তেহরানে ইরানি বংশোদ্ভূত এক জার্মান নাগরিকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করায় জার্মানিতে ইরানের সবগুলো কনস্যুলেট বা বাণিজ্য দূতাবাস বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির সরকার। জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালিনা বেয়ারবক বৃহস্পতিবার এই ঘোষণা দিয়েছেন। জার্মানির তিন শহর ফ্রাঙ্কফুর্ট, মিউনিখ এবং হামবুর্গে অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেটগুলো। খবর রয়টার্সের।
বুধবার (৩০ অক্টোবর) ইরানি বংশোদ্ভূত জার্মান নাগরিক জামশিদ শারমাহাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে ইরান। তার বিরুদ্ধে দেশটিতে ক্ষমতাসীন ইসলামপন্থি শাসকগোষ্ঠীকে উৎখাতের ষড়যন্ত্র এবং সন্ত্রাসী হামলায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ছিল। তবে জামশিদ তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করেছেন।
তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আগে কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে তা রোহিত করার অনুরোধ করে জার্মানি। বৃহস্পতিবার টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আজ (বৃহস্পতিবার) থেকে জার্মানিতে ইরানের সবগুলো কনস্যুলেট বন্ধ করা হলো। আমরা বারবার, দ্ব্যর্থহীনভাবে এবং স্পষ্টভাবে তেহরানকে বলেছি, জামশিদ শারমাহদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হলে তার ফলাফল গুরুতর হবে, কিন্তু তেহরান তাতে কর্ণপাত করেনি। তাই বাধ্য হয়েই আমাদের এ পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ইরান ও জার্মানির দ্বৈত নাগরিক জামশিদ শারমাহদ ২০০৩ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছিলেন। ইরানে ক্ষমতাসীন ইসলামপন্থি শাসকদের উৎখাত করতে যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসিত ইরানিদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করার অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। এছাড়া ২০০৮ সালে ইরানের শিরাজ শহরের একটি মসজিদে বোমা হামলা হয়, সেই হামলায়ও তার সংশ্লিষ্টতা দেখিয়েছে ইরানের পুলিশ।
২০২০ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে তাকে অপহরণ করে ইরানের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। প্রায় চার বছর বিচার চলার পর গত ফেব্রুয়ারিতে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয় ইরানের নিম্ন আদালত। রায় বাতিলের জন্য তিনি উচ্চ আদালতে আপিল করেন, কিন্তু সেখানেও নিম্ন আদালতের রায়ই বহাল রাখা হয়। অবশেষে বুধবার তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে ইরান।
অবশ্য তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার কয়েক দিন আগে জার্মানির উদ্দেশে দেওয়া এক বার্তায় ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘশি বলেছিলেন, জামশিদ শারমাহদ একজন সন্ত্রাসী এবং তার নেতৃত্বে ঘটা একটি হামলায় ১৪ জন নিরপরাধ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আমরা মনে করি না যে জার্মানির পাসপোর্ট তার দায়মুক্তির জন্য যথেষ্ট। যে অপরাধ তিনি করেছেন, তার শাস্তি তাকে পেতে হবে।