অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছেন, তার সরকার এমন একটি দেশ গড়তে চায় যা নিয়ে গোটা দুনিয়ার সামনে গর্ব করা যায়। শনিবার (১২ অক্টোবর) বিকেলে দুর্গাপূর্জা উপলক্ষে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন শেষে মতবিনিময়কালে তিনি এই কথা বলেন।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আমরা এমন সমাজ চাই না যেখানে সেনাবাহিনী, পুলিশ দিয়ে উৎসব পালন করতে হবে। আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গড়তে চাই যেখানে সব সম্প্রদায়ের নাগরিক সমান অধিকার ভোগ করবে।
এবারের দুর্গাপূজা বিশেষ আনন্দে পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, চার দিনের ছুটি পেয়ে সবাই খুশি। সব জায়গায় নির্বিঘ্নে পূজা করতে পারছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। সবাই চেষ্টা করেছেন, কোনো দুর্ঘটনা যেন না ঘটে, বিশৃঙ্খলা যেন না হয়। এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আন্তরিকভাবে কাজ করছে। সবাই মিলে কাজ করলে যে সফল হওয়া যায় তা প্রমাণ হয়েছে।
আগের সরকারের সমালোচনা করে ড. ইউনূস বলেন, শুধু সংখ্যালঘু নয়, মুসলমানদের ছেলে-মেয়েরাও ঘর থেকে বের হলে বাসায় ফিরবে কি না সে নিরাপত্তা ছিল না। এমন সমাজ আমরা চাই না। আমরা একটি কাল্পনিক সমাজের কথা বলছি, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান প্রমাণ করেছে এমন সমাজ বিনির্মাণ সম্ভব।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা অধিকারবঞ্চিত মানুষ ছিলাম। সব অধিকার একটি গোষ্ঠীর কাছে ছিল। গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে এখন সময় এসেছে সবার অধিকার প্রতিষ্ঠিত করার। যে অধিকার কেড়ে নিতে চাইবে তাদের শাস্তি হবে। সবার অধিকার রক্ষায় সংস্কার কমিটিগুলো রূপরেখা দেবে। কিন্তু কমিশনের মাধ্যমে দেশ পাল্টে দেওয়া সম্ভব নয়, তবে একটি রূপরেখা তারা দিতে পারবেন। দেশটাকে পাল্টে ফেলার এই সুযোগ যেন হাতছাড়া না হয়।
এর আগে সকালে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, বিকেল ৩টায় প্রধান উপদেষ্টা ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে দুর্গাপূজা পরিদর্শন করতে যাবেন। তখন তিনি সেখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে বিনিময় সভায় অংশ নেবেন।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা উপলক্ষে বিকেল ৩টায় ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শনে যান প্রধান উপদেষ্টা। সেখানে পূজামণ্ডপ ও দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা পরিদর্শন করেন এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে বিনিময় সভায় অংশ নেন তিনি। প্রধান উপদেষ্টার আগমনকে কেন্দ্র করে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির এলাকায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা গ্রহণ করা হয়। এ লক্ষ্যে এসএসএফসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সেখানে কাজ করে। সাধারণ মানুষের প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়।
শনিবার সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার চতুর্থ দিনে মহানবমী উদযাপিত হচ্ছে। তাদের ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী, এদিন সকালে শুরু হয়েছে নবমী পূজা। রোববার বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে এবারের দুর্গোৎসবের সমাপ্তি হবে।