চাপের সামলে ঘুরে দাঁড়ানো এবং অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তনে জয় তুলে নেয়া যেন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে রিয়াল মাদ্রিদের। নিজেদের ঘরের মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে অসংখ্য প্রত্যাবর্তনের গল্প আছে স্প্যানিশ জায়ান্ট দলটির। মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) রাতে সেই তালিকায় আরও একটি সংখ্যা বাড়ল।
ঘরের মাঠে ফেভারিট হিসেবে মাঠে নেমে শুরুটা একদমই বাজে হয় রিয়ালের। প্রথমার্ধে তেমন জোরালো আক্রমণ করতে পারেনি ইউরোপের চ্যাম্পিয়ন দলটি। উল্টো নিজেদের ভুলে ৩৪ মিনিটের মধ্যে হজম করে দুই গোল। ম্যাচের ৬০ মিনিট পর্যন্ত এই দুই গোলের ব্যবধানে পিছিয়ে ছিল কার্লো আনচেলত্তির দল। এরপরই শুরু হয় তাদের অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তন।
ম্যাচের শেষ ৩০ মিনিট এবং অতিরিক্ত সময়ের মধ্যে বরুশিয়ার জালে গুনে গুনে পাঁচটি গোল করেছে রিয়াল। অসাধারণ দক্ষতা দেখিয়ে হ্যাটট্রিক করেছেন রিয়ালের ব্রাজিলিয়ান তারকা ভিনিসিউস জুনিয়র। তিনি ছাড়া বাকি দুটি গোল করেছেন লুকাস ভাসকেজ এবং অ্যান্টনিও রুডিগার। আর তাতে বরুশিয়াকে ৫-২ গোলের ব্যবধানে হারিয়ে প্রত্যাবর্তনের অবিশ্বাস্য গল্প লিখেছে রিয়াল।
ম্যাচের ষষ্ঠ মিনিটে প্রথমবার বল জালে জড়ানোর সুযোগ পায় বরুশিয়া। তবে সে সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি অতিথিরা। পরের কয়েক মিনিটে খানিকটা চাপ সৃষ্টি করে রিয়াল। তবে কয়েকবার গোলে শট নিয়েও লক্ষ্যভেদ করতে পারেননি ভিনিসিউস জুনিয়র-কিলিয়ান এমবাপ্পেরা।
সময় বাড়তে থাকলে খেলার গতি কমে। এই সময় নিজেদের ভুলে প্রথম গোল হজম করে রিয়াল। ম্যাচের ৩০ মিনিটে বক্সের বাইরে বল ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হন লুকাস ভাসকেজ। বলের দখল নিয়ে সতীর্থ ডোনিয়েল মালেনকে পাস দেন তিনি। জোরালো শটে জালের ঠিকানা খুঁজে নেন ডাচ ফরোয়ার্ড।
ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই ৩৪ মিনিটে আবারও গোল খেয়ে বসে রিয়াল। বক্সের মধ্যে এদুয়ার্দো মেন্ডিকে কাটিয়ে ডান দিক থেকে মালেন পাস বাড়ান বাঁ দিকে, সেখানে দুই ডিফেন্ডার ভাসকেজ ও এদের মিলিটাওয়ের মাঝ দিয়ে চোখের পলকে ছুটে গিয়ে গোলটি করেন ইংলিশ ফরোয়ার্ড জেমি গিটেন্স।
দুই গোল খাওয়ার পর আক্রমণের ধার বাড়ায় রিয়াল। তবে ভাগ্য সহায় দেয়নি প্রথমার্ধে। ৩৭ মিনিটে পরপর তাদের দুটি প্রচেষ্টা ক্রসবারে লাগে। ২ গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর ডর্টমুন্ডও আক্রমণের ধার কমায়নি। প্রথমার্ধের শেষদিকেও রিয়ালের রক্ষণে ভীতি ছড়িয়েছে দলটি। ২-০ গোলে শেষ হয় প্রথমার্ধের খেলা।
দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণের ধার আরও বাড়ায় রিয়াল। প্রথম ১৫ মিনিটেই তৈরি হয় অসংখ্য সুযোগ। তবে মিলছিল না জালের দেখা। ৬০ মিনিটে রিয়ালকে এগিয়ে দেন রুডিগার। কিলিয়ান এমবাপ্পের দারুণ ক্রসে লাফিয়ে হেডে গোল করেন জার্মান ডিফেন্ডার।
দুই মিনিটের ব্যবধানে আবারও স্কোরশিটে নাম তোলে রিয়াল। মদ্রিচের পাস বক্সের মুখে ঠিকমতো নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেননি এমবাপ্পে, সেই সুযোগে স্লাইডে শট নেন এক ডিফেন্ডার, কিন্তু বল চলে যায় ভিনিসিউসের পায়ে। অনায়াসে ফাঁকা জালে বল পাঠান ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড।
৮২ মিনিটে আবারও এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল ডর্টমুন্ড। তবে ফাঁকায় বল পেয়েও কোর্তোয়াকে ফাঁকি দিতে পারেননি মাক্সিমিলিয়ান। উল্টো পাল্টা আক্রমণ থেকে গোল করে রিয়ালকে এগিয়ে দেন লুকাস ভাসকেজ।
৮৬ মিনিটে দলের জয় প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেন ভিনিসিউস। নিজেদের বক্সের পাশ থেকে বল ধরে প্রথমে ধীরে, পরে ক্ষিপ্র গতিতে এগিয়ে বক্সের বাইরে থেকে জোরাল শট নেন তিনি। যোগ করা সময়ে নিজের হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন ভিনিসিউস। প্রতিপক্ষের একটু ভুলে বল ধরে বক্সে ঢুকে একজনকে কাটিয়ে গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন তিনি।
এই জয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের পয়েন্ট টেবলে নবম স্থানে উঠেছে রিয়াল।