান সাথী। তার বিদায়ে পর ধস নামে টাইগার ব্যাটরদের। ৩৫ রানের মধ্যে আরও ৪ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকে বাংলাদেশ। মোস্তারি ৩৮ বলে ৩৬, স্বর্না আক্তার ৭ বলে ৫, রিতু মনি ৪ বলে ও রানের খাতা খোলার আগেই তাজ নেহার সাজঘরে ফিরে যান।
টাইগ্রেসদের ব্যাটিং বিপর্যের মধ্যে দিয়ে রানের চাকা সচল রাখেন অধিনায়ক জ্যোতি। আউট হওয়ার আগে ১৮ বলে ১৮ রান করেন তিনি। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১১৯ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। স্কটল্যান্ডের হয়ে বল হাতে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন ক্যাথরিন ফ্রেজার।
বাংলাদেশ দলের পুঁজিটা যে খুব বেশি বড় হয়নি, সেটি ম্যাচের বিরতিতে সম্প্রচার চ্যানেলে মোশতারিই স্বীকার করে নেন। তবে বোলাররা ওই স্বল্প পুঁজিকেই জয়ের জন্য যথেষ্ঠ বানিয়ে নেন। যার সুবাদে এসেছে দীর্ঘ খরার পর জয়। স্কটিশদের হারানোর আগে বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সর্বশেষ জিতেছিল ২০১৪ সালে। সে বার সিলেটে নবম স্থান নির্ধারণী ম্যাচে আয়ারল্যান্ডকে ১৭ রানে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। এরপর টানা চারটি আসরে ১৬ ম্যাচে মাঠ ছাড়তে হয়েছে হার নিয়ে।