শীত মৌসুমের শুরুতেই দেশজুড়ে ঠাণ্ডা, সর্দি, কাশি, ও জ্বরের প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে।বিশেষ করে শিশুরা, বৃদ্ধরা এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম এমন ব্যক্তিরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন।শীতের মৌসুমে হঠাৎ ঠাণ্ডা লাগা এবং শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যাগুলি আরও তীব্র হতে দেখা যায়।বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, আবহাওয়ার পরিবর্তন এবং ভাইরাসের তৎপরতা বৃদ্ধির কারণে এই ধরনের সমস্যা সাধারণত দেখা যায়।
কেন হয় ঠাণ্ডা-সর্দি-কাশি-জ্বর?
শীতকালে ঠাণ্ডা, সর্দি, কাশি, এবং জ্বর হওয়ার অন্যতম কারণ হলো বায়ুবাহিত ভাইরাস এবং সংক্রমণ। শীতের মৌসুমে আবহাওয়া শুষ্ক থাকায় ভাইরাসগুলি দ্রুত ছড়ায় এবং বাতাসে তাদের স্থায়িত্ব বেশি থাকে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. আরিফ হোসেন বলেন, "শীতে তাপমাত্রা হ্রাস পায়, ফলে শ্বাসনালী শুষ্ক হয়ে যায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে আসে, যা ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়ার জন্য শরীরে আক্রমণের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে। এছাড়া শীতকালে মানুষ সাধারণত কম ঘর-বাইরে থাকে এবং বন্ধ ঘরে বেশি সময় কাটায়, যা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়। মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও শীতকালে কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ে।
শীতকালীন সাধারণ রোগের লক্ষণ
১. নাক দিয়ে পানি পড়া এবং সর্দি জমা
২. শুষ্ক কাশি ও গলা ব্যথা
৩. হালকা থেকে মাঝারি জ্বর
৪. মাথা ব্যথা এবং শরীরে ব্যথা
৫. শিশু ও বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট
প্রতিকার ও প্রতিরোধের উপায়
ঠাণ্ডা, সর্দি, কাশি, ও জ্বর থেকে রক্ষা পেতে কিছু সহজ সতর্কতা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞরা জানান, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এ ধরনের রোগ এড়িয়ে চলা সম্ভব।
১. গরম পোশাক পরা: ঠাণ্ডা থেকে সুরক্ষিত থাকতে ঘরের বাইরে গেলে গরম পোশাক, কান এবং গলা ঢেকে রাখুন।
২. শরীর আর্দ্র রাখা: শীতকালে প্রচুর পানি পান করা উচিত এবং লেবু, মধু, আদা মিশ্রিত গরম পানীয় পান করা ভালো।
৩. পুষ্টিকর খাবার খাওয়া: শীতকালে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফলমূল যেমন কমলা, আমলকি খাওয়া উচিত। এছাড়া, দুধ, ডিম, এবং মাংস খাওয়া ভালো।
৪. নিয়মিত হাত ধোয়া: বাহিরে থেকে ঘরে ফিরে এবং খাবার আগে হাত ভালোভাবে সাবান দিয়ে ধুয়ে নেওয়া উচিত।
৫. ঘর পরিষ্কার রাখা: ঘর নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে এবং ঘরের জানালা খোলা রাখতে হবে যাতে তাজা বাতাস ঢুকতে পারে।
৬. বিশ্রাম নেওয়া: শরীর সুস্থ রাখতে পর্যাপ্ত বিশ্রাম খুবই জরুরি। ঘুম কম হলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
৭. মাস্ক পরিধান: ঠাণ্ডার সমস্যা থেকে নিজেকে এবং অন্যদের রক্ষা করতে মাস্ক পরা উচিত, বিশেষ করে জনবহুল স্থানে গেলে।
চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় ওষুধ
ঠাণ্ডা-সর্দি বা কাশি হলে সাধারণত গরম পানীয় এবং বিশ্রাম নিলে রোগ সেরে যায়। তবে অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এ প্রসঙ্গে ডা. জাবেদ আহমেদ বলেন, "ব্যথা বা জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল খাওয়া যেতে পারে, তবে নিজে থেকে এন্টিবায়োটিক ওষুধ খাওয়া উচিত নয়।
"কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন?
- পাঁচ দিনের বেশি সময় ধরে জ্বর থাকলে
- শ্বাসকষ্ট হলে
- গলা ব্যথা বা কাশির কারণে দৈনন্দিন কাজ ব্যাহত হলে
- সর্দি বা কাশির সাথে রক্ত দেখা গেলে
শীত মৌসুমে সুস্থ থাকতে প্রয়োজন সচেতনতা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা।