ঢাকা | বঙ্গাব্দ

ছয় ব্যাংকের জন্যই ছাপানো হচ্ছে টাকা

অবশ্য টাকা ছাপানোর মানে কাগুজে নোট ছেপে ব্যাংকে দেওয়া হচ্ছে, তেমন নয়। চাইলেই নোট ছাপতে পারে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
  • | ০১ ডিসেম্বর, ২০২৪
ছয় ব্যাংকের জন্যই ছাপানো হচ্ছে টাকা বাংলাদেশ ব্যাংক।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর অর্থ উপদেষ্টা এবং গভর্নর-দুজনেই জানান নতুন করে আর ছাপানো হবে না টাকা। তবে সেই কথার বরখেলাপ হলো। দেশের দুর্বল ছয় ব্যাংককে সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা ছাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনে আরও টাকা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন গভর্নর। 


বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর সংবাদ সম্মেলন করে ছয় ব্যাংককে সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা দেওয়ার তথ্য জানান। তিনি বলেন, টাকা না ছাপানোর যে কথা তিনি বলেছেন, সেখান থেকে সাময়িক সময়ের জন্য সরে এসেছেন। তবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির যে ধারা ছিল, তা বজায় থাকবে। এক হাতে তারল্য সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোকে টাকা দেওয়া হবে, আরেক হাতে বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের বিপরীতে যাদের উদ্বৃত্ত তারল্য রয়েছে, তাদের কাছ থেকে তুলে নেওয়া হবে। ফলে মূল্যস্ফীতিতে তেমন প্রভাব পড়বে না।


দুর্বল কিছু ব্যাংক থেকে গ্রাহক ঠিকমতো আমানত তুলতে না পারায় পুরো ব্যাংক খাতের ওপর যেন আস্থাহীনতা তৈরি না হয়, সেজন্যই আগের অবস্থান বদলে টাকা ছাপানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্টরা। 


বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেনের মতে, স্বল্প মেয়াদে এর চেয়ে ভালো কোনো বিকল্প নেই। এই অর্থনীতিবিদ বলেছেন, বর্তমানে একটা উভয় সংকটের জায়গা তৈরি হয়েছে। একদিকে ঠিক করলে আরেক দিকে সংকট তৈরি হচ্ছে। মুখে মুখে যখন ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়বে চাহিদামতো টাকা তোলা যাচ্ছে না, তখন পদ্ধতিগত একটা ঝুঁকি তৈরি হবে। যে কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, প্রয়োজন মেটানো হবে। এতে করে বাজারে সাময়িকভাবে অর্থ সরবরাহ বাড়বে। তবে আবার সময়মতো টাকা তুলে নিতে হবে।


কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরাসরি টাকা ইস্যুর বিষয়টি ‘মানি প্রিন্টিং’ বা ‘টাকা ছাপানো’ হিসেবে বিবেচিত। অবশ্য টাকা ছাপানোর মানে কাগুজে নোট ছেপে ব্যাংকগুলোকে দেওয়া হচ্ছে, তেমন নয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসব ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে নির্ধারিত পরিমাণের টাকা স্থানান্তর করছে। চাইলেই কাগুজে নোট ছাপতে পারে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেননা, কোনো একটি বছরে কী পরিমাণ টাকা ছাপা হবে, বছরের শুরুতেই তা নির্ধারিত হয়।


সংশ্লিষ্টরা জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরাসরি টাকা দিলে মূল্যস্ফীতিতে তার প্রভাব পড়ে। তবে ব্যাপক মাত্রায় যেন প্রভাব না পড়ে, সেজন্য একই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের মাধ্যমে বাজার থেকে উদ্বৃত্ত টাকা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ট্রেজারি বিল ও বন্ডের পাশাপাশি দীর্ঘদিন পর বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের মাধ্যমে টাকা তোলা হচ্ছে। এরই মধ্যে ৩০ দিন মেয়াদি দু’দিনের নিলামে ৯৩১ কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। ১১ থেকে ১১ দশমিক ১০ শতাংশ সুদে এ টাকা তোলা হয়েছে। ৭, ১৪ ও ৩০ দিন মেয়াদি বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের পাশাপাশি ৯০ ও ১৮০ দিন মেয়াদি বিল বাজারে ছাড়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বিলে টাকা রাখতে ব্যাংকগুলো যেন উৎসাহিত হয়, সেজন্য আরও আকর্ষণীয় সুদ দেওয়ার বিষয়ে ভাবছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।


বিগত সরকারের সময়ে সাতটি ব্যাংকের চলতি হিসাব ঋণাত্মক রেখে লেনদেনের সুযোগ দিলেও এখন তা বন্ধ হয়েছে। এসব ব্যাংক চাহিদামতো সাধারণ আমানতকারীর অর্থ ফেরত দিতে পারছে না। ব্যাংকগুলোকে সহায়তার জন্য সরাসরি টাকা না দিয়ে আন্তঃব্যাংক ধারের মাধ্যমে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে ধার দেওয়ার উদ্যোগ নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে তাতে তেমন সাড়া দেয়নি ভালো ব্যাংকগুলো। আবার ভেঙে ভেঙে টাকা পাওয়ায় তেমন কাজ হচ্ছে না। যে কারণে আমানতকারীর আস্থায় তেমন প্রভাব পড়ছে না।


কেন্দ্রীয় ব্যাংক বারবার তাগিদ দেওয়ার পরও ব্যাংকগুলো দুর্বল ব্যাংকগুলোকে মাত্র ৭ হাজার ৫০ কোটি টাকার বিশেষ ধার দিয়েছে। গ্রাহকদের চাহিদার তুলনায় যা অপ্রতুল। এ অবস্থায় ব্যাংক খাতের প্রতি আস্থাহীনতা প্রকট হচ্ছে। এ কারণে আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।