ঢাকা | বঙ্গাব্দ

যুক্তরাজ্যে হাসিনা-ঘনিষ্ঠদের বিপুল সম্পত্তির খোঁজ

যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় শেখ হাসিনা–ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের নামে প্রায় ৩৫০টি সম্পত্তির অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।
  • | ০১ ডিসেম্বর, ২০২৪
যুক্তরাজ্যে হাসিনা-ঘনিষ্ঠদের বিপুল সম্পত্তির খোঁজ ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন।

বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ বলয়ে থাকা প্রভাবশালী রাজনীতিক, ব্যবসায়ী এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের যুক্তরাজ্যে বিপুল সম্পত্তি থাকার খবর পাওয়া গেছে। এসব সম্পত্তির মোট মূল্য প্রায় ৪০ কোটি পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা) বলে ধারণা করা হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, বাংলাদেশ থেকে পাচার করা অর্থের মাধ্যমে এই সম্পদ অর্জিত হয়েছে।


ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য অবজারভার এবং বার্লিনভিত্তিক দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের যৌথ অনুসন্ধানে এ তথ্য উঠে এসেছে। শনিবার (৩০ অক্টোবর) ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান এই অনুসন্ধান নিয়ে একটি বিশদ প্রতিবেদন প্রকাশ করে।


৩৫০টিরও বেশি সম্পত্তির সন্ধান


অনুসন্ধানে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় শেখ হাসিনা–ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের নামে প্রায় ৩৫০টি সম্পত্তির অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এসব সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট থেকে শুরু করে সুবিশাল অট্টালিকা। বেশির ভাগ সম্পত্তি অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে কেনা হয়েছে। বিশেষত, সাবেক শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের পরিবারের সদস্যদের মালিকানায় এসব সম্পত্তি থাকার তথ্য উঠে এসেছে। একই সঙ্গে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এবং নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার ও তাদের পরিবারের সম্পত্তিরও তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।


বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান। বর্তমানে অর্থপাচারের অভিযোগে বাংলাদেশে কারাবন্দি। তার ও পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব ইতোমধ্যেই জব্দ করেছে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। লন্ডনের মেফেয়ার এলাকার গ্রোসভেনর স্কয়ারে তাদের মালিকানায় সাতটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে। এর মধ্যে ২০২২ সালে সালমানের ছেলে আহমেদ শায়ান রহমান ২ কোটি ৬৭ লাখ পাউন্ডে একটি অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছেন। একই এলাকায় তার আরও একটি ফ্ল্যাট রয়েছে, যার মূল্য ৩ কোটি ৫৫ লাখ পাউন্ড।


সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার পরিবারের নামে যুক্তরাজ্যে ৩০০টিরও বেশি সম্পত্তি রয়েছে, যার আনুমানিক মূল্য ১৬ কোটি পাউন্ড। আল-জাজিরার এক প্রতিবেদন অনুসারে, তার বৈশ্বিক সম্পত্তির মূল্য প্রায় ৫০ কোটি মার্কিন ডলার। বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে তার ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে এবং দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার বিরুদ্ধে তদন্ত করছে।


বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাজ্যের সারে এলাকায় দুটি বিলাসবহুল সম্পত্তি কিনেছেন, যার মূল্য ১ কোটি ৩০ লাখ পাউন্ড। এ ছাড়া সারে এলাকায় আরও একটি বিশাল অট্টালিকার মালিকানার তথ্য পাওয়া গেছে, যা তার এক ছেলের নামে নিবন্ধিত।  এ বিষয়ে গার্ডিয়ান–এর সঙ্গে কথা বলেছেন বসুন্ধরা গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান ও আহমেদ আকবর সোবহানের ছেলে সাফওয়ান সোবহান। তিনি বলেন, তাদের বিরুদ্ধে তোলা সব অভিযোগ দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করছে তার পরিবার।


নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার ও তার পরিবারের সদস্যদের লন্ডনের কেনসিংটনে ৩ কোটি ৮০ লাখ পাউন্ডের পাঁচটি সম্পত্তি রয়েছে। এসব সম্পত্তি কীভাবে কেনা হয়েছে, তা নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো তদন্ত চালাচ্ছে।


এই অভিযোগগুলো নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আইনজীবীরা বলছেন, মানি-লন্ডারিং আইনসহ আর্থিক বিধিবিধানের পূর্ণাঙ্গ অনুসরণ করেই এসব সম্পত্তি কেনা হয়েছে।