ঢাকা | বঙ্গাব্দ

ভারত বয়কটের হুমকি পিসিবির, আর্থিক ক্ষতি আইসিসির

এশিয়া কাপের পর আরো একটা ইভেন্ট হাতছাড়া হলে এবার কঠিন পথেই হাঁটতে পারে মেন ইন গ্রিন।
  • | ১৩ নভেম্বর, ২০২৪
ভারত বয়কটের হুমকি পিসিবির, আর্থিক ক্ষতি আইসিসির এবার আইসিসি হাঁটছে অন্য পথে।

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নিয়ে নাটক জমে উঠেছে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলতে ভারতীয় দল পাকিস্তানে যাবে না, আইসিসি মারফত নিজেদের এই সিদ্ধান্ত পিসিবিকে জানিয়েছে বিসিসিআই। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলগুলো সাম্প্রতিককালে পাকিস্তানে সফর করলেও নিরাপত্তা শঙ্কার কথা বলে বারবার দেশটিতে ক্রিকেট দলকে পাঠাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে ভারত সরকার। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দেশের এমন স্বেচ্ছাচারিতায় চটেছে পাকিস্তানের সরকারও। কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়ার হুমকি দিয়েছে তারা।


হাইব্রিড মডেলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি আয়োজন করতে রাজি না হলে আয়োজক স্বত্ব হারাবে পাকিস্তান- ভারতীয় গণমাধ্যমে এমন খবর প্রকাশিত হওয়ার পর পাকিস্তান আরও কঠোর হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। স্বত্ব হারালে ভারতের বিপক্ষে সব ধরনের ম্যাচ বয়কটের সিদ্ধান্ত নিতে পারে পিসিবি। আর তাহলে আর্থিকভাবে বড় ধাক্কা খাবে আইসিসি। ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথ না থাকলে সম্প্রচার আর পৃষ্ঠপোষকদের আগ্রহ হারাবে আইসিসি। ক্রিকেট সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা, সমাধান না হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য দেখা যাবে না ক্রিকেটের এই ট্রেডমার্ক লড়াই।


পাকিস্তানে যেতে আপত্তি ভারতের, আর সে আপত্তির কারণ জেনে আইসিসিকে চিঠি পাঠিয়েছে পিসিবি। এশিয়া কাপের পর আরো একটা ইভেন্ট হাতছাড়া হলে এবার কঠিন পথেই হাঁটতে পারে মেন ইন গ্রিন। আর তা করলে বড় ধাক্কা খাবে আইসিসি।


২০২৪-২৭ চক্রে কেবল মাত্র সম্প্রচার স্বত্ত্ব বাবদ আইসিসির রাজস্ব আয় ৩.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অন্যান্য খাত থেকে আসে আরো ১ বিলিয়ন। মূলত এসব ইভেন্টের মূল আকর্ষণ ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথ। কেবল ভারতের দর্শক চাহিদা হিসেবে আনলেই সে ধারণা স্পষ্ট হবে। ২০২৩ বিশ্বকাপে দুই প্রতিবেশীর লড়াই দেখতে কেবল ভারতীয় টিভিতেই দর্শক সংখ্যা ছাড়ায় ১৭৩ মিলিয়ন। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সে সংখ্যা ২২৫ মিলিয়নের বেশি।


২০২১ টি-২০ ওয়ার্ল্ড কাপের ম্যাচে ভারতে ভিউয়ার ছিলো ১৬৭ মিলিয়ন এবং এনগেজমেন্ট ছিলো প্রায় ১৬ বিলিয়ন মিনিট। অর্থাৎ, আর্থিক লাভের জন্য কেবল আইসিসির নয়, ভারতের কাছেও সমান গুরুত্বপূর্ণ পাকিস্তান। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি কাণ্ডে পাকিস্তান ভারত ম্যাচ বয়কট করলে বড় ধাক্কা খাবে দুই পক্ষই।


পাকিস্তান বাদে ব্রডকাস্টার আর স্পন্সর- দুই পক্ষ থেকেই আগ্রহ হারাবে আইসিসি। সম্ভাব্য আয় কমে যাবে। যার প্রভাব পড়বে সহযোগী দেশগুলোকে দেয়া অর্থের পরিমাণের ওপর। আর আইসিসি থেকে সবচেয়ে বেশি রেভিনিউ পাওয়া ভারত তো ভুগবেই।


এদিকে, গুঞ্জন আছে, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি বয়কট করলে নিষেধাজ্ঞায় পড়তে পারে পাকিস্তান। সাবেক ক্রিকেটার বাসিত আলীর মতে, মেন ইন গ্রিনদের নিষিদ্ধ করার সাহস নেই ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থার। তিনি বলেন, 'চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি অন্য দেশে সরিয়ে নেয়া হলে পাকিস্তানের এই টুর্নামেন্টেই অংশগ্রহণ করা উচিত হবে না। মানুষ বলছে, পাকিস্তান অংশ না নিলে নাকি আইসিসি নিষেধাজ্ঞা দিবে। সাহস থাকলে নিষিদ্ধ করার চেষ্টা করুক। সবার ঘুম নষ্ট হয়ে যাবে।'


আর সাবেক ইংলিশ ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার মাইকেল ভনের মতে, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি কাণ্ডের নিষ্পত্তি তো ঘটবেই না, বরং এই ঘটনার পরে লম্বা সময়ের জন্য ভারত-পাকিস্তান ম্যাচই দেখা যাবে না। সাবেক এই ইংলিশ অধিনায়ক বলেন, 'আমার মতে এই দুই দেশের সম্পর্কের আরো অবনতি হবে। সম্ভবত লম্বা সময়ের জন্য আমরা ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ থেকে বঞ্চিত হতে যাচ্ছি।'


কলম্বোর সেন্ট্রাল ব্যাংকে বোমা বিস্ফোরণ কাণ্ডে ১৯৯৬ বিশ্বকাপে নিরাপত্তা ইস্যুতে শ্রীলঙ্কা সফরে আপত্তি জানায় অস্ট্রেলিয়া ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পরে আইসিসির হস্তক্ষেপে দুই ম্যাচে ওয়াকওভার পায় লঙ্কানরা। পাশাপাশি জরিমানা করা হয় অজি আর ক্যারিবীয়দের। না খেলে পাওয়া পয়েন্ট নিয়ে সেমিতে ওঠার পর বিশ্বকাপও জেতে অর্জুনা রানাতুঙ্গার দল। তবে এবার আইসিসি হাঁটছে অন্য পথে। কারণটা সবারই জানা। ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভারত প্রীতি এবার বড় ধাক্কাই দিতে পারে সংস্থাটিকে।