কাতার ও মিশরের মধ্যস্থতায় গাজায় যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে সম্মত হয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। অবশ্য যুদ্ধবিরতির বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি ইসরায়েল। বিষয়টি খতিয়ে দেখছে তারা। এদিকে, যুদ্ধবিরতিতে হামাসের রাজি হওয়ার খবরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন গাজার বাসিন্দারা। আল-জাজিরা জানিয়েছে— মিশর ও কাতারের মধ্যস্থতায় হামাস তিনটি পর্যায়ে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। তিন পর্যায়ের প্রতিটি ৪২ দিন স্থায়ী হবে।
সোমবার (৬ মে) এক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানিয়েছে সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, চুক্তিতে রাজি হওয়ার ব্যাপারে বিবৃতি দিয়েছে হামাস। সেই বিবৃতিতে বলা হয়, হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান ইসমাইল হানিয়া কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আল থানিকে ফোন করে জানিয়েছেন, হামাস যুদ্ধবিরতির চুক্তির প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। মিসরের গোয়েন্দাবিষয়ক মন্ত্রী আব্বাস কামালকেও একই কথা জানিয়েছেন ইসমাইল হানিয়া।
ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতা করছে মূলত কাতার ও মিশর।
নেটজারিম করিডোর থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের মধ্য দিয়ে যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায়ে শুরু হবে। এই করিডরের মাধ্যমে ইসরায়েল উত্তর এবং দক্ষিণ গাজাকে বিভক্ত করেছে। দ্বিতীয় ধাপে সামরিক অভিযান স্থায়ীভাবে বন্ধ এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার অন্তর্ভুক্ত থাকবে। আর তৃতীয় ধাপে গাজা অবরোধের অবসান রয়েছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেছেন, ওয়াশিংটন যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিষয়ে হামাসের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আপাতত মন্তব্য করবে না। তারা পুরো বিষয়টি পর্যালোচনা করছেন।
মিলার বলেন, ‘নিশ্চিত করতে পারি, হামাস একটি বিবৃতি জারি করেছে। আমরা এখন সেই বিবৃতি পর্যালোচনা করছি এবং আমাদের আঞ্চলিক অংশীদারদের সঙ্গে এটি নিয়ে আলোচনা করছি।’
হামাস মার্কিন–অনুমোদিত প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে নাকি প্রস্তাবের ভিন্ন সংস্করণে রাজি হয়েছে তা বলতে অস্বীকৃতি জানান মিলার।
তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন, (সিআইএ) পরিচালক বার্নস এই অঞ্চলে সার্বক্ষণিক কাজ করছেন। আমরা আগামী কয়েক ঘণ্টায় আমাদের অংশীদারদের সঙ্গে এটি নিয়ে আলোচনা করব।’ তবে যুদ্ধবিরতিই মার্কিন প্রশাসনের অগ্রাধিকার বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।
ইসরায়েলের উগ্র ডানপন্থী জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেনগাভির হামাসের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, হামাস ‘গেম’ খেলছে। এর একটিই জবাব, ‘রাফাহ দখল।’
সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি বলেন, ‘সামরিক চাপ বাড়ানো এবং হামাসের সম্পূর্ণ পরাজয় নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত রাখা।’
বেনগাভির ইসরায়েলি সরকারের সেসব শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের মধ্যে একজন যিনি নেতানিয়াহুর মতোই ‘হামাসকে সম্পূর্ণভাবে পরাজিত না করা পর্যন্ত গাজায় লড়াই চালিয়ে যাওয়ার’ আহ্বান জানিয়ে আসছেন।
যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো না হলেও, হামাসের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, বল এখন ইসরায়েলের কোর্ট।
হামাসের ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে গাজার রাস্তায় ফিলিস্তিনিরা নেমে পড়েছেন। তারা উল্লাস করছেন। এখন এ ব্যাপারে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া জানার অপেক্ষা।
ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যম চ্যানেল ১২–এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের সংশ্লিষ্ট পর্যালোচনা টিম এরই মধ্যে যুদ্ধবিরতিতে হামাসের সম্মত হওয়ার বিষয়টি মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে জেনেছে। বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে। শিগগিরই এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হবে।
৭ অক্টোবর থেকে গাজায় হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। হামলায় এ পর্যন্ত প্রায় ৩৫ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। যার অধিকাংশই নারী ও শিশু। ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে ঢুকে প্রায় এক হাজার ২০০ জনকে হত্যা করে হামাস। জিম্মি করে দুই শতাধিক ব্যক্তিকে। এরপর গাজায় হামলা শুরু করে ইসরায়েল।
সূত্র: আল-জাজিরা