ডায়রিয়া হলো পেটের একটি সাধারণ সমস্যা, যা নানা কারণে হতে পারে। খাবারে অস্বাস্থ্যকর জীবাণু, পানি দূষণ, ভাইরাল বা ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ ইত্যাদি ডায়রিয়ার কারণ হিসেবে উল্লেখযোগ্য। ডায়রিয়া সাধারণত সামান্য থেকে মাঝারি মাত্রায় হয়ে থাকে, কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী বা তীব্র ডায়রিয়া শারীরিক দুর্বলতা, পানিশূন্যতা এবং জটিলতার কারণ হতে পারে। তাই ডায়রিয়া হলে দ্রুত সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া খুবই জরুরি। চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী ডায়রিয়া মোকাবিলায় করণীয় ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিচে তুলে ধরা হলো।
সাধারণ লক্ষণগুলো হলো: পেট ব্যথা বা ক্র্যাম্পিং, বমি বমি ভাব বা বমি, বারবার মলত্যাগের প্রয়োজনীয়তা, শরীরে পানির অভাব বা পানিশূন্যতা।
যা করবেন
ওআরএস (ওরাল রিহাইড্রেশন সলিউশন) খাওয়া
ডায়রিয়ার ফলে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি ও লবণ বেরিয়ে যায়, যা দ্রুত পূরণ করতে হয়। ওআরএস সলিউশন পানিশূন্যতা কমাতে সাহায্য করে। বাজারে সহজলভ্য ওআরএস প্যাকেট কেনার সুযোগ না থাকলে ঘরে বসে সহজেই তৈরি করতে পারেন। এক লিটার ফুটানো ও ঠান্ডা করা পানিতে ৬ চামচ চিনি ও আধা চামচ লবণ মিশিয়ে এই সলিউশন তৈরি করা যায়।
২. পর্যাপ্ত পানি পান করা
ডায়রিয়া হলে শরীরে পানিশূন্যতা এড়াতে প্রচুর পানি পান করতে হবে। প্রতিবার মলত্যাগের পর অন্তত এক গ্লাস পানি পান করতে হবে। বিশুদ্ধ বা ফুটানো পানি, স্যুপ, ডাবের পানি বা ফলের রস (চিনি ছাড়া) পান করতে পারেন।
৩. হালকা খাবার খাওয়া
ডায়রিয়া হলে হালকা ও সহজে হজম হয় এমন খাবার খাওয়া উচিত। বিশেষজ্ঞরা ডায়েট মেনে চলার পরামর্শ দেন:
কলা, ভাত, আপেলের পিউরি, সাদা রুটির টোস্ট-এই খাবারগুলো মল কঠিন করতে এবং পেটকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করে। তবে যেকোনো চর্বিযুক্ত, ভাজাপোড়া, মসলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
৪. প্রোবায়োটিকস গ্রহণ
ডায়রিয়া হলে অন্ত্রের স্বাভাবিক ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়। প্রোবায়োটিকসযুক্ত খাবার যেমন দই অন্ত্রের জন্য উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সরবরাহ বাড়ায়, যা ডায়রিয়া প্রতিরোধে সাহায্য করে।
৫. বিশ্রাম নেওয়া
ডায়রিয়া হলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে, তাই পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে। এছাড়াও মানসিক চাপ কমাতে হবে, কারণ স্ট্রেস বা উদ্বেগ ডায়রিয়া পরিস্থিতি আরও জটিল করতে পারে।
যা এড়িয়ে চলবেন
১. দুগ্ধজাত খাবার
ডায়রিয়ার সময় অনেকের দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার হজম করতে সমস্যা হয়। তাই এই সময় দুধ, পনির, ক্রীম ইত্যাদি এড়িয়ে চলতে হবে।
২. ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল
ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল ডায়রিয়ার লক্ষণ বাড়িয়ে দেয়, কারণ এরা শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি বের করে দেয়। তাই এ ধরনের পানীয় এড়িয়ে চলা উচিত।
৩. রাস্তার খাবার ও অস্বাস্থ্যকর পানি
ডায়রিয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হলো রাস্তার খাবার এবং দূষিত পানি। তাই ডায়রিয়া হলে বাইরে থেকে খাবার খাওয়ার পরিবর্তে ঘরে তৈরি পরিষ্কার ও স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
চিকিৎসকের পরামর্শ
ডায়রিয়া সাধারণত কয়েক দিনের মধ্যে সেরে যায়, তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি দীর্ঘস্থায়ী বা গুরুতর হয়ে উঠতে পারে। নিচের উপসর্গগুলোর যে কোনোটি দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন:
তিন দিনের বেশি সময় ধরে ডায়রিয়া স্থায়ী হওয়া, তীব্র পানিশূন্যতার লক্ষণ (মুখ শুষ্ক হয়ে যাওয়া, চোখ ফোলা, কম মূত্রত্যাগ), বমি বা রক্তযুক্ত মলত্যাগ, প্রচণ্ড পেটব্যথা এবং জ্বর (১০২°F বা এর বেশি)।